যাদবপুরের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য ও তাঁর প্রেসক্রিপশন
শেষ আপডেট: 4th March 2025 14:06
গত শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (Jadavpur University) হেনস্থার শিকার হন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। তাঁকে ঘিরে যখন বিক্ষোভ চলছে, সেই সময় আহত হন মন্ত্রী। জখম হন শিক্ষামন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ (Protest) দেখানো দুই পড়ুয়াও। অভিযোগ, দুই পড়ুয়ার মধ্যে এক জনকে চাপা দিয়েছে মন্ত্রীর গাড়ি। অন্য জনের পায়ের উপর দিয়ে গাড়ির চাকা চলে গিয়েছে।
ঘটনার প্রতিবাদে ডাকা ছাত্র ধর্মঘটে সোমবার দিনভর রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় অশান্তির খবর এসেছে। অন্য দিকে, সন্ধ্যা গড়াতে নতুন করে উত্তেজনা দেখা যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও। প্রশ্ন উঠছে, এত কিছুর মধ্যেও অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত (Bhaskar Gupta) বাড়ি থেকেই বেরোলেন না? জানা গিয়েছে তিনি অসুস্থ! ঠিক কী হয়েছে তাঁর? অসুস্থতা কতটা গুরুতর, খোঁজ নিয়েছে দ্য ওয়াল।
ভাস্কর গুপ্তের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস (Dr. Arindam Biswas) দ্য ওয়াল-কে জানান, "ভাস্করবাবুর একটা বুক ধড়ফড়ের ব্যাপার হচ্ছিল। বোঝাই যায় একটা চিন্তার মধ্যে উনি ছিলেন। ওঁর যে রক্তচাপ বৃদ্ধি পেয়েছে, সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা মজার বিষয় নয়, কারণ এর থেকে চার-পাঁচ বছর আগে ওঁর একটা স্ট্রোক হয়। যাকে চিকিৎসার ভাষায় বলা হয় থ্যালামিক হেমারেজ, অর্থাৎ যে ধমনিগুলো থ্যালামাসে রক্ত সাপ্লাই করছ, সেগুলো ফেটে গিয়ে রক্ত বেরোয় এবং ব্রেইন হেমারেজ হয়। সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসেছেন ভাস্করবাবু। এই অবস্থায় রোগীর আরও খারাপ হতে পারত। তবে তিনি অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু যাদবপুরের এখন যা পরিস্থিতি শুধু সেই ঘটনা নয়, বেশ কয়েকদিন ধরেই তাঁর চিন্তা ভাবনা বেড়েছিল, যে কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি হয়েছে। যেটা ওঁর জন্য ভাল নয়। এটা নয়ন্ত্রন করা সময় সাপেক্ষ। আচমকা কিছু করা যায় না এক্ষেত্রে, না হলে আবারও একটা স্ট্রোক হতে পারে। সেই জন্যে আমি স্পষ্ট করে বলেছি দশ দিনের বিশ্রাম প্রয়োজন তাঁর। ওষুধ দেওয়া হয়েছে। হয় তো রক্ত চাপ স্বাভাবিক থাকবে, কিন্তু পরে আবার তা বেড়ে যেতে পারে। যে কারণে এই বিশ্রামের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দরকারে বুধবার একটা চেকআপ হবে। এবং সবথেকে বড় কথা উত্তেজিত হয়ে পড়েন এমন কোনও ঘটনা ঘটলে তা থেকে ভাস্করবাবুকে বিরত থাকতে হবে।"
চিকিৎসক আরও জনান, "অনেক ব্যাঙ্গ, মন্তব্য আসছে। কোনও নেতা, কোনও ছাত্র নেতা তাঁরা যা পারছেন ওঁর সম্পর্কে বলছেন। আমি ভাস্করবাবুকে বলেছি কানে তুলো দিয়ে থাকুন, আর টিভি দেখতে বারণ করে দিয়েছি। আগে রক্তচাপ স্বাভাবিক হোক, নিজে খানিকটা মনে জোর পান, তারপর স্বাভাবিক কাজে ফিরুন, সেই পরামর্শ দিয়েছি।"
বস্তুত, ব্রাত্য় বসু উপাচার্যের পাশে দাঁড়ালেও সৌগত রায় আবার তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। সোমবার শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "ওঁর কিছু করার ছিল না। উনিও অসহায় ছিলেন। উপাচার্যও তো নিগৃহীত হয়েছেন।" আর তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, "চাপ পড়লেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই উপাচার্যও তাই হয়েছে দেখতে পাচ্ছি। একটা কঠিন পরিস্থিতি যে ফেস করতে পারবে না সেরকম লোককে রাখার কী অর্থ থাকতে পারে? কঠিন দায়িত্ব পড়েছে ওমনি পালাবার চেষ্টা করছেন। আমি চাই উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়া হোক। আমি মনে করি উনি থাকার যোগ্য নন। এরকম দুর্বল লোককে দিয়ে চালাবে কী করে বিশ্ববিদ্য়ালয় প্রশাসন?"