শেষ আপডেট: 9th June 2023 03:17
লিভ ইন নয়, বিয়ে করেছিল মনোজ-সরস্বতী! লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে পরিচয় দিত না দম্পতি
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সময় যত এগোচ্ছে, মুম্বইয়ের মীরা রোড হত্যাকাণ্ডে (Meera road murder) ততই উন্মোচিত হচ্ছে নতুন নতুন রহস্য। এবার জানা গেল, লিভ ইন সঙ্গী নয়, সরস্বতী বৈদ্য (Saraswati Vaidya) এবং মনোজ সানে (Manoj Sane) আদতে স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। ৫৬ বছর বয়সি স্বামী, স্ত্রী মাত্র ৩২, বয়সের এই বিপুল তফাতের জন্যই কোথাও নিজেদের বিবাহিত দম্পতি বলে পরিচয় দিত না মনোজ, এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ৪ বোনের মধ্যে ৩ জনের সঙ্গেই যোগাযোগ ছিল সরস্বতীর। তাঁদের শুক্রবার জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, একটি মন্দিরে বিয়ে সেরেছিলেন মনোজ-সরস্বতী। নিজের বোনদের সে কথা জানিয়েওছিলেন সরস্বতী। কিন্তু বয়সের ২৪ বছর তফাৎ হওয়ায় মনোজ-সরস্বতী বাইরের কারও কাছে নিজেদের বিবাহিত দম্পতি বলে পরিচয় দিত না। বরং, সরস্বতী নাকি সকলকে বলে বেড়াত, মনোজ তার মামা হয়, সে মুম্বইয়ের একটি কাপড়ের কারখানায় চাকরি করে। এমনকী, আবাসনের কারও সঙ্গেই বিশেষ কথাবার্তা ছিল না দম্পতির। অনেকেই দুজনকে ঠিকমতো চিনতেনও না, দাবি প্রতিবেশীদের।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সরস্বতী আসলে আহমেদনগরের বাসিন্দা। মা মারা গিয়েছিলেন বহু আগেই। তারপর চার মেয়েকে ছেড়ে পালিয়ে যান বাবা। সরস্বতী ছিলেন চার বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। বাবা চলে যাওয়ার পর ৪ জনের ঠাঁই হয়েছিল আলাদা আলাদা অনাথ আশ্রমে। সেখানেই বড় হয়ে ওঠা তাঁদের। সরস্বতী নিজে মাধ্যমিক পরীক্ষাটুকুও দেওয়ার আগে স্কুল ছেড়ে দেন। জীবনের খুব কঠিন সময়ে বরিভলির একটি রেশনের দোকানে মনোজের সঙ্গে দেখা হয়েছিল সরস্বতীর। ওই দোকানেই কাজ করত মনোজ।
কিছুদিন পরেই পরস্পরের প্রেমে পড়ে যায় দুজনে। সরস্বতীকে বরিভলিতে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তোলে মনোজ। বছর তিনেক আগে সেখান থেকে মীরা রোডের একটি আবাসনে চলে আসে দুজনে। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন সরস্বতী।
সরস্বতী যে অনাথ আশ্রমে থাকতেন সেখানকার মালকিন অনু সালভে পুলিশকে জানিয়েছেন, মনোজ এবং সরস্বতী দুজনেই প্রচুর উপহার নিয়ে মাঝে মাঝেই আশ্রমের বাচ্চাদের দেখতে আসত। বড় গাড়িতে করে আসত তারা। তবে শেষবার সরস্বতী সেখানে এসেছিলেন বছর দুয়েক আগে। তখন নাকি তাঁকে অত্যন্ত চিন্তিত, ক্লিষ্ট লেগেছিল দেখতে। তবে তার কারণ তিনি বুঝতে পারেনি বলেই পুলিশকে জানিয়েছেন অনু।
রবিবার মীরা রোডের বাড়িতে সরস্বতীকে খুন করে মনোজ। যদিও খুনের কথা অস্বীকার করেছে সে। তার দাবি, আত্মহত্যা করেছিল সরস্বতী। পুলিশ তাকেই খুনি ভাবতে পারে, সে ভয় থেকে প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা করে অভিযুক্ত । সরস্বতীর দেহ ২০টি টুকরো করে কেটে গন্ধ যাতে না বেরোয় তা নিশ্চিত করতে হাড় আর মাংস আলাদা করার জন্য প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করে নেয় সে। এছাড়া অজস্র রুম ফ্রেশনার স্প্রে করে মনোজ।
যদিও তাতে দুর্গন্ধ আটকানো যায়নি। মঙ্গলবার প্রতিবেশীরাই খবর দেন পুলিশে। পুলিশ এসে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে সিঙ্ক ভর্তি সরস্বতীর সিদ্ধ দেহাংশ উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় মনোজকে। তার বিরুদ্ধে খুন এবং প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। তাকে আদালতে পেশ করা হলে বিচারক ১৬ জুন পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
'সরস্বতী আত্মহত্যা করেছিল, আমি কেবল দেহ লোপাট করেছি!' ফের নতুন দাবি মনোজের