শেষ আপডেট: 23rd February 2024 10:13
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কোন্নগরে শিশু খুনে নতুন তথ্য। টাক মাথা স্বামী পছন্দ না হওয়ায় বান্ধবীকে বিয়েও করেছিল নিহত শিশুর মা। ধৃতদের জেরা করে শিহরিত পুলিশও।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধেবেলা নিজের বাড়িতে নৃশংসভাবে খুন করা হয় আট বছরের শিশুকে। চারদিন পর এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় শিশুর মা শান্তা শর্মা ও তার বান্ধবী ইরফাত পারভিনকে। শ্রীরামপুর আদালত তাদের ৯ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়। হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে একের পর এক উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ জানিয়েছে, পঙ্কজ শর্মার সঙ্গে শান্তার বিয়ে হয় ২০১২ সালে। বিয়ের সময় থেকে পঙ্কজের মাথায় টাক ছিল। যা পছন্দ ছিল না শান্তার। বিয়ের পর এই নিয়ে দুজনের অশান্তি শুরু হয়। একে স্বামীর সঙ্গে মনের মিল নেই, অন্যদিকে সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাব। দুজনের দূরত্ব যত বাড়তে থাকে ততই ইরফাতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে শান্তার।
পুলিশ দুজনের মোবাইল ঘেঁটে কিছু ছবি পায়। যেখানে একটি ছবিতে দুজনের হাতেই চুরি দেখা যায়। শান্তার স্বামী পুলিশকে জানিয়েছিল শান্তা কোনওদিনও চুরি পরত না। এদিকে ২০১৮ সালে ইরফাতের বিয়ে হয়েছিল। মাস খানেকের মধ্যে বিয়ে ভাঙে তার। এরপরের বছরই কলকাতার একটি মন্দিরে মালা বদল করে শান্তা ও ইরফাত। পঙ্কজ জানিয়েছেন, তার স্ত্রী ও ইরফাত বছর দুয়েক আগে দিল্লি গিয়েছিল। তখন ছেলেকে সঙ্গে নেয়নি। গত বছর বিহারে গিয়েছিল দুজনে। তখন ছেলে ছিল সঙ্গে । তবে পারভিনের বাড়িতে ছেলেকে আলাদা রেখে এক ঘরে রাত কাটায় শান্তা ও পারভিন। সে কথা ছেলের কাছেই শুনেছেন তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে, দুজনের সম্পর্কে ছেলে বাধা হচ্ছিল। তাই কুমাতা হয়েই শান্তা নিজের ছেলেকে খুনের পরিকল্পনা করে। রীতিমতো ছক কষে এগিয়েছিল তারা। পুলিশকর্তাদের দাবি, শান্তা আর পারভিন দিনে অনেকবার ফোনে গল্প করত। কিন্তু ঘটনার দু'দিন আগে থেকে আর ফোনে যোগাযোগ করেনি। মোবাইলের কল রেকর্ড দেখে পুলিশের সন্দেহ হতে পারে এটা ধরে নিয়েই সতর্ক হয়েছিল। যারা দিনে কুড়িবার ফোন করে, তাদের ফোন দু দিন বন্ধ কেন! তার মানে তারা জানত ঘটনার পর পুলিশ ফোনের সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে। দু-দিন কোনও যোগাযোগ নেই এটা প্রমাণ করতেই ফোনালাপ বন্ধ রাখে তারা। ঘটনার দিনও বেলা তিনটের সময় পারভিনের মোবাইল টাওয়ার লোকেশন ছিল ওয়াটগঞ্জ। আবার রাত সারে আটটায় সেই একই লোকেশনে ছিল। মাঝে ফোন বন্ধ ছিল। সন্ধে ছ'টা থেকে সারে ছ'টা নাগাদ শিশুকে খুন করা হয়। তার মিনিট পনেরো আগে শান্তা ও ইরফাতের কথা হয় তার সূত্র পেয়ে যায় পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই সময়ে আদর্শনগর ইংলিশ রোড দিয়ে মাস্ক পরা এক যুবতী হেঁটে যাওয়া ধরা পরে সিসি ক্যামেরায়। শান্তা একটি ফুড কোর্টে কাজ করতেন। পরিকল্পনামাফিক সেদিন কাজে যান। দোকানে গিয়ে ডলি নামে প্রতিবেশী এক মহিলাকে দিয়ে বাড়িতে ছেলেকে খবর পাঠান তার চশমা দিয়ে যেতে। ছেলে মাকে চশমা দিয়ে বাড়ি ফিরে টিভি চালিয়ে কার্টুন দেখতে বসে। সে সময় আততায়ী ঘরে ঢুকে শিশুকে মাথা থেঁতলে খুন করে।
পুলিশ কর্তারা বলেন, "শান্তা তার বান্ধবীর প্রতি এতটাই আসক্ত যে তার সন্তান খুনে অভিযুক্ত হলেও বান্ধবীর পক্ষেই দাঁড়ান। আবার নিজেকে নির্দোষ বলেও দাবি করেন।" শান্তার স্বামী পঙ্কজ শর্মা অবশ্য দুই অভিযুক্তের ফাঁসির সাজা চাইছেন।