শেষ আপডেট: 26th January 2025 20:01
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মেয়ের মৃত্যুর জন্য সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে এখনও অনড় আরজি করের নির্যাতিতার মা-বাবা। যা নিয়ে তৃণমূলের কুণাল ঘোষ থেকে ফিরহাদ হাকিম পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন।
তবে ঘটনা হল, কুণালের কথার প্রসঙ্গ ধরে বলতে গিয়েই নির্যাতিতার মার মুখে উঠে আসে প্রয়াত রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্তের কথা। তিনি বলেন, "আমরা ক'দিন আগেই পঙ্কজ দাদাকে হারালাম। আমার সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর কথা হচ্ছিল। তখন উনি আমাকে বলছিলেন, দুটো পরিবারই আমরা সব হারিয়ে ফেলেছি। এভাবেই কি সৎ মানুষদের হারাতে থাকব?"
নির্যাতিতার মা আরও বলেন, "পঙ্কজ দাদা বলেছিলেন একজন সিভিক ভলান্টিয়ার এসে কর্তব্যরত ডাক্তারকে মেরে ফেলল, খুন করল ধর্ষণ করল- তাহলে আরজি কর হাসপাতাল কি একটা সোনাগাছি হয়ে গেল? আজকে দাঁড়িয়ে আমিও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চোখ রেখে জবাব চাইছি, আরজি কর কি সোনাগাছি? একটা স্বপ্নের হাসপাতাল ছিল আরজি কর। সেখানে চান্স পেয়ে আমার মেয়ে কত খুশি হয়েছিল। বারবার আমার মেয়ে বলেছিল যে মা আমি এই হাসপাতালে চান্স পেয়েছি তুমি খুশি হয়েছ তো? সেখানে আমার মেয়েকে ধর্ষিত হতে হয়েছে, খুন হতে হয়েছে। আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জবাব চাইব যে আমার মেয়েকে একটা সিভিক ভলান্টিয়ার এসে ধর্ষণ করে গেল, খুন করে গেল তাহলে আরজি কর হাসপাতালটা কি সোনাগাছি? যদি তাই হয় তাহলে হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হোক। যে রাধাগোবিন্দ কর ভিক্ষা করে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই হাসপাতালের আজকে এই হাল?"
এখানে বলে রাখা দরকার, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আলোচনা সভায় অন্যতম বক্তা হিসেবে সদ্য প্রয়াত প্রাক্তন পুলিশ অফিসার পঙ্কজ দত্ত সরাসরি যৌনকর্মীদের কথা না বললেও 'সোনাগাছি' শব্দটি উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "এটা অন্য জায়গা হলে বলতাম। এই ঘটনা যদি সোনাগাছিতে ঘটত আমরা বলতাম হতেই পারে, এই ঘটনা আরজি করের মতো জায়গায় হতেই পারে না।"
ঘটনার পরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে প্রশ্ন তোলেন তখন, এই কথার মাধ্যমে তিনি ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন? 'সোনাগাছিতে' যাঁরা কর্মসূত্রে থাকেন তাঁরাও তো অধিকারের দাবিতে নানা সময় সরব হয়েছেন। এই কথা কি তাঁদের অসম্মানিত করে না? এর পরেই পঙ্কজ দত্তর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল। প্রয়াত রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন আইজির সেই 'বিতর্কিত' শব্দই এবার শোনা গেল নির্যাতিতার মায়ের গলায়।
শুধু তাই নয়, নির্যাতিতার বাবার কথায় উঠে আসে পুলিশ ও সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে না না প্রশ্নও। ভর্ৎসনা সুরে তাঁরা জানান, ''কী ধরনের নোংরামি পুলিশ করেছে সেটা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রথম দিনই বুঝতে পেরেছিলেন। তা সত্বেও আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর কোনও লজ্জা নেই। এখনও ক্ষমতা আঁকড়ে বসে আছেন। আর বলা হচ্ছে অন্যের কথায় আমরা চালিত হচ্ছি। উনি বিষয়টাকে ভাল করে বুঝুন। উনি আমাদের অভিভাবক। আজকে সেই অভিভাবকের যদি এই ধরনের চরিত্র হয় তাহলে সেই পরিবারের সবার চরিত্র কীরকম আপনারা পরিষ্কার করে বুঝে নিন।"
শুধু পুলিশের ভূমিকাই নয়, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সিবিআই-এর ইনভেস্টিগেটিং অফিসার বা আইও কেন রায় ও সাজা ঘোষণার দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। অভিযোগ তোলেন এক সিবিআই আধিকারিক নাকি তাঁদের বলেছেন, "মেয়ে মারা গেছেন আপনাদের, তাঁর দায়ও আপনাদের। কেউ কিছু করে দেবে না আপনাদের জন্য।"