বাংলায় তাঁর প্রতিটি জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি নিশানা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। তাঁর প্রায় প্রতিটি বক্তৃতাই শুরু হত ‘দিদি... ও দিদি’ দিয়ে।
আলিপুরদুয়ারের সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
শেষ আপডেট: 29 May 2025 09:45
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একুশের বিধানসভা ভোটের কথা মনে আছে! বাংলায় তাঁর প্রতিটি জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি নিশানা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। তাঁর প্রায় প্রতিটি বক্তৃতাই শুরু হত ‘দিদি... ও দিদি’ দিয়ে।
চার বছর পর বাংলায় ফের বিধানসভা ভোট আসন্ন। সময়ে নির্বাচন হলে ছাব্বিশ সালের এপ্রিল মাস নাগাদ শুরু হয়ে যাবে গণতন্ত্রের সেই উৎসব। তার আগে বৃহস্পতিবার বাংলায় রাজনৈতিক সভা করতে এসে প্রধামমন্ত্রী মোদী আর সেই পুরনো পথে হাঁটলেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা দিদির নাম একবারের জন্য মুখেও আনলেন না। তবে রাজ্যে তৃণমূল সরকারকে নির্মম আখ্যা দিয়ে বাংলায় ৫ সংকটের কথা ব্যাখ্যা করলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় এলে বিকশিত ভারতের মতো এ রাজ্যও বিকশিত হবে। সুশাসন ও সমৃদ্ধির গ্যারান্টি দেবে বিজেপি সরকার।
আলিপুরদুয়ারের ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী (Narendra Modi in Alipurduar) বলেন, “বর্তমান সময় বাংলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বহু রকমের সংকট এখন বাংলাকে ঘিরে রেখেছে। প্রথম সংকট হল—সমাজে হিংসা ও অরাজকতা। দ্বিতীয় সংকট হল—মা বোনেদের নিরাপত্তাহীনতা ও তাঁদের উপর অত্যাচার। তিন নম্বর উদ্বেগজনক। সেটি হল, নতুন প্রজন্মের মধ্যে হতাশা ও কর্মসংস্থার তথা জীবিকার অভাব। চতুর্থ সংকট—বেলাগাম দুর্নীতি। তার ফলে সরকারি ব্যবস্থার উপর থেকে মানুষের বিশ্বাসই উঠে যাচ্ছে। আর পঞ্চম সংকট হল—গরিবের অধিকার ছিনিয়ে নিতে তৃণমূলের স্বার্থপর রাজনীতি”।
মোদীর কথায়, “মুর্শিদাবাদ মালদায় যা হয়েছে তা এখানকার সরকারের নির্মমতার উদাহরণ। গরিব মা বোনের জীবনভরের পুঁজি পুড়িয়ে ছারকার করে দেওয়া হয়েছে। তুষ্টিকরণের নামে গুণ্ডাগিরিকে খোলা ছাড় দেওয়া হয়েছে। শাসক দলের বিধায়ক, কাউন্সিলর যদি লোকেদের বাড়ি পোড়ায় আর পুলিশ দাঁড়িয়ে তামাশা দেখে, তার যে ভয়াবহ আর কী হতে পারে? এ ভাবে সরকার চলবে?”
অনেকের ধারণা ছিল আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে বাংলাদেশের প্রতিও কিছুটা আক্রমণাত্মক হবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে বাংলায় দাঁড়িয়ে পূর্ব দিকের এই প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে এদিন নিশানা করেননি মোদী। বরং গত কয়েকদিন ধরে অপারেশন সিঁদুরের প্রশ্নে যেভাবে পাকিস্তানের উদ্দেশে কড়া কথা শোনাচ্ছেন, তাই অব্যহত রেখেছেন। তাঁর কথায়, এই বাংলা হল সিঁদুর খেলার মাটি। এখানে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর কথা তো বলতেই হবে।
তবে এদিনের সভায় পাক প্রসঙ্গের তুলনায় বাংলার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করতেই অধিক সময় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এখানে এই যে গরিব মানুষের উপর রোজ অত্যাচার হচ্ছে, তাতে বাংলার সরকারের কোনও তাপ উত্তাপ নেই। সব ব্যাপারে আদালতকে মাথা গলাতে হয়। আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়া কোনও কিছুতেই সুরাহা পাওয়াই যায় না”। এর পরই স্লোগান তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাই ‘বাংলার চিৎকার, লাগবে না নির্মম সরকার।’
এদিনের সভায় অনিবার্য ভাবেই শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির প্রসঙ্গও তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “দুর্নীতির সবথেকে খারাপ প্রভাব যুব সম্প্রদায়ের উপর পড়ে। দুর্নীতি কীরকম বিপর্যয় ডেকে আনে তা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডেই দেখেছি। তৃণমূল সরকার হাজার হাজার শিক্ষকের পরিবারকে বরবাদ করে দিয়েছে। তাঁদের ছেলেমেয়েকে অসহায় করে দিয়েছে, অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। এ শুধু কয়েক হাজার ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা নয়, গোটা বাংলায় শিক্ষা ব্যবস্থা ওরা তছনছ করে দিয়েছে। এ হল মহা পাপ!”
প্রধানমন্ত্রীর অতীতের সব রাজনৈতিক বক্তৃতার সঙ্গে এদিনের বক্তৃতায় তেজ ও শ্লেষ তুলনায় অনেকেরই কম ঠেকেছে। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, ভোটের এখন মেলা বাকি। তাই হয়তো আগে থেকেই সুর সপ্তমে না চড়িয়ে মেপে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ভোট যত এগোবে ততই তাঁর কথার ধার হয়তো বাড়তে বাড়তে যাবে।
বক্তৃতার শেষে দলের নেতা কর্মীদের উদ্দেশে মোদী বলেন, এবার দায়িত্ব অনেক। একমাত্র বিজেপিই যে সুশাসন ও সমৃদ্ধির গ্যারান্টি দিতে পারে এবং এই নির্মম সরকারের থেকে মুক্তি দিতে পারে তা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাতে হবে। তাই আরও জোরদার ভাবেই কাজে লাগতে হবে। সময় নষ্ট করার সময় আর নেই।