গণ ইস্তফা আরজি করের চিকিৎসকদের।
শেষ আপডেট: 8th October 2024 19:31
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আরজি করের পরে মেডিক্যাল কলেজেও গণ ইস্তফা দিতে চলেছেন সিনিয়র চিকিৎসকরা। একই পথে হাঁটতে পারে এসএসকেএমও। এই পরিস্থিতিতে আশঙ্কা ঘনিয়েছে, এত চিকিৎসক একসঙ্গে ইস্তফা দিলে তো ভেঙে পড়তে পারে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
কিন্তু আদতে আজ মঙ্গবারের এই গণ ইস্তফা সত্যিকারের পদত্যাগ নয়, এটি প্রতীকী ইস্তফা। প্রতিবাদের অঙ্গ হিসেবে এই প্রতীকী ইস্তফার আশ্রয় নিয়েছেন ডাক্তারবাবুরা।
এক সিনিয়র চিকিৎসকের কথায়, এই ধরনের প্রতীকী গণ ইস্তফা আগেও হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত পদত্যাগপত্র পরপর জমা দিয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু সরকার সে ইস্তফা গ্রহণ করে না। ফলে তা সত্যিকারের পদত্যাগ নয়। এক্ষেত্রে যদি কারও চিঠি গ্রহণ করে নেয় সরকার, তাহলে তাঁর কেরিয়ার বিপন্ন হতে পারে বলেও জানিয়েছেন ওই চিকিৎসক।
তবে প্রতীকী গণ ইস্তফায় সই করা আরজি করের এই চিকিৎসকরা ইতিমধ্যেই বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, যে সব জুনিয়র ডাক্তার অনশনে বসেছেন তাঁদের স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। তাই বিক্ষোভকারী ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য তাঁরা সরকারের কাছে আবেদনও করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে সরকারের বিরুদ্ধে আপাতত প্রতীকী গণ ইস্তফা দিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তবে সিনিয়র চিকিৎসকদের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে সরকারের উপর চাপ বাড়াল বলেই মনে করছেন অনেকে। কারণ এই প্রতীকী ইস্তফার খাতায় কলমে কোনও ভিত্তি না থাকলেও, যেহেতু তাঁরা ব্যক্তিগতভাবেও ইস্তফা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন, তেমনটা হলে আদতেই চিকিৎসা পরিকাঠামো ভেঙে পড়তে পারে।
যদিও এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্যভবনের তরফে সিনিয়র চিকিৎসকদের এই পদক্ষেপ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
প্রসঙ্গত, গতকালই নবান্ন থেকে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করেন, ডাক্তারদের সুরক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়েই দেখছে সরকার। 'রাত্তিরের সাথী' প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ৪৫ শতাংশের বেশি সিসিটিভির কাজ হয়ে গেছে। এছাড়া ওয়াশরুম সংক্রান্ত ৬৫ শতাংশ কাজ এগিয়ে গেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে ৯০ শতাংশ কাজ হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যসচিব। তিনি এও বলেন, ১৫ অক্টোবর থেকে পাইলট প্রজেক্টের কাজ শুরু হবে। সব ঠিক হলে প্যানিক বটন-এর কাজ শুরু হবে পয়লা নভেম্বর থেকে।
এই প্রেক্ষিতে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার বার্তা দেন মুখ্যসচিব। তিনি এও বলেন, সবাই মিলে হাসপাতালের পরিষেবা আরও ভাল করার কাজ করছেন। আশা করা হচ্ছে দ্রুত পরিস্থিতি বদলাবে।
কিন্তু এদিন অনশন মঞ্চ থেকে আন্দোলনকারীরা সাফ জানান, আরজি করের নির্যাতিতার বিচারের পাশাপাশি কলেজে কলেজে ভর্তিতে দুর্নীতি, থ্রেট কালচার-সব ধরনের বেনিয়ম বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই আন্দোলন চলবে।
এই ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই আরজি কর হাসপাতালে শুরু হয় গণইস্তফা। এর পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং এসএসকেএম হাসপাতাল-- তারাও একইভাবে গণইস্তফার পথে হাঁটতে চলেছে বলে জানা গেছে।
প্রায় দু'মাস হয়ে গেল আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের নৃশংস ধর্ষণ ও খুনের। প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের আঁচ সেই যে জ্বলে উঠেছে, তা এতদিনে স্তিমিত হওয়ার বদলে বরং বারবার তীব্রতর হয়ে উঠেছে। ডাক্তারদের আন্দোলনের গতিও বাড়ছে ধাপে ধাপে। মিছিল, বৈঠক, অবস্থান-- এসবের পরে শুরু হয়েছে আমরণ অনশন।
সেই আবহেই আজ, মঙ্গলবার সকালে আরজি কর হাসপাতাল থেকে একের পর এক ইস্তফা দেন সিনিয়র চিকিৎসকরা। জানা গেছে, বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকেও ইস্তফা পত্র পড়ছে একের পর এক। পুজোর ঠিক মুখে এই ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বড় প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঠিক কীসের দাবিতে এত দিন পরেও চলছে ডাক্তারদের এই আন্দোলন? কেনই বা প্রশাসন বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও এমনকি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও স্বাভাবিক হচ্ছে না কাজের গতি?
জানা যাচ্ছে, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের। দ্বিতীয়বারের কর্মবিরতি অল্প দিনের মধ্যে তুলে নিয়ে তাঁরা এখন অনশন শুরু করেছেন ধর্মতলায়। তাঁদের সমর্থনে একাধিক সিনিয়র ডাক্তারও অনশন মঞ্চে সামিল হয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ করছেন।