শেষ আপডেট: 1st September 2023 11:47
‘‘আফ্রিকা অদ্ভুত সুন্দর দেখতে কিন্তু আফ্রিকা ভয়ঙ্কর। বাবলা বনে ভর্তি বাংলাদেশের মাঠের মতো দেখালে কী হবে, আফ্রিকা অজানা মৃত্যুসঙ্কুল।’’-- ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির অন্যতম হিরো, চাঁদের পাহাড়ের অভিযাত্রী শঙ্করের মধ্যে দিয়ে এই কথা শুনিয়েছেন স্রষ্টা বিভূতিভূষণ। তবে শুধু সেই আবেগ নয়, সেই সঙ্গে আফ্রিকার আকর্ষণ অজস্র পশু-পাখি। সেসবের সাক্ষী হতেই কেনিয়ার মাসাইমারায় (Masaimara Forest) ভ্রমণ।
সাবানা ঘাস আর একেশিয়া গাছে ভরা এই বিশাল অরণ্যে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, ঝড়, দুর্যোগ-- সবই লেগে আছে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই। তার মধ্যেই সেখানে অবিচল, উত্তেজনাহীন হয়ে বিরাজ করে পশুর দল। একইসঙ্গে দেখা যায় জিরাফ, জেব্রা, হরিণ (এবং তার অফুরন্ত প্রজাতি), বনশুয়োর, আফ্রিকার বিখ্যাত দ্বিশৃঙ্গ গন্ডার, মহীরুহ দাঁতাল। সকলেরই দলে দলে অবাধ বিচরণ। এই ‘বিচরণ’-এর আবার নানা রূপ। কখনও বিচরণ চলছে শান্তভাবে আশপাশে, কখনও দল বেঁধে তারা চলেছে তানজানিয়া থেকে কেনিয়া, সবুজের সন্ধানে।
‘মাইগ্রেশন’ নামে বিখ্যাত এই বিচরণ শুরু হয় জুলাই মাসে। চলে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। তানজানিয়ার সেরেনগেটি (Serengeti) থেকে দলে দলে তৃণভোজী প্রাণীরা চলে আসে কেনিয়ার মাসাইমারা অঞ্চলে। তানজানিয়া আর কেনিয়া দু'টি আলাদা দেশ হলেও পশুদের জন্য কোনও কাঁটাতার নেই। এমনকি ট্যুরিস্টরাও মাসাইমারাতে দাঁড়িয়ে স্পর্শ করতে পারেন তানজানিয়ার মাটি।
তবে মানুষের সৃষ্ট কোনও বাধা না থাকলেও এই পরিভ্রমণে প্রকৃতিগত বাধা আছে, আর তা আসে মাংসাশী প্রাণীদের থেকে। তাই সব বুনো শুয়োর বা সব জিরাফই যে নিরাপদে পৌঁছতে পারে মাসাইমারায়, তা নয়। পথে থাকে চিতা, নেকড়ে, সিংহের দল। প্রকৃতির এই অজানা মৃত্যুসঙ্কুল খেলাও এখানে অনায়াসেই দেখা যায়, একটু ধৈর্য্য নিয়ে অপেক্ষা করলে। চিতা তার দুর্দান্ত গতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে কোনও হরিণের ঘাড়ে-- এই দৃশ্য আমার মতো বহু পর্যটকের সামনেই ঘটেছে। পর্যটকদের জিপ আবার খুব কাছে চলে এলে, শিকার করা মৃত হরিণ নিয়ে চিতা চলে গেল গাছের আড়ালে। ড্রাইভার দেখালেন, শিয়ালের দলও উপস্থিত হয়েছে মৃত হরিণের গন্ধে।
তবে বিপদ শুধু স্থলে নয়, মারা নদীতেও আছে। আফ্রিকার বিখ্যাত নাইল ক্রোকোডাইল বা কুমির। জল খেতে আসা জন্তুদের ওপর আক্রমণ করে প্রায়ই ভোজ সারে তারা। তবুও এত কিছুর পরেও প্রতি বছর প্রায় দশ লক্ষ জন্তু চলে আসে এই বিশাল ৫৮৩ বর্গমাইল মাসাইমারা জঙ্গলে। আর তাদের এই পরিভ্রমণ দেখার আদর্শ স্থল মারা ও তালেক নদীর সঙ্গমস্থল।
মারা নদীর প্রচুর কুমির ও জলহস্তির রোদ পোহানো দেখতে দেখতে নদীর চরে মধ্যাহ্নভোজন করে নিতে পারেন ট্যুরিস্টরা। তবে সবথেকে ভাল লাগে, সাবানা ঘাসের উপরে কোনও একেশিয়া গাছের তলায় গিয়ে নিরাপদে গাড়ি থেকে নামতে পারলে। দূরে হয়তো চোখে পড়বে মাসাই জিরাফদের বিচরণ।
সবশেষে শঙ্করের কথা অনুসরণ করে বলতেই হয়, ‘আফ্রিকা অজানা মৃত্যুসঙ্কুল, তাই জঙ্গলে যত্রতত্র নেমে পড়া বারণ। কারণ চিতা, সিংহ চোখে পড়লেও, বোঝা যায় না ঘাসের তলায় কোথায় লুকিয়ে আছে বিষাক্ত মাম্বা সাপ, তবু স্টারলিং পাখি থেকে শুরু করে বহু পাখি নিয়ে মাসাইমারা অদ্ভুত সুন্দর, যেখানে সব তৃণভোজীরা আমাদের মতোই এসেছে, পরিভ্রমণে।'
ঘুমঘুম চাঁদ, ঝিকিমিকি তারা, এই মাধবী রাত! জেনে নিন দেশের সেরা ৫ ‘স্টারগেজিং’ ডেস্টিনেশন