মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ মঞ্চে। ফাইল ছবি।
শেষ আপডেট: 21st July 2024 08:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজস্ব পাটিগণিত কী ছিল ভিন্ন প্রশ্ন, তৃণমূলের বহু নেতা-মন্ত্রী ধরে নিয়েছিলেন এবার লোকসভা ভোটে ২২টি আসন পাওয়াও মুশকিল। অর্থাৎ উনিশের লোকসভা ভোটে যে কটা আসনে জিতেছিল তৃণমূল, তাও ধরে রাখা এবার কঠিন হবে বলে ধারণা ছিল তাঁদের। ফল হয়েছে উল্টো। বিজেপিকে ধরাশায়ী করে এবার লোকসভা ভোটে ২৯টি আসনে জিতেছে তৃণমূল। প্রায় ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে জোড়াফুল।
এবারের একুশ জুলাই তাই উদযাপনের। শনিবার সন্ধেয় ধর্মতলায় একুশের প্রস্তুতি দেখার পর মমতাও বলেছেন, ‘যত নির্বাচন হয়.. মা-মাটি-মানুষকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য আমরা একুশে জুলাইকেই বেছে নিই’। তবে কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ সূত্রের মতে, এবার একুশে জুলাইয়ে বকুনিও জুটতে পারে। কারও নাম করে হয়তো কিছু বলবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মোটের উপর হুঁশিয়ারি থাকতে পারে। কারণ, দলের একাংশ বড়-মেজ-ছোট নেতার আচরণে তিনি মোটেও খুশি নন।
কালীঘাট ঘনিষ্ঠদের মতে, এবারের শহিদ সমাবেশের প্রেক্ষাপট গত বারের তুলনায় ভিন্ন। গত বছর দলের মূল অভিমুখ তথা লক্ষ্যই ছিল লোকসভা ভোটে বিজেপিকে ঠেকাতে মরিয়া চেষ্টা করা। তাই গতবার মমতার বক্তৃতায় অনেক বেশি প্রাধান্য পেয়েছিল, কেন্দ্রের আর্থিক অবরোধ, সিবিআই-ইডির মতো এজেন্সির অপব্যবহারের অভিযোগ ইত্যাদি। একই সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাংলার বিরুদ্ধে কেন্দ্রের বঞ্চনাকে একুশের মঞ্চ থেকেই নতুন উচ্চতা দিয়েছিলেন। বকেয়া আদায়ের দাবিতে দিল্লি চলোর ডাক দিয়েছিলেন তিনি। বঞ্চনা ও বকেয়া আদায়ের দাবি এবারও যে উঠবে না তা নয়। বরং বঞ্চনার জবাব যে মানুষ এই ভোটে দিয়েছেন, তা দাবি করতে পারেন অভিষেক। তবে অনেকের মতে, সেটাও মুখ্য হয়ে উঠবে না। মুখ্য হয়ে উঠতে পারে ‘সংস্কারের’ বিষয়আশয়।
তা কীরকম?
মমতার ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, দলের জেলা ও রাজ্য স্তরের অনেক নেতা আছেন যাঁরা মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন। এই ব্যাপারটা নিয়ে দিদি ও অভিষেক দুজনেরই অসন্তোষ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিয়মিত জেলা সফরে যান। অথচ বহু মন্ত্রী বা নেতা রয়েছেন, যাঁরা নিজের জেলাতে ভাল করে ঘোরেন না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন না। কর্মীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন বা এক গোষ্ঠী তৈরি করে চলেন। সরকার গ্রাম ও গরিবের সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করলেও এই বিচ্ছিন্নতার জন্য স্থানীয় স্তরে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তৈরি হচ্ছে। তা ছাড়া নিচুতলায় এক শ্রেণির নেতা বল্গাহীন লোভ আর দুর্নীতিও চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। ছাব্বিশের ভোটের আগে এদের মধ্যে কয়েকজনকে শায়েস্তা না করলেই নয়। দলের ওই নেতা আরও বলেন, মনে রাখতে হবে যে এখন শিগগির কোনও ভোট নেই। ফলে এটাই মোক্ষম সময় বার্তা বা ঝাঁকুনি দেওয়ার। সেটাই করতে পারেন দিদি ও অভিষেক।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, দীর্ঘদিন ধরে কোনও দল ক্ষমতায় থাকলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এ ব্যাপারে প্রচলিত অনেক প্রবাদও রয়েছে। অতীতে বাম জমানাতেও তাই হয়েছিল। তৃণমূলও এখন তা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এবং সে কারণেই এবারের একুশে দলের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।