শেষ আপডেট: 30th August 2023 09:52
এভাবেও ফিরে আসা যায়?
ডাক্তারবাবু বলে দিয়েছিলেন, আপনি ফুটবল খেললে নিজের ঝুঁকিতে খেলবেন। কিন্তু আনোয়ার আলি (Anwar Ali) নাছোড়। ছেলের আবেগ বুঝে পরিবারও ছিল পাশে। আনোয়ার ঠিক করে নিয়েছিলেন, যা হয় হবে, মরতে যদি হয়ই তা হলে মরবেন সবুজ গালিচা পাতা মাঠে। ফুটবল (Mohun Bagan) ছাড়বেন না। ফুটবল ছেড়ে দেওয়া মানে তো বেঁচে থেকেও মরে যাওয়া!
সেই সিদ্ধান্তে অবিচল থেকে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন আনোয়ার। যেদিন জিতে গেলেন, অর্ধেক যুদ্ধ যেন সেদিনই উতরে গিয়েছিলেন দেশের সেরা সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার।
ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, 'আপনি এক বিরল রোগে আক্রান্ত। আপনাকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে হবে।' আনোয়ার সেই পথ পেরিয়ে আবারও মাঠে ফিরেছেন। এমনকী দেশের সেরা ডিফেন্ডার নির্বাচিত হয়েছেন।
আনোয়ার (Anwar Ali) বলেই যাচ্ছিলেন, 'নিজের জীবন বাজি রেখে বন্ড পেপারে সই করে আবার ফুটবলে ফিরেছি। সেই জায়গা থেকে ফিরে আসাটা খুব কঠিন ছিল। পরিবার আমার পাশে ছিল। বাবা তো দিনের পর দিন দিল্লিতে পড়ে থেকেছেন হোটেলে। আমি একটা সময়ে খেলাই ছেড়ে দেব ভেবেছিলাম। প্রতিনিয়ত লড়াই করা আমাদের পরিবারের পক্ষে সহজ কাজ ছিল না। সেই পরিস্থিতিতে ডাক্তারের ফিট সার্টিফিকেট আমাকে মানসিকভাবে শক্তি দিয়েছিল।'
আনোয়ারের রোগটা এমন ধরনের ছিল, যেখানে মাঠে হৃদযন্ত্র স্তব্ধ হয়ে যেতে পারত। শুধু তাই নয় ওই রোগের একটা বড় প্রতিক্রিয়া হল, মাথা ঝিমঝিম করা, শরীর অবশ হয়ে যাওয়া। পাশাপাশি সারাক্ষণ একটা ঝিমুনি ভাব। ক্লান্তি ও অবসন্নতা এইগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠত। আনোয়ারকে ডাক্তার বলেই দিয়েছিলেন, মাঠে নেমে কোনও সংঘর্ষ হলে আপনার জীবনসংশয় হতে পারে। এরকম অবস্থার মধ্যে পড়েও আনোয়ার ফিরে এসেছেন।
শুধু তাই নয়, তিনি সবুজ মেরুন দুর্গের এখন সেনাপতিও। যাঁকে ১০ কোটি টাকার বিনিময়ে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এবার সই করিয়েছে। তাঁকে নেওয়া হয়েছে প্রীতম কোটালের স্থানে। হুগলির এই ছেলেটি এখন ভারতীয় দলেরও নামী তারকা।
আরও চমকপ্রদ হল, একটা সময়ে ভারতে আর্জেন্টিনা যুব দলকে নিয়ে আসা লিওনেল মেসিদের কোচ লিওনেল স্কালোনি প্রশংসা করেছিলেন এই আনোয়ারের। কারণ আর্জেন্টিনা যুব দলের বিরুদ্ধে ভারতীয় দলের হয়ে ফ্রিকিক থেকে একটি গোল করেছিলেন আনোয়ার। সেটি আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ী কোচ স্কালোনির বিশেষ প্রশংসা আদায় করে নেয়। সেই তরুণ ডিফেন্ডারের জীবনে যে বড় ঝড় আসতে চলেছে, সেটি তখনও বোঝা যায়নি।
ডার্বিতে মোহনবাগান হারলেও আনোয়ারের খেলা মুগ্ধ করেছে দলের কোচ ও বিশ্বকাপার জেসন কামিন্সকে। তিনি ২৫ বছরের ডিফেন্ডারকে বাগানের সার্জিও রামোস বলে ডাকছেন। হয়তো পুরো মোহন শিবিরের কাছেই তিনি নির্ভরতার রামোস হয়ে উঠেছেন। তাঁরা বলছেন, বেঁচে থাক এই আবেগ, বেঁচে থাক ফুটবল। এভাবেই তো ফুটবলে সব কিংবদন্তি তৈরি হয়েছে। এমন জেদই তো মন কেড়ে নিয়েছে সহস্র কোটি মানুষের। আনোয়াররাই নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকুক।