শেষ আপডেট: 17th September 2020 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পূর্ব লাদাখের গালওয়ান, গোগরা, হটস্প্রিং এলাকা থেকে এখনও সেনা সরায়নি চিন। অ্যদিকে, প্যাঙ্গং হ্রদ লাগোয়া পাহাড়ি এলাকায় মুখোমুখি অবস্থানে দুই দেশের বাহিনীই। কালা টপ, হেলমেট পাহাড় চূড়ায় ভারতের মাউন্টেন ফোর্স মোতায়েন রয়েছে, পাহাড়ি উপত্যকায় আনাগোনা রয়েছে লাল সেনার। ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, শীত এসে গেছে লাদাখে। এই সময় পাহাড়ি এলাকা পুরু বরফের চাদরে ঢেকে যায়। আরও দুর্গম হয়ে ওঠে পাহাড়ি খাঁজ তথা ফিঙ্গার পয়েন্টগুলো। এই অবস্থায় সীমান্ত সুরক্ষার জন্য আরও বেশি প্রস্তুতির দরকার হয়। তাই ইতিমধ্যেই সেনা বিন্যাস বদলানো শুরু হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় আরও বেশি সংখ্যক সেনা মোতায়েনের কাজও চলছে।
ভারতের এক সেনা আধিকারিক জানাচ্ছেন, গত ২৯ আগস্ট থেকে প্যাঙ্গং হ্রদ লাগোয়া এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে আছে। দক্ষিণ প্যাঙ্গং ভারতের সেনার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও উত্তরে ৩ নম্বর ফিঙ্গার পয়েন্টের কাছে সামরিক কাঠামো বানাচ্ছে চিনের সেনা। এদিকে এই সপ্তাহ থেকেই বরফ জমতে শুরু করেছে পাহাড়ি খাঁজে। এখনও তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে। অক্টোবরের মাঝামাঝি গোটা প্যাঙ্গং হ্রদ সংলগ্ন এলাকা বরফে ঢেকে যাবে। ভারতের সেনা জানাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি চিন্তা দৌলত বেগ ওল্ডি ও দেপসাং সমতলভূমি নিয়ে। কারণ দেপসাং ভ্যালিতে এখনও ক্যাম্প খাটিয়ে রয়েছে লাল সেনা, সেখানে টহল দিতে পারছে না ভারতের বাহিনী। অন্যদিকে, দৌলত বেগ ওল্ডি লাগোয়া আকসাই চিনে সামরিক কাঠামো বানাচ্ছে চিন। তৈরি হচ্ছে হেলিপ্যাডও। আকসাই চিন থেকে কারাকোরাম পাস হয়ে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে আসা সহজ। শীতের সময়ের ফায়দা নেই সেই চেষ্টা চালাতে পারে পিপলস লিবারেশন আর্মি।
সূত্রের খবর, পূর্ব লাদাখে ইতিমধ্যেই ৩০ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা, দেপসাং সমতলভূমি, গোগরা, হটস্প্রিং ও প্যাঙ্গং রেঞ্জে এই অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন থাকবে। সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অতিরিক্ত বাহিনীর জন্য রেশন, বিশেষ পোশাক ও অস্ত্রসস্ত্রের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। খাবার ও অস্ত্র বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রায় ৬ হাজার ট্রাক পাঠানো হচ্ছে। ১৮০ দিন অর্থাৎ ছ’মাসের জন্য ২০ হাজার টনেরও বেশি রেশন পাঠানো হবে লাদাখে, কেরোসিন তেল পাঠানো হবে প্রায় ১৫ হাজার কিলোলিটার।
সেনার এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, শীতের সময় বরফে ঢেকে যায় লাদাখের ফিঙ্গার এলাকাগুলো। তুষারপাত শুরু হয়, তাপমাত্রার পারদ নেমে যায় হিমাঙ্কের ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে। ওই সময়ের জন্য তাই সেনাদের বিশেষ পোশাক পাঠানো হচ্ছে। অতিরিক্ত ছাউনি পাঠানোরও ব্যবস্থা হয়েছে।
ভারতীয় সেনা জানাচ্ছে, দক্ষিণ ও উত্তর প্যাঙ্গংয়ের দখল নিতে মরিয়া লাল সেনা। কিন্তু ভারতের দক্ষ স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সকে টপকে তাদের পক্ষে সেনা নিয়ে এগোনো তেমনভাবে সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা তাদের সেনাদের মধ্যে কথাবার্তা চালানোর জন্য যোগাযোগের তেমন ব্যবস্থাও নেই। কোন এলাকায় সেনা মোতায়েন করতে হবে, কোন পাহাড়ি ঢাল বেয়ে যুদ্ধট্যাঙ্ক নিয়ে যেতে হবে ইত্যাদি খবর লেনদেনের জন্য ফাইবার কেবল বসানো শুরু করেছে। দক্ষিণ প্যাঙ্গং শুধু নয়, উত্তর প্যাঙ্গংয়েও এমন ফাইবার কেবল চোখে পড়েছে ভারতীয় সেনার। উপগ্রহ চিত্র খুঁটিয়ে দেখে এইসব ফাইবার কেবলের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে ভারত। প্যাঙ্গং লেকের দক্ষিণ প্রান্ত স্প্যানগুর গ্যাপের পাহাড়ি এলাকাতেও এমন কেবলের অস্তিত্ব চোখে পড়েছে।
তবে সেনার নর্দার্ন কম্যান্ড জানিয়েছে, পাহাড় হোক বা সমতলভূমি, যে কোনও প্রতিকূল পরিবেশে যুদ্ধ করার মতো প্রশিক্ষণ আছে ভারতীয় সেনার। আবহাওয়ার বদল হোক বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কোনও কিছুই টলাতে পারবে না ভারতের বীর জওয়ানদের। মাউন্টেন ফোর্সকে গেরিলা যুদ্ধের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, পাহাড়ি এলাকার সীমান্ত পাহারা দেওয়ার জন্য তাদের কাছে আধুনিক অস্ত্রও আছে। তাই চিনের সেনা আগ্রাসন দেখানোর চেষ্টা করলে তা বরদাস্ত করা হবে না।