শেষ আপডেট: 7th October 2024 13:55
দ্য় ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব মেদিনীপুর: এখনও চলছে হুমকি। পুলিশ বা সাংবাদিকদের কাছে মুখ না খোলার জন্য় তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন পটাশপুরের নির্যাতিতার কন্যা। সোমবার তিনি জানান, গ্রামের কেউ তাঁদের পাশে দাঁড়ায়নি। কেউ খবর নিতেও আসেনি। উপরন্তু পঞ্চায়েত থেকে তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে পুলিশের কাছে বা সাংবাদিকদের কাছে মুখ না খুলতে।
এদিকে ময়নাতদন্তের পর দেহ নিতে অস্বীকার করে মৃতার পরিবার। হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানান তাঁরা। মৃতার ছেলে দাবি করেন, পটাশপুর থানার যে পুলিশ আধিকারিক ময়নাতদন্তের সময় উপস্থিত ছিলেন, তিনি বলেছেন তাঁর মায়ের শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কীটনাশক খাওয়ার ফলে মৃত্যু হয়েছে।তাই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা।
রবিবার ভোরে পটাশপুরে মৃত্য়ু হয় ওই বধূর। তাঁকে খুনে অভিযুক্ত সুখচাঁদ নামে এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। পরে হাসপাতালে মারা যায় ওই ব্যক্তিও। এই ঘটনা ঘিরে রবিবার দিনভর উত্তপ্ত ছিল পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর।
প্রতিবেশীরা জানান, অভিযুক্ত সুখচাঁদের পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতে পেরে গেছিলেন ওই বধূ। এরপর থেকে ওই মহিলাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছিল সুখচাঁদ। বধূর স্বামী পরিযায়ী শ্রমিক। কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। সন্তানদের নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তিনি। সাহায্যের জন্য ছুটে গেছিলেন গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে। সুখচাঁদের বিরুদ্ধে নালিশও জানিয়েছিলেন। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি।
অভিযোগ, শনিবার রাতে যখন সন্তানদের সঙ্গে তিনি বাড়িতে ঘুমোচ্ছিলেন, সেই সময়ে বাড়িতে ঢোকে সুখচাঁদ। ধর্ষণের চেষ্টা করে। কোনওরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে চিৎকার করতে করতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন বধূ। কিন্তু বাড়ির সামনে একটি ট্যাপ কলের চাতালে পা পিছলে পড়ে যান। মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে তাঁর। সেখানেই জ্ঞান হারান। কেউ চলে আসার আগে মৃত্যু নিশ্চিত করতে চেয়েছিল সুখচাঁদ। তাই মহিলার মুখে বিষ ঢেলে পালিয়ে গেছিল সে। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছন, তখন অনেকেই সুখচাঁদ থেকে সেখান থেকে ছুটে পালাতে দেখেছিলেন।
প্রতিবেশীদের আরও দাবি, 'নির্যাতিতা'কে রক্তাক্ত অবস্থায় চাতালে পড়ে থাকতে দেখে তাঁর চোখে মুখে জল দিয়েছিলেন তাঁরা। এতে সাময়িকভাবে ওই বধূর জ্ঞানও ফেরে। সুখচাঁদের কীর্তিকলাপের কথা জানান তিনি। আক্রান্ত বধূকে তমলুকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন তাঁরা। সেখানেই রবিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। সকালে বধূর মৃত্যুর খবর গ্রামে আসতেই তেতে উঠেছিলেন গ্রামের মহিলারা। সুখচাঁদকে বাড়ি থেকে তুলে এনে বেদম মারধর করে। পুলিশ সেখানে কোনওরকমে সুখচাঁদকে উদ্ধার করে রক্তাক্ত অবস্থায় এগরা হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানেই দুপুর একটা নাগাদ সুখচাঁদেরও মৃত্যু হয়।
মৃত বধূর আত্মীয়রা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। যে মহিলার সঙ্গে সুখচাঁদের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল, ওই মহিলাকে পুলিশ আটক করে। অপরদিকে গণপিটুনির জেরে অভিযুক্তের মৃত্যু হওয়ায় পৃথক মামলা রুজু করা হয়। এরপর থেকেই পুলিশের সামনে মুখ না খোলার জন্য তাঁদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে নির্যাতিতার পরিবার।