শেষ আপডেট: 7th August 2024 11:42
বাংলাদেশের চলতি অস্থিরতায় আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মী-সাংসদদের পাশাপাশি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপরও অত্যাচার চলছে। বহু জায়গায় হিন্দু দেবতার মূর্তি, মন্দির, মন্দির ভেঙে ফেলেছে দুষ্কৃতীরা। আক্রান্ত হয়েছে গির্জা।
বাংলাদেশে এই পরিস্থিতি তৈরির আগেই পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, এক কোটির মতো সংখ্যালঘু এ দেশে চলে আসতে পারেন। তৈরি থাকুন। সেই সঙ্গে তিনি ভারত সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, আক্রান্ত সংখ্যালঘুদের সিএএ-তে ভারতে নাগরিকত্ব দেওয়া হোক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শুভেন্দু। সংসদে বিবৃতি দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
যদিও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সবচেয়ে বড় মঞ্চ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রধান রানা দাশগুপ্তর এই প্রস্তাবে সায় নেই। তাঁর কথায়, নাগরিকত্ব বা শরণার্থী যে মর্যাদাই দেওয়া হোক না কেন, ভারত সেটা করলে বাংলাদেশ অচিরেই সংখ্যালঘু শূন্য হয়ে যাবে। সেই বাংলাদেশ হয়ে যাবে আরও একটা আফগগানিস্তান বা ইরান। আমরা সেটা চাই না। এটা আমাদেরও দেশ। ববং সংখ্যালঘুরা কীভাবে বাংলাদেশেই নির্ভয়ে বসবাস করতে পারে সেই চেষ্টা করা দরকার।
৭৪ বছর বয়সি রানা দাশগুপ্ত বুধবার সকালে তাঁর চট্টগ্রামের বাড়ি থেকে টেলিফোনে ‘দ্য ওয়াল’-কে এই বক্তব্য জানান। তিনি বলেন, দেশের প্রায় চল্লিশটি জেলায় গত রবিবার থেকে দফায় দফায় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হয়েছে।
তাঁর বক্তব্য, নানা অবকাশেই এ দেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এবারও ঘটেছে। তুলনায় এবার অনেক বেশি। এই সব হামলার উদ্দেশ্য সংখ্যালঘুদের ধারাবাহিকভাবে ভয় দেখানো যাতে তাঁরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়।
মুক্তিযোদ্ধা রানা দাশগুপ্ত বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নামজাদা আইনজীবী। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লিগ নেতৃত্বের সঙ্গে ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক সখ্য একটা সময় গভীর ছিল। কিন্তু হাসিনার সময়েও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চালিয়েছে বলে তিনি বারে বারে অভিযোগ করেছেন। সুবিচারের দাবিতে অনশন আন্দোলন করেছেন। এক পর্যায়ে হাসিনার মুখের উপর তর্ক করে বিরাগভাজন হয়েছেন।
এবারকার হামলাকারীদের রাজনৈতিক চরিত্রের প্রসঙ্গ এড়িয়ে তিনি বলেন, আপাতত তাদের দুষ্কৃতী বলছি। তাঁর কথায়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লিগ আর সংখ্যালঘুদের এক করে দেখা হয়। অথচ এমন নয়, যে আক্রান্ত সংখ্যালঘুরা আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মী-সমর্থক।
তিনি জানান, একটি ভাল দিক হল, মঙ্গলবার থেকে বিএনপি ও জামাতের নেতা-কর্মীরা সংখ্যালঘু এলাকায় গিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর জামাত-ই-ইসলামের নেতৃত্বও ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলন করে কর্মী-সমর্থকদের একই আর্জি জানিয়েছেন। সংখ্যালঘুদের পাশে থাকার আর্জি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীরও।
ভারতে আশ্রয় নেওয়ার প্রস্তাব নেওয়ার প্রসঙ্গে রানা দাশগুপ্ত বলেন, কেউ বাংলাদেশে নিরাপদ মনে না করলে দেশ ছাড়ার কথা ভাবতেই পারেন। অতীতে অনেকে চলেও গিয়েছেন। ভারত সরকার তাদের নাগরিকত্ব দিয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু এটাই যদি সমাধান হয়, তাহলে বাংলাদেশ অচিরেই আফগানিস্তান এবং ইরান হয়ে যাবে। সেটা কি প্রতিবেশী দেশ হিসাবে ভারতের জন্যও মঙ্গলদায়ক হবে?
তাঁর কথায়, ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু খুন হওয়ার পর আমরা বাংলাদেশকে ফের পাকিস্তান হয়ে যেতে দেখেছি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ। এই সময় বাংলাদেশ সংখ্যালঘু শূন্য হয়ে যাওয়া মানে এ দেশের বিপদ আরও বাড়িয়ে তোলা।
রানা দাশগুপ্ত জানান, এবারের হামলায় এখনও পর্যন্ত মারা যাওয়ার খবর নেই। বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে অধিকাংশ জায়গায় সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়, দোকান, বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুঠতরাজ করা হয়েছে।
হামলা রুখতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় দীর্ঘদিন কাজ করা এই প্রবীণ বলেন, পরিস্থিতি এমন যে ওরা নিজেদের বাঁচাতে ব্যস্ত। তিনি জানান, সামরিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁদের পরোক্ষে কথা হয়েছে। তারা নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন।