শেষ আপডেট: 25th November 2024 08:52
সুমন বটব্যাল
নির্বাচন কমিশনে নথিভুক্ত সমস্ত রাজনৈতিক দলকে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। যেমন বছরের আয় ব্যায়ের হিসাব অডিট করে পেশ করতে হয় জাতীয় নির্বাচন সদনে। তেমনই আবার প্রতিটি নথিভুক্ত রাজনৈতিক দলকে বছরে অন্তত দু’বার সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটির বৈঠক ডাকতে হয়।
তৃণমূলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি হল জাতীয় ওয়ার্কিং কমিটি। আজ সোমবার বিকেলে কার্যত সেই নিয়মরক্ষার বৈঠক ডাকা হয়েছে কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে।
কংগ্রেস থেকে ভেঙে বেরিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই তৃণমূলের সংবিধান থেকে শুরু করে গঠনতন্ত্রে কংগ্রেসি ঘরানার ছাপ স্পষ্ট। সর্বভারতীয় কংগ্রেসেও সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি হল ওয়ার্কিং কমিটি। আবার বিজেপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি হল পার্লামেন্টারি বোর্ড।
তবে কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ সূত্রের মতে, সোমবার বিকেলে কালীঘাটে এই নিয়মরক্ষার বৈঠকই অনেক বড় হয়ে উঠতে পারে। কারণ, এক, বৈঠকে যেমন ধমক জুটতে পারে কারও কারও কপালে। আবার বড় কোনও সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূলের এক পোড় খাওয়া নেতার কথায়, শনিবার বিকেল থেকে আবহাওয়ার অনেক বদল দেখা যাচ্ছে। কারণ, শনিবার দুই রাজ্যের বিধানসভা ভোট ও বাংলায় ৬টি বিধানসভার উপ নির্বাচনের যে ফলাফল প্রকাশ হয়েছে তা বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে কালীঘাটকে। লোকসভা ভোটে তৃণমূল ২৯টি আসনে জেতার পর থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলছেন। তবে মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের ফলাফল সেই আত্মবিশ্বাসের উপরে যেন নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
কেন না, লোকসভা ভোটে প্রায় ১০০টি আসন জেতার পর থেকে কংগ্রেসকে জাতীয় রাজনীতিতে বেশ শক্তিশালী দেখাতে শুরু করেছিল। আঞ্চলিক দলগুলির উপর খুব বেশি নির্ভরতা দেখাচ্ছিল না কংগ্রেস। কিন্তু মহারাষ্ট্রে বিপর্যয়ের পর কংগ্রেসের পুনর্মুষিক ভব অবস্থা। অর্থাৎ জাতীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর কংগ্রেসের নির্ভরতা রইল। আবার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও তাঁকে তোয়াজ করে চলতে পারেন। যাতে কংগ্রেসের সঙ্গে কক্ষ সমন্বয় করে সংসদে মোদী সরকারের বিপদ না বাড়ায় তৃণমূল।
ছাব্বিশ সালে বিধানসভা ভোটের আগে এখন তৃণমূলের দু’হাতে লাড্ডুর মতো অবস্থা।
পাশাপাশি বাংলায় বিধানসভার ৬টি আসনের উপ নির্বাচনে ৬টিতে জিতে ছাব্বিশের ভোটের একটা ছবি দেখাতে পেরেছে তৃণমূল।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই উপ নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা থেকে শুরু করে প্রচারের একটা বড় সময়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দেশে ছিলেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই অনেকাংশে তা দেখভাল করেছেন।
কালীঘাটের ওই ঘনিষ্ঠ নেতার মতে, এই ধরনের পরিস্থিতি যে কোনও বড় রাজনীতিককে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার শক্তি জোগায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নাও ঘটতে পারে।
সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, তৃণমূলের এক শ্রেণির নেতা পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যা তা বলছেন। কেউ কেউ আবার সরকার ও সংগঠনে ক্ষমতার বিন্যাস নিয়েও ‘জ্ঞানগর্ভ’ মতামত জানিয়েছেন। দলের এই শ্রেণির নেতাদের সোমবারের বৈঠকে ধমক জুটতেই পারে।
লোকসভা ভোটের পরপর খোলাখুলি এই ধমক দেওয়ার ব্যাপারটা শুরু করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারের মধ্যমেয়াদে প্রকারান্তরে মমতা এটাও বোঝাতে চেয়েছিলেন, তিনিই সরকার তিনিই বিরোধী। অর্থাৎ শাসক দলের কেউ কোনও খারাপ কাজ করলে তিনিই রয়েছেন তা দেখার জন্য। নবান্নের বৈঠক থেকে তিনি দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর সমালোচনা করে সেই বার্তা দিয়েছিলেন। এমনকি পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশ কর্তার ভূমিকা ও অর্থলোভ নিয়ে সরাসরি সমালোচনা করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু আরজি করের ঘটনার কারণে তা অনেকটাই ঘেঁটে যায়।
উপ নির্বাচনের ফলাফল আরজি করের ঘটনা-উত্তর রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কিছুটা হলে প্রশমিত করে দিতে পেরেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে এবার ফের আগের মেজাজেই ফিরতে পারেন নেত্রী।