শেষ আপডেট: 3rd August 2024 19:41
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শনিবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে আন্দোলিত গোটা রাজ্য। কেন? কারণ, দেখা গিয়েছে, রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি বন দফতরের স্থানীয় রেঞ্জ অফিসার মনীষা সাউকে যা নয় তাই বলছেন। মহিলা অফিসারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে অখিল বলছেন, ‘বেয়াদব’, জানোয়ার!..আপনি আমাকে চেনেন না! এসডিপিওকে সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলেছিলাম। এমন ডাং দিয়ে পেটাব না, বুঝবেন।"
কোনও মহিলা অফিসারকে এভাবে কথা বলা যে বেয়াদব ও নারীবিদ্বেষী তা নিয়ে সংশয় নেই। কেউই এভাবে কোনও মহিলার সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। তার উপর অখিল গিরি আবার মন্ত্রী।
রাজ্যের বর্তমান বনমন্ত্রী হলেন বীরবাহা হাঁসদা। তাঁর দফতরের মহিলা অফিসারের সঙ্গে রাজ্যের প্রবীণ মন্ত্রীর এমন কুৎসিত আচরণ দেখে বীরবাহাও স্তম্ভিত। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ব্যাপারটা তিনি অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবেন।
এখন কৌতূহলের বিষয় হল, অখিল গিরির ভবিষ্যৎ কী?
পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতিতে অখিল গিরি বরাবরই শুভেন্দু অধিকারী বিরোধী নেতা বলে পরিচিত। বস্তুত শুভেন্দুকে বাগে রাখতেই কৌশলগত ভাবে অখিলের রাজনৈতিক ওজন বাড়ানো হয়েছিল। তাঁকে রাজ্য মন্ত্রিসভায় স্থান দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয় অখিলের ছেলে সুপ্রকাশ গিরিকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁকে কাথি পুরসভার চেয়ারম্যানও করা হয়।
কিন্তু সেই অখিলের সাংগঠনিক ব্যর্থতার কারণে দলের শীর্ষ নেতারা এমনিতেই তাঁর উপর অসন্তুষ্ট। তা ছাড়া অখিলের বিরুদ্ধে গোষ্ঠী রাজনীতির অভিযোগ রয়েছে। কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, মন্ত্রিসভার আসন্ন রদবদলে অখিলকে মন্ত্রিপদ থেকে সরানোর সম্ভাবনা আগে থেকেই ছিল। শনিবারের ঘটনা তাতে আরও ইন্ধন জোগাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বড় কথা হল, এই প্রথম নয়। এর আগে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেও বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন। সেই সময়ে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক থেকে অখিলকে সতর্ক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ এক নেতা এদিন বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়—দুজনেই মধ্যমেয়াদে শুদ্ধিকরণ চাইছেন। যাতে ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা যায়। একুশের মঞ্চ থেকেও মমতা ও অভিষেক দলের প্রতি সেই মর্মেই পই পই করে বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু শনিবার অখিল যা বলেছেন, যে আচরণ দেখিয়েছেন, তা মমতা-অভিষেকের সেই উদ্দেশ্যের একেবারেই উল্টো।
তাজপুরে সমুদ্র সৈকতে গাছ কেটে বেআইনি ভাবে দোকানপাট বসানো হয়েছিল। সেই দোকানপাটগুলোই ভেঙে দেন স্থানীয় রেঞ্জ অফিসার মনীষা সাউ। হতে পারে স্থানীয় মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন অখিল। কিন্তু তাঁকে যে মূর্তিতে দেখা গিয়েছে, একজন মহিলা অফিসারকে তিনি যেভাবে হেনস্থা করেছেন তাতে তাঁর উপর দলের উপর সারির নেতারা অনেকেই চটেছেন। এর পর মন্ত্রিসভা থেকে অখিলের অপসারণ হয়তো এখন শুধু সময়ের অপেক্ষামাত্র।