আন্দোলনে উত্তাল লালবাজার।
শেষ আপডেট: 4th September 2024 08:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সন্দীপ ঘোষ-সহ চারজন গ্রেফতার হয়েছেন আরজি কর দুর্নীতি মামলায়। তবে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের তদন্ত এখনও চলছে। সেই ঘটনায় কোনও 'আসল মাথা'কে এখনও ধরা সম্ভব হয়নি। কোনও ইতিবাচক তথ্যও জানায়নি সিবিআই। তাই বিচার চেয়ে আন্দোলন চলবেই জুনিয়র চিকিৎসকদের। চলবে কর্মবিরতি, ধর্না-সহ সবরকম কর্মসূচিই। তবে আর রাস্তায় নয়, ক্যাম্পাসে। ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা 'সফল' লালবাজার অভিযানের শেষে এমনটাই জানিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা।
আজ, বুধবার রাজ্যবাসীকে পাশে থাকার আবেদন জানিয়ে একটি ঘোষণা করেছে জুনিয়র চিকিৎসদের সংগঠন জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট। ‘বিচার পেতে আলোর পথে’ নামে এক কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তারা বলেছে, আজ রাত ৯টা থেকে ১০টা আলো বন্ধ করে দীপ জ্বালানো হোক ঘরে ঘরে। সংগঠনের পক্ষে চালানো হয়েছে প্রচারও।
সোমবারের লালবাজার অভিযান, গোটা রাত রাস্তা দখল করে অবস্থান, মঙ্গলবার ফের দিনভর অবস্থানের শেষে মঙ্গলবার সন্ধেয় জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠনের ২২ জনের প্রতিনিধিদল প্রায় দেড়ঘণ্টা কথা বলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে তাঁরা জানান, কমিশনার তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা তাঁকে স্মারকলিপিটিও পড়ে শুনিয়েছেন। তবে কলকাতা পুলিশের তদন্ত চলাকালীন যে প্রশ্নগুলি তাঁদের মনে উঠেছে সেগুলির কোনও সদুত্তর পাননি।
ফলে আন্দোলন আরও জোরদার হবে বলেই বার্তা ডাক্তারদের। তাই রাস্তা থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে গেলেও, বিচারের দাবি থেকে কোনওভাবেই তাদের মুখ ফেরানো যাচ্ছে না।
তবে রাস্তা ছেড়ে ফেরার আগে দেখা যায় এক অন্য ঘটনা। সাধারণত, রাজনৈতিক দলের জমায়েতে প্রচুর মানুষের উপস্থিতি ঘিরে সংশ্লিষ্ট জায়গাটি নোংরা হয়ে যায়। খাবার প্যাকেট, জলের বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায়। চেনা সেই ছবি বা ধারণা বদলে দিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
টানা ২৫ ঘণ্টা ধরে চলা অবস্থান তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তে সকলে সর্বসম্মত হতেই ঝাঁটা হাতে রাস্তা পরিষ্কারে নেমে পড়তে দেখা গেল জুনিয়র চিকিৎসকদের। গোটা রাস্তা সাফ করে তবেই ফিরলেন তাঁরা। কে বলবে এই হাতেই তাঁরা ধরেন টেথোস্কোপ!
গতকাল সন্ধেয় স্মারকলিপি আর প্রতীকী শিড়দাঁড়া নিয়ে লালবাজারে ঢোকেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সেই প্রতীকী শিড়দাঁড়া টেবিলের উপর রেখেই কথা বলেন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের সঙ্গে। ছবিও তোলা হয় তার। এরপরেই পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। বেরিয়ে এসে জুনিয়র ডাক্তাররা জানান, তাঁরা যে সিপির পদত্যাগ দাবি করছেন, এটা জানিয়েছেন তাঁকে। সিপি তাঁদের বলেছেন, যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চান তাহলে সরতে রাজি আছেন তিনি। তবে আরজি করের সেমিনার রুমে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় যে ভাবে তদন্ত প্রক্রিয়া এগোচ্ছিল কলকাতা পুলিশ, তা নিয়ে তাঁদের বেশকিছু প্রশ্ন ছিল। সেগুলির সদুত্তর দিতে পারেনি পুলিশ।
আরজি করের নির্যাতিতার জন্য বিচার চেয়ে সোমবার লালবাজার অভিযানে গিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারা। মিছিল আটকাতে দুটি ব্যারিকেড করে পুলিশ। সেই ব্যারিকেডের বাইরেই আটকে দেওয়া হয় ছাত্রদের। তবে পিছু না হটে সোমবার রাতভর সেখানেই অবস্থান করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। রাতে পুলিশ কর্তারা তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। ফের মঙ্গলবার বেলা ১২ টা নাগাদ অবস্থানরত ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন অ্যাডিশনাল পুলিশ কমিশনার সন্তোষ পাণ্ডে। রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তাঁদের একটি প্রতিনিধি দল যাতে ওই জায়গা থেকেই লালবাজারে স্মারকলিপি জমা দিয়ে আসে, সেই অনুরোধও জানান। আগের রাতের মতোই সেই অনুরোধ প্রত্যাখান করেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
তাঁরা জানিয়ে দেন, হয় পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে নিজে এসে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে হবে। সেখানেই তাঁকে স্মারকলিপি পড়ে শোনানো হবে এবং তিনি সেটি গ্রহণ করবেন। না হলে ডাক্তারদের মিছিলকে লালবাজারের দিকে বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট ও বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের সংযোগস্থল পর্যন্ত এগোতে দিতে হবে। সেখান থেকে ডাক্তারদের একটি প্রতিনিধিদল লালবাজারে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেবেন। এর কোনওটাই না শোনা হলে পদত্যাগ করতে হবে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে। শেষপর্যন্ত পিছু হটে জুনিয়ার ডাক্তারদের দাবি মেনে লালবাজার পর্যন্ত তাঁদের মিছিল করে যাওয়ার অনুমতি দেয় পুলিশ।
পুলিশ কমিশনারকে স্মারকলিপি দিয়ে বেরিয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা এও জানিয়ে দেন, লালবাজারের সামনে থেকে অবস্থান তুলে নিলেও বিচারের দাবিতে তাঁদের আন্দোলন আরও জোরদার হবে।