দ্য ওয়াল ব্যুরো: এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি মুম্বইয়ের ধারাভিতে আর একজনও করোনা আক্রান্ত নেই। রোগ সারিয়ে ফেলেছেন সকলেই। নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েনি গত দুই-তিন সপ্তাহে। মৃত্যুও নেই। করোনা সংক্রমণে দেশের রাজ্যগুলির মধ্যে এখনও শীর্ষে মহারাষ্ট্র। মুম্বইতেও সংক্রমণ বেশি। এর মধ্যেই মুম্বইয়ের সবচেয়ে ঘিঞ্জি বস্তি ধারাভি প্রায় করোনা-শূন্য হয়ে গেছে।
১ এপ্রিল প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ধারাভিতে। তারপর থেকে হু হু করে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে গোটা বস্তিতেই। এখনও অবধি ৩ হাজার ৭৮৮ জনের করোনা ধরা পড়েছে, যার মধ্যে ৩ হাজার ৪৬৪ জন হাসপাতাল থেকে ছাড় পেয়েছেন। বাকিরাও সেরে ওঠার পথে।
দশ লক্ষ মানুষের ঘেঁষাঘেঁষি, ঘিঞ্জি বস্তিই এখন মডেল। অথচ মুম্বইয়ের এই ধারাভি বস্তিই একসময় করোনার হটস্পট হয়ে উঠেছিল। ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছিল মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে। মুম্বইতে সংক্রমণ বাড়লেও ধারাভির করোনা কার্ভ কমতির দিকেই। বৃহন্মুম্বই পুরসভা জানিয়েছে ধারাভিতে আর নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েনি। সুস্থতার হার অনেক বেড়েছে।
আড়াই লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ধারাভি বস্তি করোনার হটস্পট হয়ে ওঠে মার্চেই। বস্তির বছর ছাপান্নর এক প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়েছিল ভাইরাসের সংক্রমণ। সেই প্রথম। তিনি ছিলেন সাফাইকর্মী। এরপরে ওই বস্তি এলাকারই এক ডাক্তারের শরীরে ধরা পড়ে করোনা। ধীরে ধীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। অজস্র সরু গলি, ঘেঁষাঘেঁষি খুপরি ঘরগুলিতে গাদাগাদি করে মানুষের বাস, কমন টয়লেট, সব মিলিয়ে সংক্রমণ ঠেকানো অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। মুম্বই স্বাস্থ্য দফতর জানায় ওই বস্তি এলাকাতে রয়েছেন অনেক টিবি রোগী, প্রবীণ ব্যক্তি যাদের ক্রনিক রোগ রয়েছে। তাছাড়া ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার প্রকোপও বেশি বস্তিতে। কাজেই করোনার মতো ছোঁয়াচে সংক্রমণ আটকানো দুরূপ ব্যাপার হয়ে ওঠে।
এরপরেই হাল ধরে বৃহন্মুম্বই পুরনিগম। ঘরে ঘরে স্ক্রিনিং শুরু হয়। বিএমসি জানিয়েছে, ধারাভির এই করোনা জয়ের মূলে আছে চার ‘টি’এর ফর্মুলা। ট্র্যাকিং (Tracking) অর্থাৎ করোনা রোগীদের চিহ্নিত করা, ট্রেসিং (Tracing) অর্থাৎ করোনা রোগীদের সংস্পর্শে আসাদের শনাক্ত করা তথা কনট্যাক্ট ট্রেসিং, কোভিড টেস্টিং (Testing) এবং ট্রিটমেন্ট (Treatment) অর্থাৎ চিকিৎসা। দ্রুত কোভিড টেস্টিং এবং কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমেই করোনা পজিটিভ রোগী ও তাদের সংস্পর্শে আসা সংক্রমণের সন্দেহে থাকা রোগীদের আলাদা করে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। দ্রুত চিকিৎসায় সুস্থতার হারও বেড়েছে। গত কয়েকমাসে বস্তির অন্তত ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। ১৪ হাজারের বেশি কোভিড টেস্টিং হয়েছে দিনের হিসেবে। বস্তিতে কমিউনিটি কিচেনও চালু করা হয়েছে। প্রতিটি ঘর স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থা হয়েছে।