শেষ আপডেট: 8th July 2023 18:18
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পাবজি (PubG) খেলতে খেলতে আলাপ। তারপর প্রেম। সেই প্রেমের টানেই দেশ ছেড়েছিলেন যার সন্তানের জননী সীমা হায়দার (Seema Haider)। অবৈধভাবে সীমানা পেরিয়ে চলে এসেছিলেন ভারতে প্রেমিকের কাছে (Pakistani woman)। তারপর অবশ্য ধরাও পড়েছিলেন। গরাদের পিছনে ঠাঁই হয়েছিল তাঁর। কিন্তু জামিন পাওয়ার পর আর কিছুতেই নিজের দেশে ফিরতে চাইছেন না তিনি। উল্টে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, তিনি যেন তাঁর ভারতেই থাকার বন্দোবস্ত করে দেন।
একটি বেসরকারি সংবাদসংস্থার কাছে সাক্ষাৎকারের সীমা জানিয়েছেন, পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে আসার পর আর নিজের দেশে ফিরে যেতে চান না তিনি। কারণ, দেশে ফিরলেই এরপর পাথর ছুড়ে হত্যা করা হবে তাঁকে। ওই সাক্ষাৎকারের মারফত উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে সীমার আর্জি, 'দয়া করে আমাকে ভারতে শচীনের সঙ্গেই থাকতে দিন। যদি আপনারা আমাকে পাকিস্থানে ফেরত পাঠিয়ে দেন, তাহলে ওরা আমাকে পাথর ছুড়ে হত্যা করবে। পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার থেকে আমার কাছে ভারতে বসে মৃত্যুবরণ করাও শ্রেয়' জানিয়েছেন ৪ সন্তানের মা।
গত ৪ জুলাই হরিয়ানার বল্লভগড় এলাকা থেকে সীমা এবং তার প্রেমিক সচীনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। রেজিস্ট্রি করে বিয়ে ছাড়ার জন্য যে উকিলের দ্বারস্থ হয়েছিলেন যুগল, সেই উকিলই পুলিশে খবর দিয়েছিলেন। সেই ঘটনায় শচীনের বাবাকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিচারক অভিযুক্তদের ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও শনিবার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন সীমা,শচীন এবং তাঁর বাবা।
এই ঘটনা সামনে আসার পরেই গুলাম হায়দার নামে পাকিস্তানের বাসিন্দা এক ব্যক্তি নিজেকে সীমার স্বামী বলে দাবি করেন। ভিডিও বার্তা মারফত ভারত সরকারের কাছে স্ত্রী এবং সন্তানদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আর্জি জানান তিনি। কিন্তু তাঁর দাবি নস্যাৎ করে দিয়ে মহিলা জানিয়েছেন, বিগত চার বছর ধরেই আলাদা থাকেন তিনি এবং গুলাম।
তিনি আরও জানিয়েছেন, পাকিস্তানে প্রাক্তন স্বামী গুলাম হায়দারের হাতে নিয়মিত অত্যাচারিত হতেন তিনি এবং তাঁর সন্তানরা। গুলাম তাঁকে বেধড়ক মেরে মুখে লঙ্কাগুঁড়ো ছিটিয়ে দিত। সীমা জানিয়েছেন, তাঁকে বিয়ে করার পাশাপাশি তাঁর চার সন্তানকেও দত্তক নিয়েছেন শচীন। একদা প্রেমিক তথা বর্তমান স্বামীর সঙ্গে ভারতেই বাকি জীবনটা কাটাতে চান বলে জানিয়েছেন মহিলা।
সীমা জানিয়েছেন, সেই সাহস, আত্মবিশ্বাসের পিছনে অনুপ্রেরণা শচীনই। তিনিই তাঁকে হিন্দি ভাষা শিখিয়েছেন। এছাড়া বলিউডের সিনেমা দেখেও ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। তারপরেই এদেশে পালিয়ে আসবেন বলে ঠিক করেন সীমা।
২০১৯ সালে পাবজি খেলতে গিয়ে প্রথম আলাপ হয়েছিল যুগলের। ধীরে ধীরে দুজনের বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। প্রেমে পূর্ণতা পায় সেই বন্ধুত্ব। কিন্তু কোভিডের সময় আন্তর্জাতিক সফরে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকায় এতদিন ভারতে আসা সম্ভব হয়নি সীমার। তবে এই বছর সেইসব নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরেই দেশ ছেড়ে ভারতে আসবেন বলে ঠিক করেন মহিলা। শচীন এবং সীমা দুজনেই যে যার দেশ ছেড়ে প্রথমে নেপালে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে ৭ দিন একসঙ্গে কাটানোর পরেই দুজনে সিদ্ধান্ত নেন, বাকি জীবনটাও একসঙ্গেই কাটাবেন তাঁরা।
এরপর আর পিছন ফিরে তাকাননি কেউই। নেপালের পোখারা থেকে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সড়ক পথে সোজা ভারতে প্রবেশ করেন সীমা। সঙ্গে ছিল তাঁর ৪ সন্তানও। এরপর গ্রেটার নয়ডায় এসে শচীনের সঙ্গে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন মহিলা। শচীনও বাড়ির সকলের সঙ্গে প্রেমিকার আলাপ করিয়ে দেন। বিয়ে করবেন বলেও ঠিক করেন দুজনে।
কিন্তু সেই বিয়ে করতে গিয়েই গোলমাল বাঁধে। উকিলই পুলিশে ধরিয়ে দেন দুজনকে। যদিও জেল কেটে বেরোনোর পরেও আক্ষেপ নেই সীমার। উল্টে, শচীনের সঙ্গেই সংসার করার ব্যাপারে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর সন্তানরা শচীনকে পাপা বলে ডাকে। শচীনের বাড়ির লোকজনও বৌমা বলে মেনে নিয়েছেন তাকে। তাই এরপর ভারত ছেড়ে দেশে ফেরার আর কোনও ইচ্ছে নেই তার। বরং দেশে ফিরলে প্রাণটুকুও খোয়াতে হতে পারে। মরতেই যদি হয়, তাহলেও ভারতের মাটিতে মরতে চান তিনি, সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানি মহিলা।
পাবজি খেলতে খেলতে প্রেম, ভালবাসার টানে পাকিস্তান থেকে ভারতে ৪ সন্তানের মা