শেষ আপডেট: 18th December 2023 20:33
সুভাষ চন্দ্র দাশ, ক্যানিং
জাঁকিয়ে শীত পড়তেই সুন্দরবনে ভিড় করছে বিদেশি অতিথিরা। তাদের সাড়াশব্দে এখন নিস্তব্ধতা ভাঙছে ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের। রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, ইরান থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি কয়েক হাজার মাইল পেরিয়ে এখানে এসেছে।
পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে এই সমস্ত পাখিদের খাওয়ার উপযুক্ত কোনও ফলের গাছ নেই। তবুও বিশেষ আকর্ষণে হাজার হাজার মাইল পেরিয়ে উড়ে উড়ে এখানেই চলে আসে তারা। এই আসার-যাওয়ার পথে দুর্যোগের মধ্যে পড়ে অনেক পাখি মারাও যায়। তবুও প্রতি বছর সঠিক সময়ে নির্দিষ্ট জায়গায় চলে আসে।
বন বিভাগের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার মিলনকান্তি মণ্ডল বলেন, ''আমরা কয়েক বছর ধরে ম্যানগ্রোভ রোপণ করে কৃত্রিম বন সৃষ্টি করেছি। সেইসব জায়গায় তাঁদের জন্য প্রচুর খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সেই খাবারের টানেই পরিযায়ী পাখিরা ভিড় জমাচ্ছে সুন্দরবনে।''
বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪০ টি প্রজাতির পরিযায়ী পাখি শীতের মরশুমে সুন্দরবনে আসে। শীতপ্রধান দেশেগুলির তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নেমে যায়। তাই সে আবহাওয়া সহ্য করতে না পেরেই তারা কম শীতপ্রবণ দেশে চলে আসে। কিছুদিন সেখানে সময় কাটানোর পরে আবার নিজেদের দেশে চলে যায়।
‘প্রকৃতি সংসদ’ নামে কলকাতার একটি পক্ষী পর্যবেক্ষক সংস্থা গত বছর সুন্দরবনে সমীক্ষা চালিয়ে ছিল। সেই সমীক্ষায় দেখা যায়, সাইবেরিয়া থেকে এসেছিল কারলিউ (বড় গুলিন্দা), ফিনল্যান্ড থেকে হুইমব্রেল (ছোট গুলিন্দা), চিন, তুর্কিস্তান থেকে স্নাইপ (কাদাখোচা), তিব্বত থেকে প্লোভার (মিঠুয়া) পাখিরা এসেছিল। শুধু তাই নয়, চখাচখি (রুড্ডি শেলডাক), ছোটদিঘর (গাডওয়াল), বামুনিয়া (টাফটেড ডাক) বিলিতি জিরিয়া (কেন্টিস) পাখিদেরও দেখা মিলেছিল গতবার।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার জম্বুদীপ, কলস, ঠাকুরাণ, মেছুয়া, ছাইমারি চরে হাজার হাজার বিদেশি পরিযায়ী পাখি আস্তানা গেড়েছে। ভগবতপুর, বকখালি, গঙ্গাসাগরের রামকর চর এবং মাতলা চরে ভিনরাজ্যের পরিযায়ী পাখিদের ভিড় দেখা গিয়েছে। বিকেলের দিকে চরে গেলে শোনা যায় তাদের কিচিরমিচির।
গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে লোথিয়াদ্বীপ চরে পক্ষীপ্রেমী ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার মিলনকান্তি মণ্ডলের ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল ধূসর-পা বাটান (নর্ডম্যানের গ্রিনশ্যাঙ্ক) পাখির ছবি। মিলন বাবু জানিয়েছেন, এই পাখিগুলি দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, কম্বোডিয়া, মালেশিয়া দেশের পাখি। এই পাখি সুন্দরবনে সর্বপ্রথম এবং ভারতে দ্বিতীয়বার দেখা মিলেছিল।
শুধু শীতই নয়, গ্রীষ্মেও আফ্রিকা থেকে হলুদ খঞ্জন (ইয়লো ওয়াগটেল), ইউরোপ থেকে নীলগলা ফিদ্দা (ব্লুথ্রোটেড), উত্তর আমেরিকা থেকে খুন্তেহাঁস (নর্দান স্লোভেলার)-রা আসে।
এসব পরিযায়ী পাখিদের দেখার সুযোগ করে দিতে ১৭ জানুয়ারি থেকে সুন্দরবনে শুরু হতে চলেছে 'পাখি উৎসব'। ২০ জানুযারি পর্যন্ত চলবে। উৎসবের আয়োজক বনবিভাগ।