মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শেষ আপডেট: 16th January 2025 15:01
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মেদিনীপুরে প্রসূতি-মৃত্যু কাণ্ডে সিআইডি তদন্তের পাশাপাশি সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, সাংবাদিক বৈঠক করে সে অবস্থান স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ডের কথা ঘোষণা করেন তিনি (12 Doctors Suspended)। নাম করে করে প্রত্যেকের গাফিলতি চিহ্নিত করেন নবান্নের বৈঠকে।
পাশাপাশি তিনি এদিন বলেন, ওষুধের ডেট পেরিয়ে যাচ্ছে কিনা বা তা ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা, তা সবসময় মনিটর করা হয়। যে স্যালাইন কাঠগড়ায়, তা এখনও অন্য একাধিক রাজ্যে চলছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
আপাতত মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ১২ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, 'মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ওই বিভাগের আরএমও ডক্টর সোমেন দাসকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সিআইডি এর পরে বাকি তদন্ত করবে। সেই সঙ্গে ডক্টর দিলীপ কুমার পাল, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডক্টর হিমাদ্রী নায়েক, ডক্টর মহম্মদ আলাউদ্দিন, ডক্টর জয়ন্ত কুমার রাউত (এমএসভিপি), ডক্টর পল্লবী ব্যানার্জী (সিনিয়র আরএমও), ডক্টর মৌমিতা মণ্ডল (পিজিটি) ডক্টর ভাগ্যশ্রী কুণ্ডু (পিজিটি), ডক্টর সুশান্ত মণ্ডল (ফার্স্ট ইয়ার পিজিটি), ডক্টর পূজা সাহা (ফার্স্ট ইয়ার পিজিটি), ডক্টর মনীশ কুমার (ফার্স্ট ইয়ার পিজিটি), ডক্টর জাগৃতি ঘোষ (সেকেন্ড ইয়ার পিজিটি)-- সবাইকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, 'যাঁরা সেদিন দায়িত্বে ছিলেন, যাঁদের জন্য এই কাণ্ড হয়েছে, তাঁদের রাখা যাবে না। তাঁদের হাতে অন্য রোগীরও ক্ষতি হতে পারে। সেই ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।' মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'মানুষের জবাব চাওয়ার অধিকার আছে। যেখানে অন্যায় হয়, সেখানে কথা উঠবেই। আমরা যেমন চিকিৎসকদের প্রতি সহানুভূতিশীল, তেমনি মানুষের দিকটাও দেখতে হবে। তাই তদন্তের সমস্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
মুখ্যসচিব রিপোর্ট পড়ে এদিন বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন, সার্জারির সময়ে সিনিয়র চিকিৎসকদের তরফে যে যে বিষয় মেনে চলার কথা ছিল, তার অনেকটাই মানা হয়নি বলে জানা গেছে। মুখ্যসচিব জানান, দুটি রিপোর্টেই মেদিনীপুরে চিকিৎসকদের গাফিলতির তথ্য উঠে এসেছে। সেদিন আরএমও এবং কল ডিউটিতে যে ডাক্তাররা ছিলেন তাঁরা ওটিতে দেখতে যাননি। চিকিৎসক সৌমেন দাসকে ডাকা হলেও তিনি একবার দেখেই চলে গিয়েছিলেন। জুনিয়র ডাক্তারদের নিয়ে অপারেশন করা হয়েছিলয অ্যানাস্থেসিয়া সিনিয়র ডাক্তারদের দিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। সেটাও পিজিটিকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়ায় গাফিলতি ছিল। এমনকী রোগীর বাড়ির লোককে দিয়ে জোর করে মুচলেখাও লেখানো হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন চিকিৎসকদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ৮ ঘণ্টা যে ডিউটি আওয়ার রয়েছে চিকিৎসকদের, তা অনেকেই পালন করেন না। সেই সময়ের মধ্যেই তাঁরা বেসরকারি জায়গায় চিকিৎসা চালান। এটা বরদাস্ত করা হবে না বলে জানান তিনি।
শুধু তাই নয়, একটি সরকারি হাসপাতালের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সেখানে কয়েক দিন আগে এক বড় মাপের সাংবাদিকের চিকিৎসা চলছিল, মুখ্যমন্ত্রী দেখতেও গিয়েছিলেন। সেখানে আচমকা তিন চিকিৎসক ঢুকে বলেন, 'আপনার ক্রিয়েটিনিন এত হাই, ডায়ালিসিস করতে হবে!' এমন আচরণ কোনও ডাক্তারের থেকে কাম্য নয় বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, 'বড় ডাক্তাররা তো দেখছিলেন ওই রোগীকে, ভালও হচ্ছিলেন তিনি। সেখানে আচমকা সব না জেনে গিয়ে একটা মন্তব্য করা উচিত নয়। এতে রোগীর মনের উপর চাপ পড়ে। এই ধাক্কা সবাই সামলাতে পারেন না।'
স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ নিগমকে এদিন তিনি নির্দেশ দেন, 'কোনও জুনিয়র ডাক্তার যেন একা রোগীর কাছে না যান। সিনিয়র ডাক্তাররাই যেন সঙ্গে করে নিয়ে যান তাঁদের। নইলে তাঁরা দুম করে ঢুকে কী বলে দেবেন, তার খারাপ প্রভাব হতে পারে। সব কেসেই সিনিয়ররা সঙ্গে থাকবেন জুনিয়রদের। সিস্টাররা তো থাকবেনই।'
এখানেই শেষ নয়। তিনি দাবি করেন, রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে পরিকাঠামোর কোনও অভাব নেই। তার পরেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে অবনতি, তার জন্য পরীক্ষা ব্যবস্থাকে দায়ী করেন মুখ্যমন্ত্রী। কীভাবে সঠিক ডাক্তার তৈরি করা যায়, তাই নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। একটি বিদেশি সংস্থার সঙ্গে কোলাবরেশন করে ওয়ার্কশপ করার কথাও ব্যাখ্যা করেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ।