নবান্ন অভিযানে আক্রান্ত সার্জেন্ট দেবাশিস চক্রবর্তী।
শেষ আপডেট: 30th August 2024 01:27
সুমন বটব্যাল
ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযানে পুলিশি 'অত্যাচারে'র অভিযোগে সরগরম রাজ্য। সরব বিরোধীরা। পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এমনকী ওই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের 'আচরণ'কে 'ব্রিটিশ শাসনে'র সঙ্গে তুলনা করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
এমন আবহে বদলে গেল কলকাতা পুলিশ থেকে রাজ্য পুলিশের একাধিক কর্তার ফেসবুক থেকে হোয়াটস অ্যাপ, সোশ্যাল মাধ্যমের প্রোফাইল পিকচার। সাধারণত, প্রোফাইল পিকচারে নিজেরই ছবি রাখেন সকলে। পুলিশ কর্তাদের ক্ষেত্রেও তাইই ছিল। মঙ্গলবার ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযানে পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে একাধিক পুলিশ কর্তার সোশ্যাল মাধ্যমের ডিপিতে দেখা যাচ্ছে, নবান্ন অভিযানে আক্রান্ত সার্জেন্ট দেবাশিস চক্রবর্তীর ছবি।
সেদিন বছর ৩৭ এর দেবাশিসের বাম চোখের মণিকে ফাটিয়ে দিয়েছিল উড়ে আসা আধলা ইটের টুকরো। সূত্রের খবর, চার ঘণ্টা ধরে চলা অস্ত্রোপচার ব্যর্থ হয়েছে। আদৌ বাম চোখে আর কোনওদিন তিনি দেখতে পাবেন কিনা, তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি চিকিৎসকরা। তাঁরা বলছেন, চোখের দৃষ্টিশক্তি ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম।
দেবাশিসের পরিবারে তো বটেই, মঙ্গলবার পুলিশের ওপর আক্রমণের এই ছবি ভয় ধরিয়েছে অন্য পুলিশ কর্মীদের পরিজনদেরও। ঘটনার দিন ভাইরাল এক ভিডিওয়, এক সার্জেন্টকে পিছু ধাওয়া করে গণপিটুনিও দিতে দেখা গিয়েছিল।
দেবাশিস একা নন, সেদিন নবান্ন অভিযান সামলাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন পুলিশের একাধিক কর্তা, কর্মী। বুধবার কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজেও তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। সেই সঙ্গে নিজেদের সোশ্যাল মাধ্যমের ডিপিও বদলে ফেলেছেন পুলিশের একাধিক কর্তা, কর্মী।
সেই তালিকায় রয়েছেন জয়েন্ট সিপি ট্রাফিক রূপেশ কুমার, আইপিএস মিরাজ খালিদ, সন্তোষ পাণ্ডে। সোশ্যাল মাধ্যমে প্রোফাইল প্রিকচার বদলেছেন কল্যাণ মুখোপাধ্যায়, বোধিস্বত্ত্ব প্রামাণিক-সহ একাধিক পুলিশ কর্তা।
কেন? টেলিফোনে দ্য ওয়ালকে জয়েন্ট সিপি ট্রাফিক রূপেশ কুমার বলেন, "শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ বলা হচ্ছে তো, মানুষ দেখুক কেমন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ!" একই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, "'আমাদের সহকর্মীরা কোনওরকম করুণা বা সহানুভূতি চান না কারুর কাছে। আমরা জানি, এ আমাদের কাজেরই অঙ্গ। সোশ্যাল মাধ্যমে ছবি বদলের উদ্দেশ্য, মানুষের বোধশক্তি জাগিয়ে তোলা, যাতে বিভ্রান্তিকর তথ্যের জালে জড়িয়ে না পড়েন, তা নিশ্চিত করা।''
এখানে উল্লেখ্য, জেলা থেকে কলকাতা, পুলিশের কর্তারা সাধারণত চান না সংবাদমাধ্যমে নিজেদের নাম প্রকাশ করতে। বরং, খবরের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি তাঁরা অনুরোধ করেন, নাম লিখবেন না। পেশাগত খাতিরে সাংবাদিকরাও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্তার নামের পরিবর্তে 'পুলিশ সূত্রে পাওয়া খবর' লিখে থাকেন।
এক্ষেত্রে অবশ্য নিজের নাম প্রকাশে কোনও আপত্তি করেননি ওই পুলিশ কর্তা। বরং বলেছেন, "হ্যাঁ, নাম লিখুন, মানুষও জানুক, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের নামে মঙ্গলবার আসলে কী হয়েছিল!"