মদন মিত্র।
শেষ আপডেট: 4th February 2025 12:27
ব্যাক স্ক্রিনের গল্পটা তৃণমূলের ভিতরে অনেকেরই জানা। গত ২৩ জানুয়ারি বর্ষীয়াণ শিল্পপতি তথা মোহনবাগানের এক কর্মকর্তার জন্মদিনের অনুষ্ঠান ছিল। তৃণমূলের বেশ কয়েক জন মন্ত্রী, নেতা, বিধায়ক আমন্ত্রিত ছিলেন সেখানে। নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন মদন মিত্রও। জোড়াফুল পরিবারে খবর, সেই অনুষ্ঠানেই দলের বর্তমান পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক বিষয়আশয় নিয়ে মনের রাগ উগরে দিচ্ছিলেন মদন। তার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ক্যামাক স্ট্রিট ও আইপ্যাক। দলের এক নেতার দাবি, মদন এমনকি এও বলতে থাকেন যে এরকম চলতে থাকলে, নিজের পথ দেখে নেব!
জানা গিয়েছে, জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েছিলেন মদন মিত্র। মুখ্যমন্ত্রী ব্যস্ত থাকায় সময় পাননি। তবে বইমেলার উদ্বোধনের দিন মেলা থেকে ফেরার সময়ে মদন মিত্রকে তাঁর গাড়িতে তুলে নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
কৌতূহলের বিষয় হল, এর পরেও হঠাৎ কেন সংবাদমাধ্যমকে ডেকে ‘ক্ষোভ’, ‘যন্ত্রণার’ কথা জানালেন মদন মিত্র? তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই মদনের একটি কথা দলের অনেকের কানে বাজছে। তা হল ‘ভাল মন্ত্রীর জন্য ১০ কোটি…’।
তৃণমূলের শীর্ষ সারির নেতাদের একাংশের মতে, মদন মিত্রর হয়তো মনে হচ্ছে যে রাজ্য রাজনীতিতে তিনি ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছেন। এমনকি এও শোনা যাচ্ছে, যে কামারহাটিতে তিনি বিধায়ক সেখানে অটো বা স্থানীয় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের উপরেও মদনের এখন প্রভাব কমে গেছে। তাঁর কথা তাঁরা শুনছেন না। তাই প্রাসঙ্গিকতা ফেরাতে মদন হয়তো ফের মন্ত্রী হতে চাইছেন।
একদা রাজ্যের ক্রীড়া ও পরিবহণ মন্ত্রী ছিলেন মদন মিত্র। চিটফান্ড গ্রেফতার হয়ে সাড়ে তিন বছর জেলে ছিলেন। তার পর জামিনে মুক্ত হলেও মদন মিত্রকে আর মন্ত্রিসভায় ফেরাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই থেকে মদনের মনে ক্ষোভ, অভিমান পুঞ্জীভূত হতে শুরু করে। মাঝে মধ্যেই তা সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো বিস্ফোরণ ঘটাতে দেখা যায়।
ছাব্বিশের ভোটের আগে রাজ্য মন্ত্রিসভায় একটা রদবদলের সম্ভাবনা নিয়ে সম্প্রতি জোরালো আলোচনা চলছিল। এমনকি এও শোনা যাচ্ছিল বর্তমান মন্ত্রীদের কয়েকজনকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে নতুন মুখ আনা হতে পারে। এ ব্যাপারে বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও শোনা যাচ্ছিল। ঘটনাচক্রে ঠিক এই সময়েই ফের ক্ষোভের জ্বালামুখ খুলতে দেখা গেল মদন মিত্রকে।
কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, মদন মিত্র অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সখ্য রেখে চলারও চেষ্টা এক সময়ে করেছিলেন। বছর কয়েক একবার ডায়মন্ড হারবারে এক অনুষ্ঠানে অভিষেকের সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মদন। অভিষেকের আপ্যায়নের ভূয়সী প্রশংসাও করেছিলেন। কিন্তু ঘটনা হল, সাংগঠনিক বা প্রশাসনিক ভাবে অকেজো কাউকে অভিষেক আর উঁচু পদ দেওয়ার পক্ষে নন। তিনি কর্মঠ লোক চান, কাজের রেজাল্ট চান। ওই নেতার কাজ দলের জন্য কতটা কার্যকরী সে ব্যাপারে পারফরমেন্স রিপোর্ট খতিয়ে দেখেন আই প্যাকের থেকে। সার্বিক এই সংস্কৃতিতেই মদন মিত্রের মতো পুরনো নেতারা অনেকেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছেন। এবং সেই কারণে হতাশায় ভুগছেন। তাঁদের সহজ নিশানা হয়ে উঠছেন অভিষেক ও আই-প্যাক।
সূত্রের খবর, মদন দুটি সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার পর আই প্যাকের এক কর্তা সোমবার ফোন করেছিলেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে। তৃণমূল মদনকে শো-কজ করবে কিনা তা জানতে চান।
এর পরই কালীঘাটের নির্দেশে আপাতত রণে ভঙ্গ দিয়েছেন মদন মিত্র। সংবাদমাধ্যমে আই প্যাকের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য সোমবার প্রথমে ইংরেজিতে একটি চিঠি লিখে ক্ষমা চেয়েছিলেন মদন। তাতে তিনি লিখেছিলেন, "কিছু ইলেকট্রনিক মিডিয়া আমার সম্পর্কে কিছু অপ্রীতিকর তথ্য প্রচার করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এর জন্য দুঃখিত, কারণ আমি জ্বরে ও অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলাম। একজন সিনিয়র তৃণমূল কর্মী হিসেবে আমি নিজেকে সংযত রাখতে পারিনি”।
কিন্তু মদনের এই চিঠিতে তুষ্ট হয়নি দল। বরং তাঁকে বলা হয়, এসব বাহানা বা অজুহাত চলবে না। কোনও সংবাদমাধ্যম তাঁর সম্পর্কে ইচ্ছাকৃত কোনও অপ্রীতিকর তথ্য প্রচার করেনি। তিনি যা বলেছেন, তাই দেখিয়েছে। তা ছাড়া যে সংবাদমাধ্যমের বিতর্ক অনুষ্ঠানে তৃণমূল এখন প্রতিনিধি পাঠায় না, সেই চ্যানেলের সাংবাদিককে ডেকে সাক্ষাৎকার দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলে দল। শেষমেশ বাংলায় চিঠি লিখে ক্ষমা চান মদন। তাতে আর জ্বর বা শরীর খারাপের কথা লেখেননি। সরাসরি ভুল স্বীকার করে নেন।