মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদী
শেষ আপডেট: 12 December 2024 17:37
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এক দেশ এক ভোট (One Nation One Vote) প্রস্তাবে বৃহস্পতিবার অনুমোদন দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভা। সরকারি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, সংসদের চলতি শীতকালীন অধিবেশনেই ওই বিল পেশ করা হতে পারে। দ্য ওয়ালে এই খবর সবার আগে প্রকাশিত হয়। তার পরই কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
এদিন বিকেলে এক্স হ্যান্ডেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিরোধীরা সঙ্গত উদ্বেগ জানালেও এক দেশ এক ভোট বিল (One Nation One Vote) নিয়ে বুলডোজার চালাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এটা শুধু অসাংবিধানিক নয়, এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী”।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “এটি কোনও সুষ্ঠুভাবে বিবেচিত সংস্কার নয়; এটি একটি স্বৈরাচারী পদক্ষেপ, যা ভারতের গণতন্ত্র এবং সাংবিধানিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে”। তৃণমূলনেত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দলের সাংসদরা এই এই জনবিরোধী বিলটির (One Nation One Vote) কঠোরভাবে বিরোধিতা করবেন। তাঁর কথায়,“বাংলা কখনওই দিল্লির একনায়কতন্ত্রী সিদ্ধান্তের কাছে নত হবে না। এই সংগ্রাম ভারতের গণতন্ত্রকে স্বৈরতন্ত্রের কবল থেকে রক্ষা করার লড়াই!”
The Union Cabinet has bulldozed their way through with the unconstitutional and anti-federal One Nation, One Election Bill, ignoring every legitimate concern raised by experts and opposition leaders.
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) December 12, 2024
This is not a carefully-considered reform; it's an authoritarian imposition…
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী গত সেপ্টেম্বর মাসে এক দেশ এক ভোট প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে। সেই প্রস্তাব তার পর বিল আকারে মন্ত্রিসভায় পেশ করা হয়। বৃহস্পতিবার সেই বিলেও সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
কৌশলগতভাবে এজন্য বুধবার থেকে ক্ষেত্র প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল বিজেপি। বুধবার কোবিন্দ বলেছিলেন, “এক দেশ, এক ভোট” উদ্যোগ (One Nation One Vote) একেবারেই জাতীয় স্বার্থে, এটি কোনও নির্দিষ্ট দলের জন্য নয়। তিনি এও বলেন যে অর্থনীতিবিদদের মতে, এই প্রস্তাব কার্যকর হলে দেশের জিডিপি ১ থেকে ১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে।
কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানও এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, "বারবার নির্বাচন হলে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রীরা, সাংসদ এবং বিধায়কদের প্রচারের জন্য সময় ব্যয় করতে হয়, যা উন্নয়নমূলক কাজ থমকে দেয়।" আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দাবি, এটি ভারতের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী এবং অংশগ্রহণমূলক করে তুলবে।”
উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি প্রাথমিক পর্যায়ে লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন একযোগে করার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি, স্থানীয় নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণের জন্য ১০০ দিনের মধ্যে সমন্বয় করার কথা উল্লেখ করেছে।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এ কথা বললেও এ ব্যাপারে দেওয়াল লিখন আগে থেকেই স্পষ্ট ছিল। তৃণমূল এবং কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলি যে প্রাণপণে এই বিলে বাধা দেবে তা আগাম আন্দাজ করা যাচ্ছিল। বস্তুত তা শুরুও হয়ে গিয়েছে।
এর আগে কোবিন্দ কমিটিকে চিঠি দিয়ে মমতা (Mamata Banerjee) তাঁর আপত্তির বিষয়গুলি এক দুই করে জানিয়েছিলেন। তাঁর প্রথম প্রশ্ন হল, ‘এক দেশ’ বলতে কী বোঝাতে চাইছে মোদী সরকার? সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক কিংবা ঐতিহাসিক পটভূমিতে এক দেশের তবু না হয় একটা অর্থ হয়। কিন্তু ভারতের সংবিধানের শর্ত অনুযায়ী এক দেশের অর্থ তাঁর কাছে বোধগম্য নয়।
মমতার এও প্রশ্ন, সংবিধানে কি ‘এক দেশ এক সরকারের’ নীতি অনুসরণ করার কথা বলা রয়েছে? তাঁর মতে, ভারত একটি যুক্তরাষ্ট্র। সংবিধানে সেই শর্তের কথা রয়েছে। কোথাও এক দেশ এক সরকারের কথা বলা নেই। এই মৌলিক বিষয়টি এড়িয়ে এক দেশ এক ভোটের কথা ভাবাই যায় না।
অতীতে বাজপেয়ী জমানায় পর পর দু’বার কেন্দ্রের সরকারের পতন ঘটেছিল। তার ফলে সাধারণ নির্বাচন তথা লোকসভা ভোট অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, লোকসভার সঙ্গে সব রাজ্যের বিধানসভা ভোট করবেন কী করে? ১৯৫২ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের সময় থেকে কিছুদিন তা করা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য ও জাতীয় স্তরে রাজনৈতিক পালাবদলের কারণে সেই তালমিল ভেঙে গিয়েছে। তাঁর এও প্রশ্ন, যে সব রাজ্যে পাঁচ বছরের জন্য সরকার গড়তে মানুষ ভোট দিয়েছে, এক সঙ্গে ভোট করাতে গেলে সেখানে সরকার ভেঙে দিতে হবে। তা হয় নাকি!
তৃণমূলনেত্রীর কথায়, রাজ্যস্তরে নির্বাচনের বিষয়আশয় এক রকম থাকে। জাতীয় স্তরে থাকে অন্যরকম। এক সঙ্গে ভোট করাতে গেলে এই ফারাকটা থাকবে না। কোনও ভাবে জাতীয় স্তরের বিষয় দিয়ে রাজ্যের ভোট করানো যায় না।
বৃহস্পতিবারও তৃণমূলনেত্রী পরিষ্কার বোঝাতে চেয়েছেন, এক দেশ এক ভোটের ধারণা নিয়েই তাঁর সন্দেহ রয়েছে। মোদী সরকারের উদ্যোগ দেখে বোঝা যাচ্ছে, স্বৈরাচারী ব্যবস্থা গণতন্ত্রকে কুক্ষিগত করতে চাইছে। তিনি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বলেই এই প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই স্বর বিক্ষিপ্ত ধরে নিলে ভুল হবে। ইতিমধ্যে তাঁকে ইন্ডিয়া জোটের নেত্রী করার জন্য রব উঠেছে। মনে করা হচ্ছে, অচিরে এই আপত্তি সামগ্রিক ভাবে ইন্ডিয়া জোটের বক্তব্য হয়ে উঠবে।