Date : 17th Jul, 2025 | Call 1800 452 567 | info@thewall.in
কোনও সিভিক ভলেন্টিয়ার ঢুকতে পারবেন না নবান্নে, জারি হল নিষেধাজ্ঞাসোনা পাচারের দায়ে কন্নড় অভিনেত্রী রানিয়া রাওয়ের এক বছরের জেলগরমে চাষবাস থাকে না তো ওই সময়েই খুনখারাপি বেশি হয়, পুলিশ কর্তার অদ্ভূত যুক্তিছাত্র সংসদের নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কী ভাবছে রাজ্য? দু'সপ্তাহের মধ্যে জানাতে নির্দেশহৃদরোগে এআই কি গেম চেঞ্জার? কতটা এগোচ্ছে প্রযুক্তি, বাধাই বা কী কী? আলোচনায় ডাক্তারবাবু'ওদের জড়িয়ে ধরে...' মহাকাশের শূন্যতায় ১৮ দিনের 'ক্লান্তি' শেষে বাড়ির গন্ধ পেলেন শুভাংশুমালয়েশিয়ার পথে পাশাপাশিই আয়োজিত ভারতীয় বিয়ে ও চিনা শেষকৃত্য, দুই পরিবারের অনন্য বোঝাপড়াঅতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবারের বিপদ নিয়েও পড়ুয়াদের মধ্যে সচেতনতা চায় CBSE, স্কুলগুলিকে নির্দেশিকা২১ জুলাইয়ের সভা নিয়ে বিরক্ত হাইকোর্ট! 'জনগণ কত সহ্য করবে? সিপি কি মুচলেকা দেবেন?''আমার যোনি, আমার সন্তান, যা খুশি বলব', ‘ন্যাচারাল বার্থ’ নিয়ে ট্রোলিংয়ের জবাব রিচার

'কোটা ফ্যাক্টরি'! ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি নাকি শূন্যতার গহ্বর? 'ব্ল্যাক হোল' থেকে ফেরে কতজন?

দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রতিযোগিতা, প্রতিযোগিতা, প্রতিযোগিতা…। ছোট থেকেই ছেলেমেয়েদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে এই শব্দটা। অভিভাবকরাই বাচ্চাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেন 'প্রতিযোগিতা' নামক বিষয়টা। জীবনের লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে প্রতিযোগিত

'কোটা ফ্যাক্টরি'! ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি নাকি শূন্যতার গহ্বর? 'ব্ল্যাক হোল' থেকে ফেরে কতজন?

শেষ আপডেট: 13 July 2023 05:59

দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রতিযোগিতা, প্রতিযোগিতা, প্রতিযোগিতা…। ছোট থেকেই ছেলেমেয়েদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে এই শব্দটা। অভিভাবকরাই বাচ্চাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেন 'প্রতিযোগিতা' নামক বিষয়টা। জীবনের লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে প্রতিযোগিতায় নামতেই হবে! অনেক বাচ্চা পারে, অনেকে আবার হার মানে।

রাজস্থানের কোটার (Kota) নাম শুনলেই অনেকে যেমন সাফল্যের ছবি দেখতে পান, অনেকের চোখের সামনে ফুটে ওঠে ব্যর্থতা, অবসাদ আর আত্মহত্যার দৃশ্য। সাফল্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকে প্রচুর ব্যর্থতা ও ফুরিয়ে যাওয়ার গল্প। সংবাদমাধ্যমে ইদানীং প্রায়ই উঠে আসছে সেইসব গল্প। মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে চরম পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছেন এমন পড়ুয়ার সংখ্যা কম নয়। দিনে দিনে বাড়ছে সেই সংখ্যা।

কোটা যেন একটা ফ্যাক্টরি (Kota Factory)! আর সেখানে আসা পড়ুয়ারা এক একটা যন্ত্র। স্বাভাবিক জীবনের গতি এখানে এসেই অন্য খাতে বাঁক নেয় বলে জানাচ্ছেন, পড়ুয়ারা। কোটারই এক সিনিয়র পুলিশ অফিসার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, 'কোটা একটা বারুদের স্তূপের ওপর বসে আছে!' সত্যিই কি তাই?

প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে ঘুরে আসতে হবে কোটায়। ট্রেন থেকে স্টেশনে নামলেই আপনাকে ঘিরে ধরবে জনা পঞ্চাশেক লোক। কেউ বলবে, হোস্টেল খুঁজে দেবেন, কেউ বলবে কোটার সবথেকে ভাল ইনস্টিটিউশনে ভর্তি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন। কেউ হয়তো আপনার ব্যাগ ধরেই টানাটানি শুরু করবে।

Kota Factory

সেই জটলা কাটিয়ে আপনি যদি পৌঁছন কোটার মূল জায়গায়, তবে প্রথমে আপনার মাথা ঘুরে যেতে বাধ্য। চারিদিকে লম্বা লম্বা বিল্ডিং। হোর্ডিং, ফ্লেক্স, ব্যানারে ভরে গেছে চারপাশ। সেইসব ব্যানারগুলি আসলে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের 'বিজ্ঞাপন'! সবার একটাই দাবি, তাদের কোচিং সেন্টারে (Kota Coaching Center) পড়লেই সাফল্য পাওয়া যাবে।

আর একটা বিষয়ও আপনার চোখ এড়াবে না। দেখবেন, চারিদিকে 'যন্ত্র'রা হেঁটে বেড়াচ্ছে! কথাটা শুনে অবাক হতে পারেন, তবে এটাই বাস্তব কোটার মাটিতে। পড়ুয়ারা এখানে থাকতে থাকতে মানব যন্ত্রে পরিণত হয়ে যান। চায়ের দোকানে সামনে জটলা হোক বা কোচিং সেন্টারের অন্দরে, পড়ুয়াদের মধ্যে আলোচনা শুধু 'পড়াশোনা' নিয়েই। আর এইসব আলোচনার মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে লুকিয়ে থাকে 'প্রতিযোগিতা'। কে কাকে কীভাবে টক্কর দেবেন, সেই মন্ত্রণাই ভেসে চলে কোটার বাতাসে।

যে কোনও পড়ুয়াকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেই আপনি জেনে যাবেন, ওখানকার রুটিন। সকাল ৬টা থেকে রাত দু'টো--- শুধুই পড়াশোনা চলে। জীবনে বিনোদন নেই, নেই কোনও ছুটির গল্প। ওখানকার এক ছাত্রের কথায়, 'একদিন ছুটি নিলে, নিজেকে অপরাধী মনে হয়। মনে হয় অনেকটা পিছিয়ে গেলাম।'

ইতিউতি কান পাতলেই শোনা যাবে, আপনি যদি আপনার সন্তানকে এখানে পড়াতে পাঠান, তবে সব কাজ রেখে তাঁর সঙ্গে এসে থাকুন! কিন্তু কেন? অনেকের ধারণা, অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতার আবহে হেরে যাওয়ার অবসাদ মারাত্মক। পা হড়কে গেলেই সুইসাইডের সিদ্ধান্ত নিতে খুব বেশি সময় নেয় না।

হ্যাঁ, এটাই কোটার মাটিতে ভয়াবহ বাস্তব। দিনে দিনে আত্মহত্যার (Suicide) বিভীষিকা বেড়েই চলেছে। গত দু'সপ্তাহের মধ্যেই তিনজন আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু কোটায় কেউ এই বিষয়ে মুখ খুলবে না। জিজ্ঞেস করলে বলবে, 'এইসব নিয়ে কিছু বলতে চাই না।' আপনাকে কোনও পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করতেও দেবে না।

সবাই যেন কেমন অস্বস্তিকর নীরবতা পালন করে এই একটা বিষয়ে। এখানে একটা ছোট্ট পরিসংখ্যান দিয়ে রাখা ভাল। এ বছরই প্রায় তিন লক্ষ পড়ুয়া কোটায় (Kota Factory) এসেছে ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে। আর গত দু'মাসে আত্মহত্যা করেছে ৯ জন।

আপনি টাকা খরচ করলেই এখানে সবকিছু মিলবে। বাড়ি থেকে লন্ড্রি নিয়ে যাবে, খাবারও চলে আসবে ঘরে। এক মিনিটও সময় নষ্ট করতে নারাজ পড়ুয়ারা। তাদের মাথায় ঘোরে, আইআইটি (IIT)। পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বললেই বুঝতে পারবেন, 'আইআইটি যেতে না পারলে জীবন অর্থহীন…', হ্যাঁ এই চাপেই পড়ুয়ারা সবসময় 'প্রেসার কুকার'-এ সেদ্ধ হয়। 'যদি আইআইটি না হয়…', এই খাঁড়া ঝুলছে পড়ুয়াদের মাথার ওপর।

কুনহাদি, রাজীব গান্ধী নগর, মহাবীর নগর, বিজ্ঞান নগর, জওহর নগর এমন কিছু এলাকা হল কোচিং সেন্টারগুলির কেন্দ্রবিন্দু। আর এই এলাকা জুড়েই গজিয়ে উঠেছে হোস্টেল, আবাসন। সেই আবাসনের আবার কঠোর নিয়ম, সাড়ে সাতটার মধ্যে ঢুকে পড়তেই হবে। যদি কেউ না আসতে পারে তাহলে অনুপস্থিত পড়ুয়া যেখানেই থাকুক, তাকে খুঁজে আনা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ আধিকারিক কোটা নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন, 'পড়ুয়ারা এখানে তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে আসে, কিন্তু কোটার ভবিষ্যৎ এখন অদৃষ্টের গর্ভে বিলীন। এই শহর এখন প্রতিযোগিতা, একাকীত্ব, হতাশা এবং আত্মহত্যার চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে।' কোটা যেন এখন একটা 'ব্ল্যাকহোল'। প্রশ্ন উঠছে, সেই গহ্বরে ঢুকলে কতজন ফিরে আসে?

নতুন সূর্য-তারা প্রসব করছে মহাজাগতিক মেঘ, মহাকাশ যেন সদ্যোজাতদের আঁতুরঘর


ভিডিও স্টোরি