শেষ আপডেট: 6th September 2023 17:32
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি তথা দলের সংসদীয় পার্টিতে নেত্রী সনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi)। চিঠিতে (letter) সংসদের আসন্ন বিশেষ অধিবেশনে চিনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ, মণিপুর পরিস্থিতি, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি, সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ইত্যাদি নয়টি বিষয় নিয়ে আলোচনা দাবি করেন।
বুধবার সন্ধ্যায় সংসদীয় মন্ত্রী (minister) প্রহ্লাদ যোশী কংগ্রেস নেত্রীর চিঠির জবাব দিয়েছেন। চিঠিতে মন্ত্রী কংগ্রেস নেত্রীকে সংসদীয় রীতি মনে করিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, আপনি বোধহয়, রীতি ভুলে গিয়েছেন। বিষয় নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা হয় অধিবেশন শুরু হওয়ার পর। তার আগে নয়।
সদ্য সংসদের বাদল অধিবেশন শেষ হয়েছে। তার পর মাস খানেক যেতে না যেতেই সেপ্টেম্বরের ১৮ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ওই অধিবেশনে অ্যাজেন্ডা কী তা স্পষ্ট নয়। কখনও হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এক দেশ এক ভোট নিয়ে সংবিধান সংশোধন প্রস্তাব আনা হবে। কখনও সন্দেহ তৈরি হচ্ছে, দেশের ইন্ডিয়া নাম পরিত্যাগ করে শুধু ভারতই রাখা হবে।
পরিস্থিতি যখন এমনই তখন বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লেখেন সনিয়া গান্ধী। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, বিশেষ অধিবেশনে কী আলোচনা হবে তা আপনি জানাননি। তাই বলছি সংসদের অধিবেশন যখন ডাকাই হচ্ছে, তখন এই নয়টি বিষয় নিয়েও আলোচনা হোক। সনিয়ার প্রস্তাবিত ওই নয়টি বিষয়ের মধ্যে চিন, মূল্যবদ্ধি পরিস্থিতি, দাঙ্গা ইত্যাদি ছাড়াও কর্মসংস্থানের অভাব, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সংকটের মতো বিষয়ও রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে সনিয়া চিঠি দেওয়ার আগে মঙ্গলবার রাতে বিরোধী জোটের নেতারা বৈঠকে বসেছিলেন। তাঁদের মতে, সরকার মূল্যবদ্ধি, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক অব্যবস্থার মতো বিষয় থেকে মুখ ঘোরাতে নানা রকম খেলা করছে। সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার উদ্দেশ্যও তাই। কেন্দ্রে মোদী সরকারের নয় বছর হয়ে গেছে। এবার তাদের উত্তর দেওয়ার পালা। সেই পরিস্থিতিকেই পালাতে চাইছে সরকার।
বুধবার সকালে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, 'সংসদের বিশেষ অধিবেশন কেন ডাকা হয়েছে কেউ জানে না। আমরা তো মোদী চালিশা শুনতে যাব না। দেশের মানুষের অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তার জবাব সরকারকে দিতে হবে।'
সনিয়া গান্ধী যে বিষয়গুলির কথা জানিয়েছেন, তার পাশাপাশি সংসদের আসন্ন অধিবেশনে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়েও আলোচনা চান বিরোধীরা। সম্প্রতি দুই ব্রিটিশ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে যে ভারত থেকে টাকা বেআইনি ভাবে বিদেশে পাচার করে সেই টাকা ঘুরিয়ে আদানির সংস্থায় বিনিয়োগ হিসাবে দেখানো হয়েছে। আর তার মাধ্যমে স্টক মার্কেটকে প্রভাবিত করে আদানির শেয়ার দর বাড়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত দাবি করে সংসদে সরব হতে চায় কংগ্রেস ও বিরোধীরা।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, বিরোধীরা সরকারের খেলা ধরতে পেরে গেছেন। তাঁরা মনে করছেন, সংসদের বিশেষ অধিবেশনে মোদীর ঢাক পেটানো ছাড়া কিছু হবে না। তা ছাড়া সরকার প্রকৃত বিষয় থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে এই সব কাজকর্ম করছে। তাই সংসদের মধ্যেই চেপে ধরা হোক সরকারকে। বিজেপির অস্ত্র ব্যুমেরাং করে তাঁদের দিকেই ফিরিয়ে দেওয়া হোক। সনিয়ার চিঠিতেই বিরোধীদের সেই কৌশল স্পষ্ট। আর তা বুঝতে পেরেই সংসদীয় মন্ত্রী ইস্যুগুলি নিয়ে আলোচনার দাবি এড়িয়ে শুধুই রীতির কথা উল্লেখ করেছেন, মনে করছে বিরোধী শিবির।
মোদীকে সনিয়ার চিঠি, অধিবেশন যখন ডাকছেনই তখন এই ৯টি বিষয়েও আলোচনা হোক