শেষ আপডেট: 21st August 2024 14:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আরজি কর হাসপাতালে তরুণী পড়ুয়া-চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় কোমর বেঁধে তদন্তে নেমেছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এই সংস্থার আতসকাচের নীচে প্রথম থেকেই রয়েছেন, হাসপাতালের সদ্যপ্রাক্তন প্রিন্সিপাল ডক্টর সন্দীপ ঘোষ। আজ, বুধবার, ষষ্ঠ দিন হয়ে গেল, তাঁকে একটানা ম্যারাথন জেরা করছে সিবিআই। এই অবস্থায় তাঁর আরও নানা 'গুণের' কথা সামনে আসছে।
এবার তাঁর বারাসতের বাড়ির আশপাশের পড়শিরা অভিযোগ করলেন, স্ত্রীর উপর নৃশংস অত্যাচার করতেন সন্দীপ! এমনকি তাঁর স্ত্রী সিজার ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিয়ে আসার মাত্র ১৪ দিনের মাথায় তাঁকে নাকি ভয়ানক মারধর করেছিলেন সন্দীপ ঘোষ। ১২ বছর আগের এই ঘটনা এখনও ভোলেননি বারাসতের বাসিন্দাদের অনেকেই।
প্রসঙ্গত, আরজি কর হাসপাতালের এই ঘটনা এবং তার পরে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে সিবিআই তৎপরতার পরে, হাসপাতালের অন্দরে চলা দীর্ঘদিনের ঘুঘুর বাসার ছবিটা পরতে পরতে উঠে আসছে। অভিযোগ, দিনমানে ঘটে চলা সেই ডাকাতির 'সর্দার' ছিলেন খোদ প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষ।
জানা গেছে, তিনি ফেল করা পড়ুয়াদের পাশ করানোর জন্য এবং হাসপাতাল সামগ্রী সরবরাহকারী ঠিকাদারদের কাছ থেকে ২০ শতাংশ করে কাটমানি নিতেন বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শুধু তাই নয়, হাসপাতালে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, স্যালাইনের বোতল, অপারেশন গ্লাভস এবং সাধারণ গ্লাভস রোজ কিলো কিলো বেচে দিতেন। প্রতিদিন প্রায় ৫০০-৬০০ কেজি চিকিৎসা-বর্জ্য হাসপাতাল থেকে বেরত। দুই বাংলাদেশি সেগুলোকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করত বলে অভিযোগ।
আরজি কর নিয়ে শোরগোল পড়ে যাওয়ার পর মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের ডেপুটি সুপার আখতার আলিকে মঙ্গলবার ডাকা পাঠিয়েছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ এবং আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে গঠিত রাজ্যের বিশেষ তদন্তকারী দলের মুখোমুখি হন আলি। আখতার আলি বছরখানের আগে এই আর জি কর হাসপাতালেরই ডেপুটি সুপার পদে ছিলেন। যিনি সন্দীপ ও ঘোষ ও অন্যান্য আধিকারিকের বিরুদ্ধে রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশনকে লিখিত অভিযোগে নানান দুর্নীতির কথা তুলে ধরেছিলেন।
আখতারের অভিযোগের ভিত্তিতেই কলকায়া পুলিশ মঙ্গলবার সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে একটি আর্থিক দুর্নীতির এফআইআর দায়ের করে। গতবছর ১৪ জুলাই লেখা একটি চিঠিতে আলি জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্যভবনের অথবা কলেজ কাউন্সিলের বিনা অনুমতিতে হাসপাতাল থেকে সরকারি সম্পদ পাচার হয়। ঠিকাদার নির্বাচনে স্বজনপোষণ চলে অবাধে। কোটি কোটি টাকার সামগ্রী সরবরাহের বরাত অযোগ্য ঠিকাদারদের পাইয়ে দেওয়া হয়।
এই অবস্থায় সন্দীপের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে টালা থানায় দায়ের হয়েছে অভিযোগ। নবান্নের তরফেও গঠিত হয়েছে বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট। পাশাপাশি, লালবাজারও সন্দীপের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে, নির্যাতিতার নাম প্রকাশ্যে নেওয়ার অপরাধে। এবং এই ধারাবাহিক অভিযোগে সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে আজ, বুধবার ইডি-ও শুরু করেছে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত।
এত কিছুর মাঝখানে তাঁর পুরনো পাড়া থেকেও উঠে এল মারাত্মক অভিযোগ। পদের পাশাপাশি ব্যক্তি হিসেবেও গায়ে লাগল কালো দাগ।