শেষ আপডেট: 30th October 2024 17:31
দ্য ওয়াল ব্যুরো: থ্রেট কালচারের অভিযোগ তুলে আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ অনিকেত মাহাতো, কিঞ্জল নন্দদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের বিরুদ্ধে পাল্টা সংগঠন গড়েছে জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ। বুধবার নির্যাতিতার সুবিচারের দাবিতে পথে নেমে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনের তরফে শ্রীশ চক্রবর্তী এদিন দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘আন্দোলনকে ভুল পথে চালনা করতে চাইছে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। সাধারন মানুষকে দিনের পর দিন বোকা বানিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থে লাগাতার মিথ্যাচার করা হচ্ছে।’
এদিন অনিকেত, কিঞ্জলদের প্রসঙ্গ তুলে শ্রীশ মনে করিয়ে দেন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের সঙ্গে হাত না মেলালেই সবাই অপরাধী হয়ে যায়। তাঁর আরও অভিযোগ, জোর করে থ্রেট কালচারের মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাঁদের আরজি কর থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ শ্রীশ মনে করিয়ে দেন, তাঁদের উপর যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তা পুরোপুরি মিথ্যা। নির্যাতিতা দিদির সুবিচারের দাবি চেয়ে তাঁরাই প্রথমে আন্দোলনের পথে হেঁটেছিলেন। উল্টে তাঁদের ‘নটোরিয়াস ক্রিমিনাল’ বলা হচ্ছে।
নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে আরজি কর আন্দোলনের মুখ অনিকেত মাহাতো ভূরিভূরি অভিযোগ তুলেছেন। সে থ্রেট কালচার হোক বা পরীক্ষায় জোর করে নম্বর পাইয়ে দেওয়া বাদ যায়নি কিছুই। সেই প্রসঙ্গে এদিন শ্রীশ বলেন, ‘আমরা ওঁদের কাজকর্ম মেনে নিতে পারিনি। আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষের থেকে টাকা তুলেছে ওঁরা। পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেও ধ্বংসের মুখে ঢেলে দিয়েছে। সেই দাবি না মানায় আমাদের উপর নেমে এসেছে শাস্তির খাঁড়া।’
এদিকে গত শনিবারই আরজি করে গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছিলেন অনিকেত মাহাতো, কিঞ্জল নন্দরা। অনুষ্ঠান শেষে মিছিলও করতে দেখা গিয়েছিল তাঁদের। এবার তারই পাল্টা ৯ নভেম্বর গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছেন শ্রীশরা। পুরো বিষয়টা পরে আলোচনা করে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
যদিও ডাক্তারদের মিছিল নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামাতে নারাজ সিনিয়র চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী। এদিন বিকেলে নির্যাতিতার সুবিচারের দাবিতে সিবিআই-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানে সামিল হয়েছিলেন তিনি। সেখানেই দ্য ওয়ালকে একান্ত সাক্ষাৎকারে সুবর্ণ জানান, ওটা কোনও সংগঠনই নয়। যারা আগে তোলাবাজি করত, কাটমানি খেত, দুর্নীতি করত তাঁদের নাম ছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। এখন তাঁরা নাম পাল্টে ফেলেছে।
সিনিয়র চিকিৎসক আরও জানান, ‘এদের দাপাদাপি রাজ্যের আর কোনও কলেজ ও হাসপাতালে বরদাস্ত করা হবে না। সিনিয়র, জুনিয়র ডাক্তার ও সাধারণ মানুষ একজোট হয়ে এদের বাড়বাড়ন্ত রুখে দেবে।'
ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন আপাত ভাবে ‘অরাজনৈতিক’ হলেও নেপথ্যে যে তৃণমূল রয়েছে তা নিয়ে লুকোছাপা নেই। এদিকে মঙ্গলবারই জুনিয়র ডাক্তারদের আরও একটি সংগঠন প্রোগ্রেসিভ জুনিয়র ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন দাবি করে তারাই ‘আসল সরকারপন্থী’ সংগঠন। শুধু এই দাবি করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। তাদের এ-ও বক্তব্য, গত শনিবার যে সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছিল, তাদের মাথারাই ‘থ্রেট কালচার’-এর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত। সেই প্রসঙ্গে এদিন শ্রীশ বলেন, ‘ওঁদের কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। নির্যাতিতার সুবিচারের দাবি ভুলে নোংরা রাজনীতি চলছে। এতদিন কোথায় ছিলেন তাঁরা?’
বুধবার দুপুরে প্রাচী সিনেমা হলের সামনে থেকে শিয়ালদহ কোর্ট পর্যন্ত মিছিল করে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন। নির্যাতিতা দিদির সুবিচারের দাবি এবং সিবিআইকে দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীদের কড়া শাস্তির দাবিতে সরব হন নতুন সংগঠনের ডাক্তাররা।