শেষ আপডেট: 21st July 2023 14:32
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তিনি যে সে মানুষ নন। একটা সময় যখন বহিরাগত শত্রুর হাতে আক্রান্ত দেশ, তখন ভারতের মানুষের হয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ভারতীয় সেনার (Indian Army) একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। কার্গিল যুদ্ধের (Kargil war) অংশ ছিলেন। ভারতের শান্তি রক্ষা বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে শ্রীলঙ্কাতেও থেকে এসেছেন। কিন্তু সেই তিনিই নাকি বাঁচাতে পারলেন না স্ত্রীকে। আজ দেশজুড়ে মণিপুরের ভিডিও নিয়ে নিন্দা-ঘৃণা-আতঙ্ক-তর্ক-তরজা। ভাইরাল ভিডিওতে (Manipur video) যে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় হাঁটানো হয়েছিল, গণধর্ষণ করা হয়েছিল প্রকাশ্যে, তাঁদেরই একজনের স্বামী তিনি।
হ্যাঁ, মণিপুর গণধর্ষণ কাণ্ডের এক নিগৃহীতার স্বামী ভারতীয় সেনার প্রাক্তন কর্মী। বর্তমানে অবসর নিয়েছেন তিনি। একটা দীর্ঘ সময় ভারতীয় সেনার অসম রেজিমেন্টের সুবেদার পদে কাজ করেছেন তিনি। স্ত্রীর প্রতি হওয়া ভয়ংকর অন্যায় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বারবার আফসোস ঝরে পড়েছে তাঁর গলায়, 'আমি গোটা দেশকে সুরক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু অবসরের পর আমি নিজের স্ত্রী, বাড়ি কিংবা গ্রামের অন্যান্যদের সুরক্ষা দিতে পারলাম না।'
এই অবস্থায় কেমন আছেন তিনি? প্রাক্তন সেনাকর্মী জানিয়েছেন, তিনি মর্মাহত এবং বিষাদগ্রস্ত। অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন তিনি। 'পুলিশ তো ওখানে ছিল। তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। আমি চাই যারা মহিলাদের সম্মানহানি করেছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক,' জানিয়েছেন তিনি।
'আমি একেবারে সামনে থেকে কারগিল যুদ্ধ দেখেছি। অবসর দেয়ার পর যখন আমি দেশে ফিরে আসি, তখন দেখলাম আমার রাজ্য যুদ্ধক্ষেত্র থেকেও বেশি বিপদজনক!' বিস্ফোরক ওই প্রাক্তন সেনাকর্তা (Manipur Violence)।
তিনি আরও জানিয়েছেন, 'ওরা আমাদের গ্রামে এসে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে শুরু করে। গ্রামের লোকজন মরিয়া হয়ে জীবন বাঁচানোর জন্য পালাতে শুরু করে। আমার স্ত্রী আমার থেকে আলাদা হয়ে যান। তিনি এবং আরো চারজন গ্রামবাসী জঙ্গলে গিয়ে লুকিয়ে ছিলেন। কিন্তু কিছু আক্রমণকারী, যারা শুয়োর এবং হাঁস-মুরগি তাড়া করতে করতে জঙ্গলে ঢুকে পড়েছিল তারা ওদের দেখে ফেলে। আমি দূর থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম, ওরা আমার স্ত্রী এবং বাকিদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে' নারকীয় সেই ঘটনার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন তিনি।
গত ৩ মে থেকে জাতিদাঙ্গায় জর্জরিত হয়ে পড়েছিল ভারতের উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য। সেই মে মাসেই ঘটেছিল এই নারকীয় ঘটনা। সংখ্যালঘু কুকি সম্প্রদায়ের দুই মহিলাকে গণধর্ষণ করার পাশাপাশি একজনের বাবা এবং ভাইকে খুনও করা হয়। আরও এক মহিলাকে যৌন নিগ্রহ করা হয়। নিগৃহীতাদের দাবি, সংঘর্ষ থেকে বাঁচতে প্রাণভয়ে জঙ্গলে লুকিয়েছিলেন তাঁরা, তারপর আশ্রয় চেয়েছিলেন পুলিশের কাছে। সেই পুলিশই নাকি তাদের তুলে দিয়েছিল মেইতেই গোষ্ঠীর উন্মত্ত জনতার হাতে। দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে রাস্তা দিয়ে ঘোরানোর সময় সেই বর্বরোচিত ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করেছিল কেউ। পরে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। ঘটনার ভয়াবহতায় লজ্জায়, ঘৃণায়, ভয়ে শিউরে উঠেছিল সারা দেশ। সেই ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে মূল অভিযুক্ত সহ আরও ৩ জনকে। তারপরেই শুক্রবার ভোরে গ্রামের মহিলারা একত্রিত হয়ে মূল অভিযুক্ত হেরোডাসের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেন।
গুজব, ক্রোধ, আর ভুয়ো ভিডিও- মণিপুরে নগ্ন করে মহিলাদের হাঁটানোর আসল ‘অপরাধী’ কারা