দ্য ওয়াল ব্যুরো: দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত আবাসন ‘ডায়মন্ড সিটি সাউথ’-এ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নিরাপত্তা ও হাউসকিপিং পরিষেবার নামে কার্যত অচলাবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন প্রায় হাজার দুয়েক বাসিন্দা। অভিযোগ, দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি সংস্থা S&IB Pvt. Ltd. নিজেদের চুক্তিভঙ্গ করে, হঠাৎই নিরাপত্তাকর্মীদের একটা বড় অংশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এর ফলে আবাসনের পাঁচটি টাওয়ারের ৬৭১টি ফ্ল্যাট একেবারে অরক্ষিত হয়ে পড়ে রয়েছে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ অনুযায়ী, ওই সংস্থার প্রাপ্য পেমেন্ট প্রক্রিয়া প্রায় পুরোপুরি সম্পন্ন রয়েছে আজকের তারিখ পর্যন্ত। তার পরেও সংস্থাটি অনৈতিকভাবে পাঁচজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর পুনর্বহাল দাবি করেছে এবং তা না হওয়ায়, ধর্মঘটের পথে হাঁটছে। সংস্থার এই দাবির পেছনে ইউনিয়নের চাপ এবং শাসকদলের এক প্রাক্তন সাংসদের মদত রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

দ্য ওয়ালের তরফে এস অ্যান্ড আইবি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও, এমডি শ্যামল কর্মকার বারবারই ফোন কেটে দেন। এসএমএসেরও উত্তর দেননি তিনি। তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলে এই প্রতিবেদনে আপডেট করা হবে।

জানা গেছে, সিকিউরিটি সংস্থার ঔদ্ধত্যের জেরে, আবাসনে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে ‘মাই গেট’ অ্যাপ। গেটের নিরাপত্তা সিস্টেমও বন্ধ। তার উপরে আবাসনের নিরাপত্তায় নিযুক্ত সিকিউরিটি অফিসার রামরাজ গত দু’দিন ধরে নিখোঁজ। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আবাসনের পুরুষরা তো বটেই, মহিলারা পর্যন্ত শিফটে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে বাধ্য হচ্ছেন। 

বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, কিছু নির্দিষ্ট নিরাপত্তারক্ষী ও সুপারভাইজার বিভিন্ন টাওয়ারে যেতে অস্বীকার করেন, কারণ হিসেবে তাঁরা জানান, ‘উপর থেকে নির্দেশ রয়েছে’। এমনকি গেটের বুম বেরিয়ারও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে গাড়ি ঢুকছে অথচ কোনও লগ রেকর্ড থাকছে না।

এই পরিস্থিতিতে আবাসনের তরফে ‘এসবি অ্যান্ড আই’ সংস্থাকে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আপনাদের সিকিউরিটি অফিসার রামরাজ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিরাপত্তা কাঠামো ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছেন।’ একইসঙ্গে ডেপুটি ফেসিলিটি ম্যানেজার ধ্রুবজ্যোতি মান্নার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অভিযোগ, তিনি চুপ করে থেকেছেন, অর্থাৎ এই পরিস্থিতিতে মদত জুগিয়েছেন।

সব মিলিয়ে, বহুবার অভিযোগ সত্ত্বেও সিকিউরিটি ও ফেসিলিটি টিম আবাসন কর্তৃপক্ষকে কোনও রকম আপডেট দেয়নি। যে ক’জন নিরাপত্তারক্ষী আছেন, তাঁরা ওভারটাইম বা এক্সট্রা ডিউটি করতে রাজি নন বলে টাওয়ারগুলোতে রোটেশন কার্যত বন্ধ। অথচ এই সংস্থাকেই পেমেন্টের বাইরেও ৭% অতিরিক্ত ম্যানেজমেন্ট ফি দেওয়া হয়ে এসেছে, যাতে তারা আরও বেশি পেশাদার পরিষেবা দেয়।

এই পরিস্থিতিতে বাসিন্দাদের একটাই প্রশ্ন, এভাবে আর কতদিন? নিয়মিত পেমেন্ট দিয়েও সিকিউরিটির মতো সংবেদনশীল পরিষেবা নিয়ে যারা এমন অসুবিধা তৈরি করে, তাদের উপর কি আদৌ ভরসা করা যায়! সর্বোপরি, এটা আর শুধু একটি আবাসনের সমস্যা নয়, নাগরিক নিরাপত্তা ও মর্যাদার লড়াইও বটে। আজ, বৃহস্পতিবার কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী কাজে যোগ দিলেও, হাউসকিপিং কর্মীরা আবার আসা বন্ধ করেছেন। ফলে আবাসনের সাফসাফাই নিয়ে শুরু হয়েছে সমস্যা।

সম্প্রতি এই নিয়ে একটি প্রেস রিলিজ প্রচার করছেন ডায়মন্ড সিটির বাসিন্দারা। তাঁরা তাতে সোজাসুজি লিখেছেন, ‘যে কোনও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত দুর্ঘটনার সম্পূর্ণ দায় থাকবে S&IB Pvt. Ltd.-এর ওপর।' তাঁরা বিষয়টি লালবাজারের জয়েন্ট কমিশনারের কাছেও পাঠিয়েছেন। এর পরবর্তী আইনানুগ পদক্ষেপ করার কথাও জানিয়েছেন তাঁরা।