শেষ আপডেট: 27th January 2025 21:01
সরকারি প্রকল্পের জন্য জোর করে জমি দখল করার পক্ষপাতী নন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় ক্ষমতায় আসার আগে থেকে এই একটা নীতিতে বরাবরই তিনি অনড়। তিস্তার উপর বিকল্প সেতু নির্মাণ করতে গেলে, প্রচুর মানুষকে উচ্ছেদ করতে হতে পারে। যে কারণে, করোনেশন ব্রিজের বিকল্প তৈরি ক্রমশ অপরিহার্য হয়ে উঠলেও সময় নিচ্ছিল নবান্ন। শেষমেশ ভারত-চিন সীমান্ত ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে হয়তো বরফ গলল।
তিস্তার উপর করোনেশন ব্রিজ উত্তর-পূর্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার লাইফলাইন। ভারত চিন সীমান্তে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বা সেনাবাহিনীর জন্য সরবরাহও এই পথেই যায়। গত কয়েক বছর ধরে অরুণাচল প্রদেশে ভারত-চিন সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ায় সীমান্তে পরিকাঠামো বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। একই কারণে জাতীয় স্বার্থে জরুরি হয়ে পড়েছে তিস্তার উপর বিকল্প সেতু বানানো। পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, সেই কারণেই দ্বিতীয় সেতু নির্মাণে সায় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পূর্ত দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, নতুন সেতু নির্মাণে আনুমানিক খরচ হবে ১১০০ কোটির কিছু বেশি টাকা। তা কেন্দ্র ইতিমধ্যে বরাদ্দ করেছে। নবান্নর সবুজ সঙ্কেতের পর এবার ডিটেল প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হবে।
করোনেশন ব্রিজটি ১৯৩৭ সালে রাজা ষষ্ঠ জর্জ এবং রানি এলিজাবেথের অভিষেক স্মরণে নির্মিত হয় এবং ১৯৪১ সালে সম্পূর্ণ হয়। এই ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৪ লক্ষ টাকা। এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তৎকালীন বেঙ্গল গভর্নর জন অ্যান্ডারসন।
স্থানীয় মানুষজন ব্রিজটিকে "বাঘপুল" নামে ডাকে, কারণ এর এক প্রবেশপথে দুটি বাঘের মূর্তি স্থাপিত রয়েছে। ব্রিজটি আজও উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের মূল ভূখণ্ডকে সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু। উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাশাপাশি দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলার সঙ্গে বাংলার বাকি অংশের সংযোগও এই ব্রিজের মাধ্যমে হয়। প্রয়োজনীয় সামগ্রী পরিবহণ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর চলাচল এই ব্রিজের উপর নির্ভরশীল।
তবে বয়সের ভার এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্রিজটির অবস্থা অত্যন্ত জীর্ণ। ২০১১ সালে ৬.৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে ব্রিজটিতে বড় ধরনের ফাটল দেখা দেয়। এর পর থেকে ব্রিজটির পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে।
রাজ্য সরকার ব্রিজটির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারদের একটি দল পাঠিয়েছিল। তারা জানায়, ব্রিজের মাঝখানে প্রায় ২.৫ ফুট দীর্ঘ ফাটল রয়েছে। এরপর থেকে ১৮ হাজার টনের বেশি ওজনের যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও বাস্তবে এই নিষেধাজ্ঞা খুব একটা মানা হয় না।
দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ির সাংসদ রাজু বিস্তা ও জয়ন্ত রায়ও নতুন ব্রিজ নির্মাণের দাবি তুলেছেন। রাজু বিস্তা কেন্দ্রীয় পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গডকড়ির সঙ্গে সাক্ষাত করে কিছুদিন আগে এ ব্যাপারে জোরালো দাবি করেছিলেন। পরে তিনি জানিয়েছেন, সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক বিকল্প সেতু নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। তবে জমি রাজ্য সরকার ও রেলের আওতায় থাকায় কাজ শুরু করতে সমস্যা হচ্ছে।
দুই সরকারের মধ্যে টানাপোড়েনের কারমে করোনেশন ব্রিজটি এখনও প্রতিদিন হাজার হাজার টন যানবাহন ও পণ্য পরিবহণের ভার বহন করছে। সেদিক থেকে নতুন উদ্যোগ ইতিবাচক।