এই নিয়ে এক মজার ঘটনার কথা আজও আলোচিত হয় রাজনীতির অন্দরে। সুব্রত মুখোপাধ্যায় তখন শহরের মেয়র। তিনি একবার গাড়ি করে ফিরছিলেন শিয়ালদহ থেকে। মৌলালী এলাকায় তাঁর চোখে পড়ে, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে কেউ একজন প্রস্রাব করছেন। সুব্রতবাবু এত রেগে যান, গাড়ি থেকে নেমে কঞ্চি দিয়ে সপাটে এক বাড়ি মারেন সেই ভদ্রলোকের পিছনে।
সে যাই হোক, বহু বছর ধরেই শহর কলকাতার এই অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে লেখালেখি বা অভিযোগ কম হয়নি। কিন্তু পরিস্থিতি কখনওই বদলায়নি। আইন থেকে গেছে আইনের মতো, নোংরা করার প্রবণতাও থেকে গেছে সেই তিমিরে।
সম্প্রতি এই নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছে মুম্বই, পুণে, তেলেঙ্গানা। জরিমানা করাও শুরু হয়েছে। এবার সেই পথেই হাঁটতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে যে আইন আছে, তাতে তিনি সন্তুষ্ট নন। আরও কড়া আইনের কথা বলেছেন এবার।
প্রসঙ্গত, এই বিষয়ে ২০০১ সালেই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রোহিবিশন অফ স্মোকিং অ্যান্ড স্পিটিং অ্যান্ড প্রোটেকশন অফ হেল্থ অফ নন-স্মোকারস অ্যান্ড মাইনর অ্যাক্ট, ২০০১’ অনুসারে, প্রথমবার প্রকাশ্যে থুতু বা গুটখার পিক ফেললে ১,০০০ টাকা জরিমানা হবে। দ্বিতীয়বার ধরা পড়লে জরিমানার পরিমাণ ২,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
এ নিয়ে বাংলা পক্ষের মুখপাত্র গর্গ চট্টোপাধ্যায় কটাক্ষ করে বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গ সরকার কি সত্যিই সাহস দেখাতে পারবে? বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ থেকে যাঁরা বাংলায় এসে শিল্পাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করছেন, অরাজকতা তৈরি করছেন, তাঁদের রুখতে কি কোনও পদক্ষেপ নেবে সরকার? আগে সেটাই করা হোক। গুটখা-থুতুর বিরুদ্ধে কড়া আইনের সিদ্ধান্ত অবশ্যই ভালো, কিন্তু আগে বাইরের রাজ্য থেকে আসা দুষ্কৃতীদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করুক সরকার।'
তবে অনেকেই বলছেন, শহর নোংরা করার বিষয়টিতে কোনও প্রাদেশিক সীমা তৈরি করা ঠিক নয়। বাঙালি বা অবাঙালি নির্বিশেষে এই প্রবণতার শিকার। অবাঙালিদের মধ্যে হয়তো গুটখা খাওয়ার অভ্যেস বেশি, তাই মনে করা হয় তাঁরাই কেবল পিক ফেলে নোংরা করেন, কিন্তু বাস্তবে বহু বাঙালিও পান খান। তামাকজাত নানা দ্রব্য চিবোন মুখে। থুতু ফেলে শহর নোংরা করেন তাঁরাও।
তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন, এই আইন এবার আরও কঠোর করা হোক এবং প্রয়োগে কোনওরকম ঢিলেমি না থাকুক। শহরের পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষা করতে কঠোর পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছেন তিনি। এখন দেখার, নতুন করে এই বিষয়ে কী ধরনের আইনি সংশোধন বা জরিমানার হার বাড়ানো হয় এবং প্রশাসন কীভাবে বাস্তবায়ন করে।