শেষ আপডেট: 12th December 2024 15:45
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পশ্চিম মেদিনীপুর: দু' হাত-পা কোনওভাবেই নাড়াচাড়া করতে পারেন না। হুইল চেয়ারে বসে বা বিছানায় শুয়েই কাটে দিন। তবুও লক্ষ্যে অবিচল খড়গপুরের তুহিন দে। বার্ষিক ৫০ লাখ টাকা আয়ের চাকরির অফার ছেড়ে এম টেক এর প্রস্তুতি নিচ্ছে তুহিন। মহাকাশ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত হতে চান তিনি।
খড়গপুর শহরের মালঞ্চ এলাকায় বাড়ি তুহিনের। বাবা সমীরণ পেশায় ব্যবসায়ী, মা সুজাতা ঘর সামলান। মূলত ছেলেকে নিয়েই সময় কাটে তাঁর। খড়গপুর আইআইটি ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল তুহিন। ১২ ক্লাসের পরীক্ষা দিয়েছিল রাজস্থানের কোটা থেকে। তারপরেই শিবপুর থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে বিটেক করেন তুহিন।
হাতে লিখতে না পারলেও তুহিন কিন্তু পরীক্ষার সময় সহায়ক হিসেবে কোনও দিন কাউকে নেননি। নিজের মুখে পেন বা পেন্সিল নিয়ে লিখতে সক্ষম তিনি। তবে বরাবর কাগজ নেমে গেলে বা পাতা উল্টাতে সাহায্য করেছেন শিক্ষকরাই। এবং কম্পিউটারও তিনি চালান মুখ দিয়ে। যা দেখলে অবাক হবেন অনেকেই। তুহিন জানান, মুখ দিয়ে পেন বা পেন্সিলে লিখতে কোনও সমস্যা হয় না তাঁর।
তিনি বলেন, "মুখ দিয়ে সাধারণ পেন বা পেন্সিলে লিখতে আমার কোনও সমস্যা হয় না। পরীক্ষার সময় অতিরিক্ত সময়ও নিইনি কখনও। মুখে পেন্সিল ধরে ছবি আঁকতে বা কম্পিউটার চালাতেও কোনও অসুবিধে হয় না। সামনেই ফেব্রুয়ারিতে গেট পরীক্ষা রয়েছে। এখন তারই প্রস্তুতি নিচ্ছি। খড়গপুর আইআইটি থেকে এম-টেক করার ইচ্ছে। খুব আনন্দ হবে যদি ভবিষ্যতে মহাকাশ গবেষণার সুযোগ পাই।
তুহিনের মা সুজাতা বলেন, "ছেলেকে নিত্যদিনের কাজ সমস্তই করে দিতে হয়, খাবারও খাইয়ে দিতে হয়। পড়া ও লেখা সময় বই বা খাতার পাতা উল্টে দিতে হয়। তবে পেন বা পেন্সিল মুখের সামনে রাখলে ও মুখ দিয়ে তুলে নেয়। নিজের চেষ্টাতেই এগিয়ে যাচ্ছে ও।"
শিবপুর থেকে বি-টেক করার পর আমেরিকার একটি ব্যাংক এবং একটি বেসরকারি সংস্থায় প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা বার্ষিক আয়ের চাকরির অফার ফিরিয়ে দিয়েছেন তুহিন। পিএইচডি করে সরকারি চাকরি করার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর। ইতিমধ্যেই পড়াশোনা ও কাজের জন্য রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালের হাত থেকেও পুরস্কার নিয়েছে তুহিন। এখন লক্ষ্যপূরণে আরও এগিয়ে যাওয়ার পালা।