পার্ক সাকার্সের ইফতার পার্টিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শেষ আপডেট: 18th March 2025 19:10
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ফুরফুরা শরিফের (Furfura Sharif) রাজনৈতিক সমীকরণ কি বদলে যেতে চলেছে? সোমবারের পর মঙ্গলবারও ইফতার পার্টিতে (Iftar party) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে নওসাদ সিদ্দিকির (Nawsad Siddiqui) তুতোভাই কাসেম সিদ্দিকি এবং নাজিমুদ্দিন হোসেনকে একসঙ্গে দেখা গেল।
সোমবার এই দুই মূর্তিমানকে দেখা গেছিল ফুরফুরার মঞ্চে। তবু তা সঙ্গত ছিল। কিন্তু কলকাতা পুরসভা আয়োজিত ইফতার পার্টির মঞ্চে যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে কাসেম সিদ্দিকিকে দেখা গেল, তখন কৌতূহল আর বাধ মানতে চাইল না। মঞ্চের ফ্রেমটাই যেন রাজনৈতিক ভাবে অর্থবহ। মুখ্যমন্ত্রীর ডান দিকে বসে রয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। আর তাঁর বাম পাশে কাসেম সিদ্দিকি ও নাজিমুদ্দিন। গোটা অনুষ্ঠানের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দু’জনকে কথা বলতে দেখা গেল। কাসেমই ডান দিকে ঝুঁকে বেশিরভাগ সময়ে বলে যাচ্ছিলেন। আর মুখ্যমন্ত্রীকে উত্তর দিতে দেখা যাচ্ছিল।
কে এই কাসেম সিদ্দিকি?
কাসেম হল ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির তুতো ভাই। মানে ভাঙরের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকিরও ভাই। একদা রাজ্য পুলিশ নওসাদ সিদ্দিকিকে গ্রেফতার করার পর এই কাসেমই ক্ষোভের জ্বালামুখ খুলে দিয়ে যা তা কথা বলেছিলেন নবান্নের উদ্দেশে। তিনি নওসাদ ও আব্বাসের অতিশয় ঘনিষ্ঠ বলেই ফুরফুরা জানে।
সেই কারণেই এদিনের ইফতারের মঞ্চ দেখে রাজ্য রাজনীতিতে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এই কৌতূহল দুই প্রকার। এক, তাহলে কি তৃণমূলের সঙ্গে সখ্য তৈরি হল আব্বাস-নওসাদের। সেই কারণেই কি দূত পাঠিয়েছিলেন। এবং দুই, কাসেম যদি পৃথকভাবে তৃণমূলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন, তাহলে কি বুঝতে হবে নওসাদের আইএসএফে ভাঙন ধরেছে? ঘটনা হল, ইফতারের মঞ্চে কাসেমের এই উপস্থিতি নিয়ে নওসাদ যেন কৌশলগত ভাবে নীরবতা পালন করছেন। তবে, এই দুই পরিস্থিতিই তৃণমূলের জন্য যে ইতিবাচক তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
একসময়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ইফতার পার্টিতে দেখা যেত ফুরফুরার পীরজাদা তহ্বা সিদ্দিকিকে। যদিও সোমবারের পর থেকে তহ্বার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দূরত্বের ছবিটা আরও স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফুরফুরায় মুখ্যমন্ত্রীর ইফতার পার্টি শেষ হওয়ার আগেই সেখান থেকে বেরিয়ে যান তহ্বা। এমনকী নাম না করে কাসেমকে বিঁধেওছিলেন তহ্বা।
তার ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পার্ক সার্কাসে ফিরহাদ হাকিমের ইফতার পার্টিতে সারাক্ষণই মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দেখা গেল কাসেমকে। তবে এ ব্যাপারে ফোন করা হলেও নওসাদের কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। প্রতিক্রিয়া এলে প্রতিবেদনে আপডেট করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাজ্য সচিবালয়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ভাঙড়ের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ২২ মিনিট কথা বলেন ফুরফুরা শরিফের ছোট ভাইজান। তার এক সপ্তাহের মাথায় সোমবার ফুরফুরা সফরে গিয়েছিলেন মমতা। এই সব কিছুই এখন মেলানোর চেষ্টা করছেন পর্যবেক্ষকরা।
গোটা ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর ক্রেডিট দেখছেন ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা ভাঙড়ের তৃণমূল পর্যবেক্ষক শওকত মোল্লা। তিনি বলেন, "একটা সময় যারা তাঁকে নিয়ে কুৎসা করত, অপপ্রচার করত, আজ তারাই দিদির ডাকে সাড়া দিয়ে, সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে ইফতার মজলিশে আসছে। এটা নীতিগত জয় বলে মনে করি।"