দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিশ্বের বৃহত্তম কবিতা উৎসবগুলির মধ্যে অন্যতম, কলকাতার আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবের ষষ্ঠ সংস্করণ 'চেয়ার পোয়েট্রি ইভনিংস' অনুষ্ঠিত হতে চলেছে কলকাতায়। বিগত বছরের মতোই ২৪ থেকে ২৬ নভেম্বর, তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এই আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব। প্রায় ৮টি দেশের কবি, লেখক এবং চিন্তাবিদদের একটি বৈচিত্র্যময় দল অংশগ্রহণ করছেন এই উৎসবে। এই আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবে বিশ্বের সাহিত্য জগতের সেরা কণ্ঠস্বর এবং কবিতা শোনার সুযোগ পাওয়া যাবে। তাই কবিতাপ্রেমী এবং শহরবাসীদের কাছে যা এক বিরাট প্রাপ্তি হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
৮টি দেশের আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন গাই হেলমিঙ্গার, সাবিনে ভেনারুজ্জো, আমির ওর, অ্যানি ফিঞ্চ, দিতি রনেন, ডমিনিক ডি গ্রোয়েন, ইদুনা পালম্যান, মারওয়ান মাখোল, মারি জিন চ্যান এবং জেন ক্যাম্পবেল। উৎসবে ভারতীয় কবিদের মধ্যে অংশগ্রহণ করছেন মণি রাও, রবিন এনগাঙ্গম, সরাবজিৎ গড়চা, দীপিকা মুখোপাধ্যায়, মন্দাক্রান্তা সেন, উদয়ন বাজপেয়ী, শুভব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্বামী অন্তর নীরব।
ভারতীয় ভাষা পরিষদ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ''চেয়ার পোয়েট্রি ইভনিংস'। অ্যালায়েন্স ফ্রাঙ্কেস ডু বেঙ্গলে, স্যামিল্টন হোটেল কুড টেভার্ন এবং হুগলি নদীতে এর স্বাক্ষর অনুষ্ঠান 'কবিতা অন দ্য ক্রুজ' দিয়ে শেষ হবে এই উৎসব। সঙ্গীতশিল্পী উর্মি চৌধুরী, সৌম্য শঙ্কর রায় এবং প্রাঞ্জা দত্ত লোকগান ও সুফি সঙ্গীত (‘মাল্টিভার্স’) পরিবেশন করবেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।
অন্য বছরের মতো এবারও উৎসবের সাক্ষী থাকবে চেয়ার লিটারারি ট্রাস্টের মুদ্রিত প্রকাশনা, চেয়ার কবিতার বইয়ের উদ্বোধন।
চেয়ার পোয়েট্রি বুকস থেকে সরাবজিত গড়চার 'অল উই হ্যাভ' এবং এস্তোনিয়ান কবি মাথুরা আকা মার্গাস লাট্টিক- এর 'ইকো অফ এ স্টোন' শিরোনামের দুটি কবিতার বই প্রকাশ করা হবে ২৫ নভেম্বর। ইয়ুথফুল এলিজিস, অনিন্দিতা বোস দ্বারা সম্পাদিত কলেজ এবং স্কুল ছাত্রদের একটি সংকলনও কবিতা উৎসবে প্রকাশিত হবে।
চেয়ার লিটারারি ট্রাস্টের এই অনুষ্ঠানটির আয়োজনে সহায়তা করছে ডাচ ফাউন্ডেশন ফর লিটারেচার, ফ্ল্যান্ডার্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ কালচারাল ইনস্টিটিউট, অ্যালায়েন্স ফ্রাঙ্কাইজ, স্যামিলটন হোটেল এবং ভিভাদা ক্রুজ প্রাইভেট লিমিটেড এবং অন্যান্যরা।
চেয়ার পোয়েট্রি ইভনিং-এর এর আগে অংশগ্রহণ করেছেন বুকার পুরস্কার বিজয়ী লেখক বেন ওকরি, পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী কবি ফরেস্ট গ্যান্ডার এবং বিজয় শেশাদ্রি, রুথ প্যাডেল, নিকোলা মাদজিরভ, অশোক বাজপেয়ী, সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার বিজয়ী কবি মানগলেশ দাবরালরা, কে সচ্চিদানন্দন, রাজেশ জোশি এবং অন্যান্যরা। পাঁচ বছরের এই উৎসবে ২২টিরও বেশি দেশ ও ভাষার কবিদের কবিতা পরিবেশন করা হয়েছে।
বিশিষ্ট কবি ও উৎসবের পরিচালক সনেট মণ্ডল বলেন, "কবিতা এবং শিল্পের প্রশংসা মানবতার জন্য অত্যাবশ্যক, বিশেষ করে এমন একটি বিশ্বে যেখানে বিশ্বের বেশিরভাগ অংশ যুদ্ধ, সংঘাত, গণতান্ত্রিক অধিকারের অবক্ষয় এবং মৌলিক স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হচ্ছে। ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী কলকাতা নিয়মিত এমন অনেক সাহিত্যধর্মী ও শৈল্পিক উৎসবের আয়োজন করে আসছে, যার মধ্যে কবিতার তাৎপর্য এবং স্বাদ যোগ করাই আমাদের লক্ষ্য।"
তিনি আরও জানিয়েছেন, "এই উৎসবের মাধ্যমে মানবতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে এমন যে কোনও কিছুর বিরুদ্ধে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কণ্ঠস্বর উপস্থাপন করতে চাই। কবিতা সবসময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আলোচনার ভিত্তি। আমাদের মূল উৎসব দলের সদস্যদের সহায়তায়, বিশেষ করে অমিত দাস, অনিন্দিতা বোস এবং নম্রতা পুরকায়স্থ, আমি আশা করি এবারের উৎসব কবিতা ও ভাবনাকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হবে যা মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে বহন করতে সক্ষম হবে।"
কবিতা এবং সৃজনশীল ধারণাগুলি নেতিবাচক শক্তির বিরুদ্ধে একটি "পুশ ব্যাক" বলে মনে করেন হিন্দি কবি এবং উৎসবের পরিচালক তুষার ধওয়াল সিং। তাঁর দাবি, এগুলিই যুদ্ধ ও সন্ত্রাসের এই সংকটময় সময়ে মানবতার হাতিয়ার। "কবিতা তার পাঠকদের মনে জীবনযাপন এবং প্রকাশের আরও উর্বর ধারণা জাগিয়ে তোলে। 'চেয়ার পোয়েট্রি ইভিনিংস' জীবন, সৃষ্টি এবং মানবতার সমস্ত রঙ এবং বৈচিত্র্যকে সম্মান করে," জানিয়েছেন তিনি।