শেষ আপডেট: 18th February 2025 23:46
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, যা ছয় মাস আগেও এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার জেরে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। এবার সাফল্যের এক নতুন নজির গড়ল। হাওড়ার শ্যামপুরের বাসিন্দা কার্তিক জানা, যাঁর বাঁ হাতের কব্জি কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, তাঁকে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নতুন জীবন দিলেন আরজি করের চিকিৎসকরা।
গত মঙ্গলবার, হাওড়ার ডোমজুড়ের এক কারখানায় কাজ করার সময় ৫৮ বছর বয়সি কার্তিক জানার হাত যন্ত্রের মধ্যে আটকে যায়, ফলে তার বাঁ হাতের কব্জি সম্পূর্ণ কেটে যায়। সকাল ১০টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটার পর, পরিবারের সদস্যরা তাঁকে নিয়ে একের পর এক হাসপাতাল ঘুরতে থাকেন। এসএসকেএম এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ তাঁকে ভর্তি নিতে অস্বীকার করে। শেষমেশ সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ তাঁকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।
গোল্ডেন আওয়ার অনেক আগেই পেরিয়ে গিয়েছিল, এমনকি কাটা কব্জি সংরক্ষণের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিও সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি। তা সত্ত্বেও, চিকিৎসকরা আশা ছাড়েননি। প্লাস্টিক সার্জারি ও অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেন, একবার চেষ্টা করেই দেখা যাক।
বিভাগীয় প্রধান রূপনারায়ণ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সিনিয়র ও জুনিয়র চিকিৎসকদের একটি দল অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নেয়। ভর্তি প্রক্রিয়া, রক্তপরীক্ষা, ওটি প্রস্তুত করা এবং রোগীকে স্থিতিশীল করার পর রাত সাড়ে ১১টায় শুরু হয় অস্ত্রোপচার। টানা সাত ঘণ্টার অপারেশনের পর চিকিৎসকরা কার্তিক জানার কাটা কব্জি জুড়ে দিতে পেরেছেন।
এই জটিল অস্ত্রোপচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন অ্যানাস্থেসিস্ট অনিকেত মাহাতো, যিনি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে আগের ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন। দ্য ওয়ালের তরফ থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, 'শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছ থেকে যা শিখেছি, সেই মতোই তাঁদের গাইডলাইন মেনেই সবটা করেছি। গত ৯ অগস্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যা আন্দোলন হয়েছিল, তাতে আমাদের দাবি ছিল, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি। আজ আমরা প্রতিকূলতার মধ্যেও লড়াই করে প্রমাণ করেছি যে, মানুষের জন্য সঠিক চিকিৎসা দেওয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।'
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এমন ঘটনার ক্ষেত্রে রোগীর কাটা অঙ্গ সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। কাটা অংশকে প্রথমে নরমাল স্যালাইনে ধুয়ে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরতে হবে, তারপর সেটিকে বরফজলযুক্ত আরেকটি ব্যাগে সংরক্ষণ করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।