শেষ আপডেট: 19th June 2023 10:28
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বৃষ্টি হচ্ছে পৃথিবীতে, বাজ পড়ছে বৃহস্পতিতে?
অবাক কাণ্ড!
বৃহস্পতিতে বৃষ্টি হচ্ছে না, কিন্তু কড়কড় করে বাজ পড়ছে। ঘন ঘন বিদ্যুতের ঝলকানি চোখ ধাঁধিয়ে দেবে। আর সে বিদ্যুতও বাহারি। ইলেকট্রিক কারেন্টে সবজে আলোর ঝলকানি। থেকে থেকেই ঝলসে উঠছে বৃহস্পতির উত্তর মেরুর আকাশ। আলোর ছটা ছড়িয়ে পড়ছে আকাশজুড়ে।
সৌরমণ্ডলের তিনিই গুরু গ্রহ। তার ধারে কাছে যাওয়ার স্পর্ধা কেউ দেখাতে পারেনি। তার দুই শাগরেদ উপগ্রহ (বৃহস্পতির‘চাঁদ)- ‘ইউরোপা’ আর ‘গ্যানিমিদ’-এর পাড়ায় উঁকিঝুঁকি বিস্তর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একেবারে বৃহস্পতির বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ার সাহস নাসা ছাড়া কেউ দেখাতে পারেনি। বৃহস্পতির ঠিক নাগের ডগায় বসে আছে নাসার মহাকাশযান ‘জুনো’ (Juno) । বৃহস্পতিতে কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা দেখলেই সে খবর পাঠায় পৃথিবীতে। জুনোর হাই রেজোলিউশন ক্যামেরায় ধরা দিয়েছে বৃহস্পতির বজ্রপাত।
বৃহস্পতির চারপাশে চক্কর কাটছে জুনো। ঠিক ৩১ তম বার পাক খাওয়ার সময় উত্তর মেরুতে তীব্র আলোর ঝলকানি দেখতে পায় সে। বৃহস্পতির কক্ষপথ থেকে ১৯ হাজার ৯০০ মাইল (৩২ হাজার কিলোমিটার) উপরে পাক খাচ্ছে এই মহাকাশযান। ওই অবস্থান থেকেই উত্তর মেরুতে ঘটতে থাকা সেই অভাবনীয় ঘটনা লক্ষ্য করে তা ক্যামেরাবন্দি (JunoCam) করে । বৃহস্পতিতে বজ্রপাতের ছবি ভাইরালও হয়েছে।
নাসার বিজ্ঞানী ইভানা কলমোসভা বলছেন, পৃথিবীতে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হলে তার মধ্যে থাকা জলের কণাগুলো আয়নিত হয়। তখন তাদের ঘর্ষণে বৈদ্যুতিক শক্তি তৈরি হয়। বৃহস্পতিতেও পদ্ধতি ঠিক তেমনি, তবে বৃহস্পতির মেঘে অ্যামোনিয়া-জলের মিশ্রণ থাকে। পৃথিবী ও বৃহস্পতিতে বজ্রপাতের পদ্ধতি অনেকটাই এক। পৃথিবীতেও ঠিক যেমনভাবে আকাশে মেঘ করে, বিদ্যুৎ চমকায়, বৃহস্পতিতেও ঠিক তেমনটাই হয়।
১৯৮৯ সালে বৃহস্পতিতে (Jupiter) মহাকাশযান গ্যালিলিও (Galileo Spacecraft) পাঠিয়েছিল নাসা। ২০০৩ সালে গ্যালিলিও ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে নাসা তার মহাকাশযান জুনোকে পাঠিয়েছে বৃহস্পতির খবর আনতে। তাছাড়া নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ গ্রহদের ওপর নজর রাখেই। মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলছেন, গত সাড়ে ৩০০ বছর ধরে তুমুল ঝড় বয়ে চলেছে বৃহস্পতির পিঠে সুবিশাল এলাকা জুড়ে। এমন প্রলয়ঙ্কর, এত দীর্ঘমেয়াদী ঝড় এখনও পর্যন্ত এই সৌরমণ্ডলের আর কোনও গ্রহে দেখা যায়নি। বৃহস্পতির গ্রেট রেড স্পটই হল যত ঝামেলার উৎস।
নাসা জানাচ্ছে, বৃহস্পতির মেরু থেকে ২২ ডিগ্রি দক্ষিণে এই এলাকা দেখতে দগদগে লাল ক্ষতের মতো, এরই নাম ‘গ্রেট রেড স্পট’ (জিআরএস) Great Red Spot। আয়তনে প্রায় ১০ হাজার বর্গ মাইল বা ১৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার। ওই এলাকা জুড়েই তুমুল ঝড় বয়ে চলেছে। জুনোর ‘জোভিয়ান ইনফ্রারেড অরোরাল ম্যাপার (JIRAM)’-এ ধরা পড়েছে একটি ষড়ভুজাকৃতি কেন্দ্রের (Hexagonal Center) চারপাশে পঞ্চভুজের মতো পাক খাচ্ছে একাধিক প্রলয় সাইক্লোন। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য টেক্সাসের আয়তন যতটা, এই প্রলয় সাইক্লোনগুলির এক একটার আয়তন ঠিক ততটাই। ঠিক এই কারণেই বৃহস্পতিতেও পৃথিবীর মতোই ঝড় হয়, একটানা বাজ পড়তে থাকে। বৃহস্পতির এমন খামখেয়ালি পরিমণ্ডলের জন্যই তার বলয়ে নানা রকম বদল দেখা যায়।