মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
শেষ আপডেট: 13th November 2024 20:24
রফিকুল জামাদার
লোকসভা ভোটের সময়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন এ বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আবাস যোজনার টাকা ঢুকে যাবে উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে। অনেকের ধারণা ছিল, এ ঘোষণা হয়তো জুমলা। রাজনীতিতে বা ভোটের প্রচারে যেমন হয় আর কি!
কিন্তু সে ধারণা ভেঙে দিয়ে বড়দিনে অর্থাৎ ক্রিসমাসের মরশুমে সান্তা হতে পারে সরকার। রাজ্যের প্রায় ১১ লক্ষ ৩২ হাজার গরিব পরিবার আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির টাকা সেই সময়ে পেতে পারেন। বুধবার সেই পদক্ষেপের কাউন্টডাউনের খসড়া তৈরি করে পাঠানো হল জেলায় জেলায়।
কেমনতর সেই কাউন্টডাউন?
আবাস যোজনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল প্রকৃতপক্ষে যাদের পাকা ঘর জরুরি তাদের টাকা পাইয়ে দেওয়া। এই তালিকা ত্রুটিমুক্ত রাখা কঠিন বিষয়। কারণ, গ্রাম ও পঞ্চায়েত স্তরে স্বজনপোষণের শঙ্কা থেকেই যায়। সেই কারণেই নবান্ন এবার বার বার তালিকা পরীক্ষার পথে হাঁটছে।
বুধবার সব জেলাকে নির্দেশ পাঠিয়ে বলা হয়েছে, যে তালিকা তৈরি হয়েছে তা হাতে নিয়ে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা শেষ করতে হবে। অর্থাৎ তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা সত্যিই কাঁচা বাড়িতে থাকে কিনা, তাদের সত্যিই আবাসের টাকা প্রয়োজন কিনা তা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, নবান্ন পষ্টাপষ্টি জানিয়ে দিয়েছে এতে ভুল হলে বা পরে এই তালিকা চ্যালেঞ্জ হলে ব্লক স্তরের অফিসারকে তার দায় নিতে হবে।
এভাবে বাড়ি বাড়ি ঘুরে তালিকা প্রাথমিক ভাবে চূড়ান্ত করে ফেলতে হবে ২৮ নভেম্বরের মধ্যে। ২৯ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই তালিকা ব্লক, এসডিও ও জেলা শাসকের অফিসে টাঙিয়ে রাখতে হবে। অর্থাৎ তালিকা নিয়ে কোনও ওজোর আপত্তি থাকলে তা ওই সময়ের মধ্যে জানানো যাবে।
গ্রাম স্তরে এই তালিকাকে এর পর ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে অনুমোদন দেবে গ্রাম সভা। ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে সেই তালিকাকে অনুমোদন দেবে ব্লক স্তরের কমিটি। ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা স্তরের কমিটিকে জেলার সামগ্রিক তালিকায় অনুমোদন দিতে হবে।
অর্থাৎ তালিকা এবার চূড়ান্ত। সুতরাং ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ফান্ড রিলিজ তথা উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে প্রথম কিস্তির টাকা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা রেডি করে ফেলতে হবে। মানে এর পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত মতো যে কোনওদিন তহবিল ছাড়ার ঘোষণা করে দেওয়া হবে।
প্রশাসনিক কর্তাদের মতে, রাজ্য স্তরে উপভোক্তাদের সরাসরি টাকা পাইয়ে দেওয়ার জন্য এত বড় প্রকল্প এর আগে হয়নি। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে প্রায় ২ কোটি মহিলাকে প্রতি মাসে টাকা দেওয়া হয় ঠিকই। কিন্তু এক লপ্তে প্রথম কিস্তির টাকা হিসাবে প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ পরিবারকে ৬০ হাজার টাকা করে দেওয়া কোনও রাজ্য সরকারের কাছে বড় বিষয়। কেন্দ্র রাজ্য সংঘাতের আবহে তেমনই একটা মাইলফলক তৈরি হতে চলেছে বাংলায়। চ্যালেঞ্জ শুধু একটাই, তা হল উপভোক্তাদের তালিকাকে ত্রুটিমুক্ত, স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত রাখা।