শেষ আপডেট: 6th October 2024 20:55
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পশ্চিম মেদিনীপুর: পটাশপুরের বধূ খুনের পরে অভিযুক্ত সুখচাঁদকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। ঘটনার পরে মুখ খুললেন ভুবনমঙ্গলপুর গ্রামের মানুষ।
তাঁরা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত সুখচাঁদের পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতে পেরে গেছিলেন ওই বধূ। এরপর থেকে ওই মহিলাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছিল সুখচাঁদ। বধূর স্বামী পরিযায়ী শ্রমিক। কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। সন্তানদের নিয়ে একা কী করে বাঁচবেন, সেই ভয়ে ঘিরে ধরেছিল ওই 'নির্যাতিতা'কে। সাহায্যের জন্য ছুটে গেছিলেন গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে। সুখচাঁদের বিরুদ্ধে নালিশও জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি।
শনিবার রাতে যখন সন্তানদের সঙ্গে তিনি বাড়িতে ঘুমোচ্ছিলেন, সেই সময়ে বাড়িতে ঢোকে সুখচাঁদ। ধর্ষণের চেষ্টা করে। কোনওরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে চিৎকার করতে করতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন বধূ। কিন্তু বাড়ির সামনে একটি ট্যাপ কলের চাতালে পা পিছলে পড়ে যান। মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে তাঁর। সেখানেই জ্ঞান হারান। কেউ চলে আসার আগে মৃত্যু নিশ্চিত করতে চেয়েছিল সুখচাঁদ। তাই মহিলার মুখে বিষ ঢেলে পালিয়ে গেছিল সে। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছন, তখন অনেকেই সুখচাঁদ থেকে সেখান থেকে ছুটে পালাতে দেখেছিলেন। গ্রামবাসীদের একাংশ এমনই অভিযোগ করেছেন।
তাঁদের আরও দাবি, 'নির্যাতিতা'কে রক্তাক্ত অবস্থায় চাতালে পড়ে থাকতে দেখে তাঁর চোখে মুখে জল দিয়েছিলেন স্থানীয়রা। এতে সাময়িকভাবে ওই বধূর জ্ঞানও ফেরে। সুখচাঁদের কীর্তিকলাপের কথা তিনি উদ্ধারকারী প্রতিবেশীদের জানিয়ে গেছেন। সুখচাঁদ পালানোর সময় বাড়ি থেকে সোনা দানা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করেছে, তাও তিনি অভিযোগ করেছিলেন। শুধু তাই নয়, বধূ আরও অভিযোগ করেছিলেন, যে মহিলার সঙ্গে সুখচাঁদের সম্পর্ক রয়েছে, সেও ঘটনার সময়ে উপস্থিত ছিল।
প্রতিবেশীরা 'আক্রান্ত' বধূকে তমলুকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে রবিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। সকালে বধূর মৃত্যু খবর গ্রামে আসতেই তেতে উঠেছিলেন গ্রামের মহিলারা। নিজেরাই তাই আইন হাতে তুলে নেন। সুখচাঁদকে বাড়ি থেকে তুলে এনে বেদম মারধর করেন।
গণপিটুনির খবর পেয়ে পটাশপুর থানার পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। গ্রামবাসীরা সাময়িকভাবে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়। এমনকী সুখচাঁদকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করে। পুলিশ সেখানে কোনওরকমে সুখচাঁদকে উদ্ধার করে রক্তাক্ত অবস্থায় এগরা হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানেই দুপুর একটার নাগাদ অভিযুক্ত সুখচাঁদেরও মৃত্যু হয়।
মৃত বধূর আত্মীয়রা মহিলার পক্ষ থেকে তার পরিবার লিখিত অভিযোগ করে। পুলিশ তদন্ত করছে। তবে ধর্ষণের কোনও অভিযোগ পায়নি পুলিশ। সুখচাঁদের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক যে মহিলার সঙ্গে ছিল, ওই মহিলাকে ইতিমধ্যে পুলিশ আটক করেছে। অপরদিকে গণপিটুনির জেরে অভিযুক্তের মৃত্যু হওয়ায় পৃথকভাবে মামলা রুজু করছে পুলিশ, সেটারও তদন্ত চলছে।
সুখচাঁদ মণ্ডলের ছেলের দাবি, 'বাবা যদি কিছু করে থাকে তাহলে, সেটা প্রমাণের উপর ভিত্তি করে বিচার হবে।'