একুশের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।
শেষ আপডেট: 20th July 2024 13:52
দ্য ওয়াল ব্যুরো: '...অশ্রু সজল রক্তে লেখা নাম, শহীদ স্মরণে রইলো মোদের হাজার হাজার সেলাম।'-- একুশে জুলাইয়ের আগে এমনই বার্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনে করিয়ে দিলেন ১৯৯৩ সালের সেই রক্তাক্ত ইতিহাস।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বার্তা শুরু করেন, 'আগামীকাল আবার একুশে!'-- একথা বলে। তিনি লেখেন, '২১শে জুলাই বাংলার ইতিহাসে রক্তঝরা এক দিন। অত্যাচারী সিপিআইএম-এর নির্দেশে সেদিন চলে গিয়েছিল তরতাজা ১৩টি প্রাণ। আমি হারিয়েছিলাম আমার ১৩ জন সহযোদ্ধাকে। তাই ২১শে জুলাই আমার কাছে, আমাদের কাছে একটা আবেগ। ২১শে জুলাই আজ বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অন্তরঙ্গ অংশ।'
এর পরেই নেত্রীর বক্তব্য, 'প্রতি বছর এই ঐতিহাসিক দিনে শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় আমরা বীর সেই শহিদদের তর্পণ করি। শুধু তাঁরাই নন, দেশ ও দশের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের সবাইকেই এই দিনে আমরা স্মরণ করি।'
তিনি লেখেন, 'সেই সঙ্গেই আমরা এ দিনটিকে 'মা-মাটি-মানুষ দিবস' হিসেবে পালন করি; নির্বাচনে আমাদের যে গণতান্ত্রিক জয় তাকে মানুষের উদ্দেশে উৎসর্গ করি। সেজন্যও এদিন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।'
শেষে সকলকে আমন্ত্রণ জানানোর পালা। তিনি লেখেন, 'ধর্মতলায় এবারের শহীদ স্মরণ তথা মা-মাটি-মানুষ দিবস অনুষ্ঠানে আমি বাংলার সকল মানুষকে আমন্ত্রণ জানাই। আপনাদের সবার সাগ্রহ উপস্থিতিতে এবারের সমাবেশও অন্যান্যবারের মতো সাফল্যমন্ডিত হবে, এই বিশ্বাস আমি রাখি।'
আগামীকাল আবার একুশে!
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) July 20, 2024
২১শে জুলাই বাংলার ইতিহাসে রক্তঝরা এক দিন। অত্যাচারী সিপিআইএম-এর নির্দেশে সেদিন চলে গিয়েছিল তরতাজা ১৩টি প্রাণ। আমি হারিয়েছিলাম আমার ১৩ জন সহযোদ্ধাকে। তাই ২১শে জুলাই আমার কাছে, আমাদের কাছে একটা আবেগ। ২১শে জুলাই আজ বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অন্তরঙ্গ অংশ।…
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটে জেতার পরে রাজ্যের চার কেন্দ্রে উপনির্বাচনেও সবুজ ঝড় বয়ে গেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে বিজেপি। দুই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভের পর ২১ জুলাইকে সামনে রেখেই তৃণমূলের প্রথম বড় জনসভা হতে চলেছে। ফলে এবারের সভায় রেকর্ড মানুষের জমায়েত করাতে চাইছে শাসকদল।
শুক্রবার ভিক্টোরিয়া হাউজ়ের কাছে একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ পরিদর্শনে এসেছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল-সহ পুলিশের পদস্থ কর্তারা। শুধু মঞ্চই নয়, আশপাশের চত্বরও ঘুরে দেখেন পুলিশ কর্তারা। মূলত ভিআইপিদের বসার জায়গা, সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের ভিড় কোথায় থাকবে সেই সব বিষয়গুলি খতিয়ে দেখেন কলকাতার নগরপাল। একুশে জুলাই শহরে কয়েক লাখ মানুষের সমাবেশ হয়। তাই বিশাল ভিড়ের মধ্যে নিরাপত্তায় যাতে কোনও খামতি না থাকে, তা নিশ্চিত করতে তৎপর কলকাতা পুলিশ।
এদিন মঞ্চ পরিদর্শনের পর বিনীত গোয়েল জানান, প্রতি বছরের মত এবারও তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যা হল নিরাপত্তা, যান-চলাচল ও আইন-শৃঙ্খলা। পুলিশের তরফে অনেকদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
২১ জুলাই যান-চলাচল এবং শহরের সাধারণ মানুষের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেই বিষয়টির দিকেও নজর রাখছে কলকাতা পুলিশ। কলকাতার নগরপালের কথায়, "ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য পুলিশ-প্রশাসন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এই বছর যাবতীয় পরিস্থিতি নজরে রাখতে কলকাতা পুলিশের বিশাল বাহিনীর ব্যবস্থা রয়েছে। যে কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হলে আমরা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত।” এবছর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী রবিবার দিনভর বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রেও প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে পুলিশ। বৃষ্টি কিংবা যে কোনও সমস্যায় অনুষ্ঠানে যাতে কোনও বিঘ্ন হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন বিনীত গোয়েল।
শুক্রবার থেকেই কলকাতায় আসতে শুরু করে দিয়েছেন বিভিন্ন জেলার তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা। শনিবার এবং অবশ্যভাবে রবিবার সকাল থেকে যে কলকাতার রাস্তায় চাপ বাড়বে তা বলাই বাহুল্য। তৃণমূলের লক্ষ্য উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি থেকে বেশি সংখ্যক কর্মী-সমর্থক আনা। আর তাঁদের থাকার জন্য নেতাজি ইন্ডোর, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, উত্তীর্ণ, গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, সল্টলেক স্টেডিয়াম, ইকো পার্ক এবং সেন্ট্রাল পার্কে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উল্টোরথের দিনেই একুশে জুলাইয়ের খুঁটিপুজো সেরে নেয় তৃণমূল। ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে প্রতিবারের মতোই খুঁটি পুজোর আয়োজন করেছিল শাসক শিবির। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুব্রত বক্সি, জয়প্রকাশ মজুমদার-সহ তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব।
এবারের ২১ জুলাইয়ে মূল মঞ্চের আয়তন ৫২/২৪ ফুট। এখানে থাকবেন শীর্ষ নেতারা, সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রী ও আমন্ত্রিতরা। এছাড়া থাকছে আরও একটি মঞ্চ যেখানে বসবেন কাউন্সিলররা। এই মঞ্চের আয়তন হতে চলেছে ৪৮/২৪ ফুট। পাশাপাশি আরও একটি তৃতীয় মঞ্চ থাকবে যেখানে শহিদ পরিবারের সদস্যদের বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেই মঞ্চের আয়তন ৪০/২৪ ফুট। মূল মঞ্চে ওঠার জন্য সিঁড়ি নয়, থাকতে পারে র্যাম্প, যার উচ্চতা হবে ১২ ফুটের মতো।