শেষ আপডেট: 29th January 2025 13:34
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব মেদিনীপুর: নতুন স্বামীর সাথে নির্ঝঞ্ঝাটে ঘর বাঁধতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মায়ের কাছে নিজের ছোট্ট শিশুই পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। সেই কাঁটা সরাতে গভীর রাতে শিশুকে ঘুম থেকে তুলে মুখ বেঁধে এলোপাথাড়ি মারধর করে বাদাম চাষের মাঠে ফেলে দিয়ে আসার অভিযোগ উঠল মা ও তার নতুন স্বামীর বিরুদ্ধে। সারারাত ঠান্ডার মধ্যে মাঠে পড়েছিল শিশুটি। ভাগ্যের জোরে টানা প্রায় ৮ ঘণ্টা পর সকালে লাল পিঁপড়ের কামড় খেয়ে জ্ঞান ফিরে আসে শিশুটির। গুরুতর আহত অবস্থায় কোনও রকমে কাঁদতে কাঁদতে পৌঁছয় কাছেই একটি বাড়িতে। জল খেতে চেয়ে ফের সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।
দুটো হাত ভাঙা, গায়ে পায়ে একাধিক আঘাতের চিহ্ন, মাথায় ফোলা আঘাতের চিহ্ন সহ রক্তাক্ত শিশুকে দেখেই শিউরে ওঠেন পরিবারের লোকেরা। ঘটনা চাউর হতেই ছুটে আসেন গ্রামবাসীরা। উত্তেজনায় ফেটে পড়েন রামনগর থানা এলাকার উত্তর হলদিয়া গ্রামের খয়রান্ডার বাসিন্দারা। খবর পেয়ে পুলিশ তড়িঘড়ি শিশুটিকে উদ্ধার করে বালিসাই বড়রাঙকুয়া হাসপাতালে ভর্তি করে। ছ বছরের শিশু সামান্য সুস্থ হতেই তার বয়ান শুনে শিউরে ওঠেন পুলিশকর্মীরাও।
শিশুটির মা মামনি গিরি ও সৎ বাবা সুকদেব মণ্ডল। অভিযোগ, মারের চোটে শিশুর দুটো হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে, পিঠে পায়ে আঘাতের চিহ্ন, বিড়ির ছেঁকা দেওয়া হয়েছে। পরিশেষে মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাথায় আঘাত করা হয়েছে । মাথায় আঘাত পেয়ে শিশুটি জ্ঞান হারায়। পুলিশ জানায়, এরপর শিশুটি মারা গেছে ভেবে বাড়ি থেকে দু কিলোমিটার দূরে গভীর রাতে স্বামী স্ত্রী মিলে একটি চীনেবাদামের খেতে ফেলে দিয়ে আসে তাকে। ভেবেছিল রাতেই শেয়াল টেনে ছিঁড়ে দেহ লোপাট করে দেবে। শীতের মধ্যে সারা রাত শিশুটি মাঠে পড়ে থাকে। কিন্তু ভাগ্যের জোরে সকালে রোদ উঠতেই তার জ্ঞান ফেরে।
পুলিশ শিশুর মা ও সৎ বাবাকে গ্রেফতার করেছে। তার আগে নিজের ছেলেকে মেরে ফেলার চেষ্টার কথা চাউর হতেই গ্রামবাসীরা ওই দুই কীর্তিমানকে ধরে গণধোলাই দেয়। পুলিশ জানিয়েছে, শিশুর প্রকৃত বাবা অর্থাৎ মামনির আগের স্বামী কার্তিক গিরি বছর পাঁচেক আগে মারা যান। এরপর উত্তর হলদিয়া গ্রামে ছোট্ট শিশুকে নিয়ে বাস করতেন মামনি। ফের আড়াই মাস আগে প্রেম করে সুকদেব মণ্ডলকে বিয়ে করে। এরপরই শিশুর সাথে অমানবিক অত্যাচার শুরু হয়ে যায়।
বেশ কিছুদিন ধরে চলছিল শিশুকে মারধর ও কষ্ট দেওয়া। শেষমেষ ঝঞ্ঝাট হটাতে ছ-বছরের শিশু সন্তানকে খুন করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় দম্পতি। বুধবার পুলিশ হেফাজত চেয়ে যুগলকে কাঁথি মহকুমা আদালতে তোলা হয়। মা হয়ে নিজের ফুটফুটে সন্তানকে খুনের চেষ্টা করতে পারে এমনটা স্বপ্নেও ভাবতে পারছে না এলাকার মানুষজন। প্রত্যেকে চাইছেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক ওই দম্পতির।