সপরিবারে হুমায়ুন রেজা
শেষ আপডেট: 8th April 2025 11:55
মামিনুল ইসলাম, মুর্শিদাবাদ
গত পাঁচদিন ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে পড়লেও চোখের পাতা এক করতে পারেননি দৌলতাবাদের স্কুল শিক্ষক হুমায়ুন রেজা ও তাঁর স্ত্রী আলিয়া খাতুন। বৃদ্ধ মা-বাবা, দুই সন্তান সবাই যে নির্ভর হুমায়ুনের বেতনের উপর। ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি গিয়েছে রাজ্য়ের ২৬ হাজার স্কুল শিক্ষকের। হুমায়ুনও তাঁদেরই একজন।
তিনি জানান, টিউশন করিয়ে, কঠোর পরিশ্রম করে বি.এড সম্পন্ন করেছেন। চাকরি পাওয়ার জন্য কোনও টাকা খরচ করেননি। শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে এই চাকরি পেয়েছিলেন। এখন হঠাৎ করে সেই চাকরি চলে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে বাঁচবেন, সেটাই তাঁর প্রশ্ন। তিনি বলেন, “আমার স্ত্রী, সন্তান, বিশেষভাবে সক্ষম মেয়ে, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দায়িত্ব আমার কাঁধে। আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য প্রতিমাসে হাজার হাজার টাকা খরচ হয়। চাকরি না থাকলে, সংসার চালাব কীভাবে?" তাঁর স্পষ্ট কথা,"নতুন করে যদি পরীক্ষা নেওয়া হয়, তাহলে আমি প্রস্তুতি নেব। কিন্তু ভলান্টিয়ার শিক্ষক হয়ে স্কুলে যেতে পারব না।”
২০১৪ সালে প্রাইমারি টেট এবং ২০১৫ সালে আপার প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন হুমায়ুন। সেইসঙ্গে ২০১৬ সালে নবম-দশম শ্রেণির এস.এল.এস.টি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পান। ছ'বছর শিক্ষকতার পর হঠাৎ করে চাকরি বাতিল ঘোষণা করা হয়। হুমায়ুনের স্ত্রী আলিয়া খাতুন বলেন, “আমার স্বামীর চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হোক, তা না হলে আমাদের সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। আমাদের সামনে অন্ধকার নেমে এসেছে। উনি শিক্ষকতা ছেড়ে অন্য কোনও কাজ করলে মানুষ ঠাট্টা-মশকরা করবে।”
একই অবস্থা দৌলতাবাদ নিশীথ বরণী সিনহা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক জসিমউদ্দিন সরকারের। পরিবার নিয়ে কীভাবে চলবে দিন উত্তর জানা নেই তাঁর। বললেন, “আমরা সবাই মেধার ভিত্তিতেই চাকরি পেয়েছিলাম। এখন হঠাৎ করে আমাদের বেকার করে দেওয়া হল। আমাদের ভবিষ্যৎ কি হবে? কারও কাছেই সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই।”
এই পরিস্থিতিতেই সোমবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটি জরুরি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আশ্বাস দেন, কোনও যোগ্য শিক্ষকের চাকরি যাবে না, কারও 'সার্ভিস ব্রেক' হবে না এবং এই বরখাস্তের সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের নয়, আদালতের রায়ের ফল। শিক্ষকদের আপাতত ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ চালিয়ে যাওয়ারও পরামর্শও দেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না শিক্ষকরা। বরং ভলান্টিয়ার শিক্ষক হতে বলায় ক্ষুব্ধ তাঁরা।