শেষ আপডেট: 29th October 2024 13:45
দ্য ওয়াল ব্যুরো, নদিয়া: প্রায় ১৩ ফুটের দেবীমূর্তি। ভক্তদের দেওয়া সোনার অলঙ্কারে ভূষিতা। ৪০০ বছর ধরে এই রূপেই পূজিতা হয়ে আসছেন শান্তিপুরের আগমেশ্বরী। কালীপুজোর সময়ে আগমেশ্বরীর দর্শনে উপচে পড়ে ভিড়। রীতি অনুযায়ী চক্ষুদানের মধ্যে দিয়ে দেবীর পুজো শুরু হয়।
শান্তিপুরের এই পুজো শুরু করেন সার্বভৌম আগমবাগীশ। তাঁর প্রপৌত্র পণ্ডিত কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ ছিলেন তন্ত্রসাধক। আগমশাস্ত্রের পাণ্ডিত্য লাভ করেই তাঁরা আগমবাগীশ উপাধি পান। সার্বভৌম আগমবাগীশের সময়ে শাক্ত ও বৈষ্ণবদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ চলছিল। শক্তি ও ভক্তির মেলবন্ধন ঘটেনি। তাই দ্বন্দ্ব দূর করতে শান্তিপুরের অদ্বৈতাচার্য্যের পৌত্র মথুরেশ গোস্বামী তাঁর মেয়ের সঙ্গে সার্বভৌম আগমবাগীশের বিয়ে দেন। কিন্তু এতে আরও জটিলতা তৈরি হয়। মথুরেশ গোস্বামীকে মেয়ে ও জামাইকে নিয়ে পাকাপাকিভাবে শান্তিপুরে চলে আসতে হয়।
সেখানেই মথুরেশ গোস্বামী তাঁর বসতবাড়ি থেকে কিছুটা দূরে জামাইকে একটি পঞ্চমুণ্ডির আসন স্থাপন করে দেন। ওই আসনেই তন্ত্রচর্চা করতেন সার্বভৌম আগমবাগীশ। এই পঞ্চমুণ্ডির আসনে তিনি সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন। সেই সময়েই তিনি দেবীর নির্দেশ পান। তাঁকে গঙ্গা থেকে মাটি এনে মূর্তি গড়ে পুজোর করার পরে বিসর্জনের নির্দেশ দেন দেবী। সেই নির্দেশ মতোই, কালীরমূর্তি পুজো শুরু করেন আগমবাগীশ। পুজো শেষে গঙ্গায় মূর্তিটি বিসর্জন দেন।
চিরাচরিত প্রথা মেনেই আজও পূজিতা হয়ে আসছেন দেবী আগমেশ্বরী। পঞ্চমুণ্ডির আসন সংলগ্ন স্থানীটিকে এখনও সকলে আগমেশ্বরীতলা নামেই চেনেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশকিছু নিয়মের পরিবর্তন হয়েছে। এখন আগমেশ্বরী মাতা পুজো সমিতি এই পুজোর দেখভাল করে। সঙ্গে শান্তিপুরের বড় গোস্বামী বাড়ির বংশধরদের অবদান রয়েছে।
এখানে বৈষ্ণব মতে দক্ষিণা কালীরূপে পূজিতা হন দেবী আগমেশ্বরী। বড় গোস্বামী বাড়ির বধূরা মায়ের ভোগ রান্না করেন। বিভিন্ন নিরামিষ পদ থাকে ভোগে। ভক্তদের বিতরণ করার জন্য কয়েক কুইন্টাল ভোগ রান্না করা হয়। কালীপুজোর দিন সকাল থেকেই শান্তিপুরের আগমেশ্বরী মাতার মন্দিরে ভিড় জমে। বিসর্জনের দিনে বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। মাতৃ মূর্তির উচ্চতা বেশি থাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় এলাকা।