পশ্চিমবঙ্গে আমের ফলন
শেষ আপডেট: 8 May 2025 16:52
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পোড়া গরম গায়ে লাগতেই রসনায় খোঁজ শুরু। গরম মানেই যে পরের পর আত্মপ্রকাশ হিমসাগর-গোলাপখাস-ল্যাংরা-ফজলির। এবছর ছবিটা মসৃন হবে তো? আমের স্বাদেই যে লুকিয়ে গরমকে জব্দ করার মন্ত্র। রাজ্যের সিংহভাগ আম যে দুটি জেলা থেকে আসে, সেই মালদহ ও মুর্শিদাবাদে আমের ফলন (Mango Farming in West Bengal) নিয়ে মোটের উপর খুশি চাষিরা।
এবছরের চৈত্রেই মুকুলে ছেয়েছিল মুর্শিদাবাদের আমের বাগানগুলো। জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের অনুমান গত বছরের তুলনায় এবছর মুর্শিদাবাদ জেলার আমের বাগানগুলোতে প্রায় দু'গুণ থেকে আড়াই গুণ আমের ফলন (Mango Farming in West Bengal) হবে। তার ফলে কমতে পারে আমের দাম।
এক সময় মুর্শিদাবাদ জেলার আমের বাগানগুলোতে (Mango Garden) প্রায় ২৫০টি বিভিন্ন প্রজাতির আম উৎপাদন হত। আমের গুণমান নিরীক্ষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলেন, মুর্শিদাবাদের আমের স্বাদ, দেশ এবং রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তে উৎপাদিত আমের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। মুর্শিদাবাদ জেলার আমকে রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তে উৎপাদিত আমের থেকে পৃথক করার জন্য নবাবরা একসময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চারা নিয়ে এসে 'গ্রাফটিং' পদ্ধতিতে নতুন প্রজাতির শঙ্কর আম গাছ তৈরি করেছিলেন।
এখনও মুর্শিদাবাদ জেলার কহিতুর, কালাপাহাড়, চন্দন কোষা, মোহনভোগ, নবাবপসন্দ-সহ আরও কয়েকটি বিলুপ্ত প্রজাতির আম মানুষের জিভে জল এনে দেয়।মুর্শিদাবাদ জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক প্রিয়রঞ্জন সান্নিগ্রাহী বলেন, "এবছর মুর্শিদাবাদ জেলার প্রায় ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। আমরা আশা করছি প্রায় ৩ লক্ষ মেট্রিক টন আমের ফলন আমরা পাব। গত বছর মুর্শিদাবাদ জেলায় আমের ফলন ছিল মাত্র এক লক্ষ মেট্রিক টন। এখনও পর্যন্ত জেলার যা আবহাওয়া রয়েছে তা আম চাষের জন্য অত্যন্ত অনুকূল। এইরকম আবহাওয়াতেই মুকুল থেকে ভালো ফলন হয়। দুপুরের দিকে কিছুটা গরম বাড়লেও তা এখনও তাপপ্রবাহের আকার নেয়নি। এর পাশাপাশি কয়েকদিন আগে অল্প বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা আমের ভাল ফলনের জন্য অত্যন্ত জরুরি।"
তবে মুর্শিদাবাদ জেলায় আমের ফলন (West Bengal Mango Production) গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও আমের দাম কতটা কমবে বা আদৌ কমবে কিনা তা নির্ভর করবে অন্য রাজ্যে আমের কতটা ফলন হচ্ছে তার উপর। উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে,আম চাষের ক্ষেত্রে এক বছর ‘অন ইয়ার’ তো পরের বার ‘অফ ইয়ার’ হয়। গত বছর ‘অফ ইয়ার’-এর কারণে জেলায় আমের উৎপাদন কম হয়েছিল। এ বারে ‘অন ইয়ার’।’’ চাষিরা জানাচ্ছেন, আম রাখার জন্য জেলায় কোনও হিমঘর নেই। আবার আম থেকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ব্যবস্থাও নেই। অথচ বাগানে বাগানে আম পাকতে শুরু করেছে। আম পাকতে শুরু করলে তা বাগানে রাখা যাবে না। ফলে জলের দরে সেই আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই। ভগবানগোলার এক আম চাষি সার জামান শেখ বলেন, ‘‘এ বারে প্রচুর পরিমাণ আম ধরেছে। আমাদের ১৫ বিঘা আমের বাগান রয়েছে। এ বারে আমের বাগান বিক্রি হয়নি। প্রচুর পরিমাণ আম ধরেছে। ফলত আম আদমির আমের চাহিদা এবার পূরণ করবে মুর্শিদাবাদ।"
তবে ব্যতিক্রম ফরাক্কা। এখানকার আমচাষিরা জানান, অবস্থা এতটাই বেহাল যে, প্রতি গাড়িতে ৬০ মণ আম রফতানি করা হয়। এবার সেটুকু আমেরও জোগানও নেই। স্বভাবতই বাগান লিজে নেওয়ার যে খরচ সেই খরচের টাকাও উঠবে না বলেই আশঙ্কায় ভুগছেন চাষিরা। যদিও সরকারি আধিকারিকদের দাবি, বৃষ্টি না হওয়ায় মুকুল ঝরে গেছে। এছাড়াও গাছের ঠিক মতো যত্ন না নেওয়ায় মুকুল কিছুটা নষ্ট হয়েছে। তাই আমের ফলন কম। যদিও নতুন করে লাগানো গাছে বা ছোট বাগান যেগুলো আছে সেগুলোতে আমের ফলন ভালোই হয়েছে।
এদিকে মালদহে এবার আমের ফলন ৩ লক্ষ মেট্রিক টনের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়েছে। গতবার ফলন হয়েছিল পৌনে তিন লক্ষ মেট্রিক টন। ফলন বাড়ায় খুশি জেলার আমচাষিরা। জেলার কৃষি আধিকারিকরা জানান, আগে আমের অফ ও অন ইয়ার ধরে ফলনের হিসেব করা হত। কিন্তু গত এক দশকে এভাবে আর হিসেব হয় না। কারণ এখন আম চাষিরা অনেক বেশি পেশাদার। আগে বেশিরভাগ আমচাষি পারিবারিক বাগানে আমচাষ করত। সরিক হিসেবে ভাগযোগ হত বলে গাছের যত্নে ঘাটতি থেকে যেত। এখন বেশিরভাগ চাষি পেশাদার। তারা বাগান লিজ নিয়ে চাষ করেন। বাণিজ্যিক মনোভাবের ইতিবাচক ফল লক্ষ্য করা যাচ্ছে আমের ফলনে।