মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শেষ আপডেট: 2nd January 2025 17:15
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ঠিক যেন ক্লাসরুম। দফতর ধরে ধরে মন্ত্রী থেকে প্রশাসনিক কর্তা, সকলের কাছ থেকে কাজের খতিয়ান থুড়ি 'পড়া' ধরলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
ক্লাসে ভাল ছাত্রদের দিদিমনি যেমন পিঠ চাপড়ান, সেভাবেই ভাল কাজের জন্য কিছু অফিসারের প্রশংসা করলেন তেমনই খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য ভরা মিটিংয়েই রীতিমতো তিরষ্কার করেছেন একাংশ অফিসারকে।
মালদহর ইংরেজ বাজারে তৃণমূল কাউন্সিলর খুনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী এসপির উদ্দেশে বলেছেন, "পুলিশের একটা চোখ কাজে থাকবে আর একটা চোখ অন্যদিকে। না হলে এসপি হওয়ার দরকার কি!"
এদিনের বৈঠকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন ডিএম, এসপি-সহ জেলা প্রশাসনের কর্তারা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ডিএমদেরও লক্ষ্য রাখতে হবে, কোথায় কোন বিডিওটা ভাল কাজ করছে, কে কাজ করছে না। কোন বিএলআরও মানুষকে হ্যারাস করছে। ভোটার লিস্টের গরমিলের জন্য কারা দায়ী, সেই কাজের রিপোর্টও চান মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের ভূমিকা নিয়েও বড় প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ডিজি রাজীব কুমারের উদ্দেশে মমতা বলেন, "ডিআইবি ডিপার্টমেন্ট করছে টা কি? ওরা তো একটা ইনফরমেশনও দেয় না। অবিলম্বে এদের বিরুদ্ধে স্টেপ নাও।"
আইসিডিএস কেন্দ্রে মিড ডে মিলের খাবারের মান নিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে মাঝে মধ্যেই অভিযোগ ওঠে। এ ব্যাপারে জেলার ডিএমরা কে ক'টি আইসিডিএস কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন, এদিনের বৈঠকে সেই প্রশ্নও তেলেন মুখ্যমন্ত্রী। ১০ হাজার স্কুলে ডিজিটাল পরিকাঠামোর কাজ কতদূর এগোল তাও খোঁজ নেন।
দেউচা পাঁচামির কয়লা খনি থেকে বেআইনি বালি পাচার, সমবায়ে বেনিয়ম থেকে পানীয় জলের পাইপ লাইনের কাজ, মিড ডে মিলে অনিয়ম, আলুর কালোবাজারি- দু'ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকে দফতর দফতর ধরে রিপোর্ট কার্ডে চোখ রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার ১২ লক্ষ বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন। মনে করিয়েছেন, 'সরকারি টাকার এক পয়সাও যেন অন্য খাতে না যায়'। বেনিয়মের প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমি খবর পাই, আপনারা খবর পান না কেন?"
এ প্রসঙ্গে ডিএম, এসপিদের মনে করিয়েছেন, "আপনারা সরকারের মুখ। কিন্তু নিজেদের পছন্দ মতো লোক বসালে হবে কী করে? জেলায় নতুন করে আমর্সের আমদানি হচ্ছে, মোবাইল চেকার, নাকা চেকিং কোথায় গেল?"
সম্প্রতি বাঘিনির উপস্থিতি ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল জঙ্গলমহলে। এখনও আবার হাতির উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এ বিযাপারেও খোঁজ নিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। বলেছেন, "মনে রাখবেন, আমরা সকলে কিন্তু মানুষের সেবায় নিয়োজিত। তাই কাজে ফাঁকি বরদাস্ত করব না। এমনকী কোনও সরকারি কর্মচারী যদি ভেবে থাকেন, চাকরি জীবনের শেষ বয়সে বেনিয়ম করে পার পেয়ে যাবেন, তাহলে জেনে রাখুন, সেটা হবে না। দুর্নীতি প্রমাণিত হলে অবসরে যাওয়া কর্মীকেও ছাড়া হবে না।