শেষ আপডেট: 13th December 2024 20:58
লোকসভা ভোট এবং তার পর পরই ১০টি বিধানসভার উপ নির্বাচনের ফলাফল বুঝিয়ে দিয়েছে, বাংলায় এখন বিরোধীরা বেশ দুর্বল। শুধু তা নয়, মহারাষ্ট্রের ভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর জাতীয় রাজনীতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচ্চতা ও কদর স্বাভাবিক নিয়মেই বেড়েছে। এহেন পরিস্থিতি যে কোনও রাজনীতিককেই আরও আত্মবিশ্বাস জোগায়। কঠিন সংস্কার বা বলিষ্ঠ পদক্ষেপের জন্য সাহসও দেয়।
বাংলাতেও তার অন্যথা হচ্ছে না। প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার সাহসী পদক্ষেপ করতে চলেছেন। সরকারি অফিসারদের জন্য এমন একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন (Mamata Banerjee – APP) তৈরি করেছে নবান্ন, যাতে কর্মচারীদের একটা বড় অংশ বেশ জব্দ হতে পারেন বলেই মনে করা হচ্ছে। ১০ ডিসেম্বর অর্থ দফতরের অডিট ব্রাঞ্চ থেকে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি (৪৯৪১-এফ - ওয়াই) হয়েছে।
নবান্ন সূত্রের মতে, অফিসারদের জব্দ করাটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাথমিক উদ্দেশ্য নয়। প্রাথমিক উদ্দেশ্য সরকারি অর্থের যথাযথ ব্যবহার ও অপচয় বন্ধ করা। তা ঠিকমতো করার চেষ্টা মানেই চুরি ও লিকেজ বন্ধ করা।
একটা সময়ে এমন সংস্কারের লক্ষ্যে এক ধাপ এগিয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকার। ওয়েস্ট বেঙ্গল ফাইনান্সিয়াল রিস্ট্রাকচার প্রকল্পের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করে লিকেজ বন্ধ করেছিলেন বুদ্ধদেববাবু। এজন্য সমীক্ষার কাজ করে দিয়েছিল প্রাইস ওয়াটার হাউজ কুপার্স। আর আধুনিকীকরণ ব্যবস্থার জন্য ঋণ দিয়েছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক। তার সুফল পেয়েছিলেন অমিত মিত্র।
সরকারি সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ, স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিষেবা দেওয়া, এবং হিসাব রাখার ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার এমন মোক্ষম আধুনিকীরণের পথে হাঁটছেন যেটাও মাইলফলক হতে পারে।
সরকারি ব্যবস্থায় বহুবিধ রোগের মধ্যে একটা রোগ হল, সম্পত্তির মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণের নামে দুর্নীতি করা। কেউ কেউ পুকুর চুরি করেন বলে অভিযোগ। অর্থাৎ যেখানে কাজের দরকার নেই, সেখানে খাতায়কলমে কাজ দেখিয়ে টাকা বরাদ্দ করা এবং সেই টাকার তছরূপ করা। এবার যে অ্যাপ আনা হয়েছে, তাতে জিপিএস ট্যাগ করে দেখাতে হবে কোন সম্পত্তির মেরামতি বা রক্ষণাবেক্ষণের কথা বলা হচ্ছে। সেই সম্পত্তির ছবি বাধ্যতামূলক ভাবে তুলে পাঠাতে হবে।
সামাজিক প্রকল্পে সরকারি সমীক্ষার নামেও ফাঁকিবাজি করা যাবে না। ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার কোনও প্রকল্পের জন্য তাঁর এলাকায় ঠিকমতো পরিদর্শনে যাচ্ছেন কিনা তারও জিপিএস ম্যাপিং হবে।
ঘটনা হল, একেবারে নিচুতলার অফিসার থেকে জেলা শাসক পর্যন্ত অ্যাপের মাধ্যমে কানেকটেড থাকবেন। অ্যাপেই তথ্য আপলোড করতে হবে, সেটা মহকুমা শাসক দেখতে পাবেন। আবার মহকুমা শাসক তাঁর সমীক্ষা রিপোর্ট ও পর্যবেক্ষণ অ্যাপের মাধ্যমেই জেলা শাসককে পাঠাবেন। অর্থাৎ কেউ দায় এড়াতে পারবেন না। সবাই থাকবেন এক সুতোয় গাঁথা।
এই অ্যাপের নামে কোনও ‘শ্রী’ টাইপের টিপিক্যাল ব্যাপার নেই। পুরোটাই সাদামাঠা। ফিল্ড ইনস্পেকশন- মনিটরিং অ্যান্ড সুপারভিশন মোবাইল অ্যাপ। ভার্সন ১.০.০।
কদিন আগে নবান্নে এক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'সরকারি সম্পত্তিকে কেউ যেন নিজের জমিদারি না ভাবেন। এটা জনগণের অর্থ। তাই সময়ের কাজ সময়ে করতেই হবে'। বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের পাইপ লাইন নিয়ে যাওয়ার কাজে পিএইচই দফতরের গড়িমসি নিয়ে ওই বৈঠকে কড়া হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কাজে গাফিলতির অভিযোগে ১৫৫ জন ঠিকাদার, ১৯ জন ইঞ্জিনিয়রকে শোকজ করার নির্দেশও দিয়েছিলেন। নবান্নের এক কর্তার মতে, এই বিন্দুতেই সিন্ধু ধরা আছে। মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব এই সব পদক্ষেপে স্পষ্ট।