তিলোত্তমার বাবা-মা জানান, 'আমরা ক্ষতিপূরণ চাই না।'
শেষ আপডেট: 20th January 2025 17:55
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সোমবার শিয়ালদহ অতিরিক্ত দায়রা আদালত আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার রায় ঘোষণার সময়ে বিচারক নির্যাতিতার বাবা-মার উদ্দেশে বলেন, 'আপনাদের যন্ত্রণার ক্ষতিপূরণ (RG Kar Compensation) কোনও অর্থ দিয়ে সম্ভব নয়। তবে এটি রাজ্যের দায়িত্ব আপনাদের নিরাপত্তা দেওয়া। এ ক্ষতিপূরণ সেই দায়বদ্ধতার প্রতীক।'
নির্যাতিতার বাবা-মা সঙ্গে সঙ্গেই জানান, 'আমরা ক্ষতিপূরণ চাই না।' একথা বলার সময়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তাঁরা। সন্তান হারানোর বেদনা যেন ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গে আরও একবার দগদগে হয়ে ওঠে তাঁদের মনে। এই প্রতিক্রিয়ায় আবেগঘন এক পরিবেশ সৃষ্টি হয় আদালতে।
আজ সকাল থেকেই সারা রাজ্য তথা দেশের নজর ছিল শিয়ালদহ অতিরিক্ত দায়রা আদালতের দিকে। সেখানেই দুপুরে আরজি কর কাণ্ডের প্রধান ও একমাত্র দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়ের সাজাঘোষণা করেন বিচারক অনির্বাণ দাস।
এদিন রায় ঘোষণার আগে নির্যাতিতার বাবা-মাকে হাতজোড় করে বসতে বলেছিলেন বিচারক। তারপর সব পক্ষ তাদের শেষ বক্তব্য আদালতে পেশ করার পরে রায় ঘোষণা করেন বিচারক। অপরাধীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করেন তিনি। জরিমানা অনাদায়ে আরও পাঁচ মাসের জেল কাটতে হবে।
নির্যাতিতার মা-বাবার উদ্দেশে বিচারক বলেন, 'যা মনে হয়েছে বিচার করেছি।' একই সঙ্গে নির্যাতিতার পরিবারকে মোট ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় রাজ্য সরকারকে। এর মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুর জন্য এবং ৭ লক্ষ টাকা কর্তব্যরত অবস্থায় ধর্ষণের জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে।
এই ক্ষতিপূরণের কথা শুনেই আদালতের ভেতরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নির্যাতিতার বাবা-মা। বিচারক এই পরিস্থিতিতে বলেন, 'আমি মনে করি না, যেভাবে মৃত্যু হয়েছে, তাতে ক্ষতিপূরণ হয়। আপনাকে টাকা দিয়ে মেটাচ্ছি, মনে করবেন না। কিন্তু এটা রাজ্যের দায়িত্ব, নিরাপত্তা দেওয়া। এটা ফাইন করা হয়েছে।'
প্রসঙ্গত, এই মামলায় বারবারই মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। তাঁর মা বলেছিলেন, তাঁদের মেয়ের সঙ্গে যা ঘটেছে, তারপরে এমন নৃশংস অপরাধীর বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই।
তবে সেই দাবি পুরোপুরি পূরণ হয়নি। বিচারক মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। সমবেদনা জানিয়ে আন্দোলনরত চিকিৎসকরা নির্যাতিতার মা-বাবাকে বলেন, 'লড়াই এখনও শেষ হয়নি।'
আরজি কর কাণ্ডের এই রায় সামাজিক ন্যায়বিচারের পথে নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে নির্যাতিতার পরিবারের শোক মুছিয়ে দেওয়ার জন্য কোনও কিছুই যথেষ্ট নয়। তাঁরা চরম বিচারটুকুই চেয়েছিলেন, সেটুকুই চাইতে পারেন। সেই দাবি বা প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ না হলেও, যাবজ্জীবন কারাবাসের রায়কেই স্বাগত জানাচ্ছেন বিভিন্ন মহলের বহু মানুষ।