শেষ আপডেট: 26th June 2023 06:35
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী সৃষ্টি প্রফেসর শঙ্কুর কথা মনে আছে তো। উদ্ভট সব আবিষ্কারে বিশ্বজোড়া খ্যাতি ছিল ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর। তাঁর তৈরি ‘মিরাকিউরল’ ক্যাপসুল খেলে নাকি যে কোনও অসুখ সেরে যেত। ব্যোমযাত্রীদের খাদ্য-জলের সঙ্কট মেটাতে বিজ্ঞানী শঙ্কু বানিয়েছিলেন ‘বটিকা ইন্ডিকা’। একটি ট্যাবলেট খেলে ১০ দিনের জন্য নিশ্চিন্ত, খিদেই পাবে না। নাসাও (NASA) ইদানীং কালে যেসব আবিষ্কার করছে তাতে প্রফেসর শঙ্কুর প্রভাবই দেখা যাচ্ছে। মহাকাশে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে (ISS) জলের চাহিদা মেটাতে মহাকাশচারীদের প্রস্রাব ও গায়ের ঘাম থেকেই নাকি তৈরি হবে পানীয় জল। সেই জল এমনই পুষ্টিগুণের ও সুস্বাদু হবে যে ঢকঢক করে খেয়ে তৃপ্তি পাবেন নভশ্চররা।
অবাক লাগছে? নাকি গা ঘিনঘিন করছে?
এটাই সত্যি। পৃথিবীর কক্ষে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে অহরহ জলের সরবরাহ করা সম্ভব নয়। সবই পৃথিবী থেকে বয়ে নিয়ে যেতে হয় মহাকাশচারীদের। সেখানে মাধ্যাকর্ষণও নেই। কাজেই অসুবিধা সব দিকেই। মহাকাশচারীদের সারা দিনের খাবারের চাহিদা মেটাতে এখন তাই স্পেস স্টেশনের ভেতরেই ফসল ফলাচ্ছে নাসা। সে ঠিক আছে। কিন্তু জল?
সারাদিন কম করেও এক গ্যালন জল লাগে স্পেস স্টেশনে। মহাকাশচারীদের স্নান, খাওয়া, রান্নাবান্না, হাতমুখ ধোওয়া সবই আছে। তাছাড়া প্রয়োজনে জল বেশিও লাগতে পারে। এত জল কোথা থেকে আসবে! নাসার বিজ্ঞানীরা তাই ঠিক করেছেন, মহাকাশচারীদের প্রস্রাব থেকেই বানানো হবে পানীয় জল। মহাকাশে কোনও কিছুই ফেলার নয়। এমন শূন্য মাধ্যাকর্ষণে (জিরো গ্র্যাভিটি) পৃথিবীর মতো বিলাসিতা সেখানে চলবে না। তাই সবকিছুকেই রিসাইকেল করতে হবে। প্রস্রাব, গায়ের ঘামও বাদ যাবে না।
নাসার এনভায়রনমেন্ট কন্ট্রোল অ্যান্ড লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম (ECLSS) বিশেষ প্রক্রিয়ায় মহাকাশচারীদের প্রস্রাব ও গায়ের ঘাম বিশুদ্ধ করে তার থেকে জল H2O তৈরি করছে। এই ECLSS হল কম্পিউটার হার্ডওয়ার সিস্টেম যাতে নানারকম অ্যালগোরিদম ও টেকনোলজি আছে। ওয়াটার রিকভারি সিস্টেমও (Water Recovery System ) আছে যা বর্জ্য থেকে জল তৈরি করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি করা হয় ওয়াটার প্রসেস অ্যাসেম্বলি (Water Processor Assembly (WPA) দিয়ে। এমনকী মানুষের ত্বক থেকে বেরনো ঘাম, নাকের নিঃশ্বাসও বিশুদ্ধ করতে পারে এই সিস্টেম।
নাসা জানাচ্ছে, তাদের কাছে আছে আরও একটা সিস্টেম যার নাম ইউরিন প্রসেসর অ্যাসেম্বলি (Urine Processor Assembly (UPA)। এই সিস্টেম প্রস্রাবকে বিশুদ্ধ করে। এই সিস্টেমের ভ্যাকিউম ডিস্টিলেশন প্রস্রাবকে প্রায় ৯৮ শতাংশ বিশুদ্ধ করে পানীয় জল তৈরি করতে পারে। বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার ব্রাউন বলছেন, প্রস্রাব থেকে তৈরি জল এতটাই শুদ্ধ হবে যে তা মহাকাশচারীদের স্বাস্থ্যের জন্যও ভাল হবে।
আরও পড়ুন: বড় বড় লাল-সবুজ লঙ্কা ফলল মহাকাশে, রান্না করে খেয়ে নভশ্চররা বললেন ‘খাসা’
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে সব কিছুই প্রায় ওজন শূন্য দশায় থাকে। সেখানে নীচে টেনে নামানোর ‘শক্তি’ অভিকর্ষ বলটাই নেই। যাকে বলে, ‘মাইক্রোগ্র্যাভিটি’। ফলে, মহাকাশচারী সহ সব কিছুকেই ভেসে থাকতে হয় মহাকাশ স্টেশনে। এই মাইক্রোগ্র্যাভিটিকে চ্যালেঞ্জ করেই মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা একের পর এক নিত্য নতুন আবিষ্কার করে চলেছে।