আরজিকরের পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তে পুলিশ।
শেষ আপডেট: 9th August 2024 22:37
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আরজিকরের পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় আগেই পরিবারের তরফে নৃশংসভাবে খুনের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। একই অভিযোগ জানিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষও। পুলিশ সূ্ত্রের খবর, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টেও তেমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে।
এ ব্যাপারে সরকারিভাবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনও প্রকাশ্যে না এলেও পুলিশের একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, আরজি করের ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কী বলা হয়েছে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে? পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, মৃত ছাত্রীর বাম পায়ে, পেটে, যৌনাঙ্গে, দুচোখ, মুখে এবং ডান হাতের আঙুলেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। যা থেকে পুলিশের একাংশের অনুমান, শারীরিক অত্যাচারের পরই খুন করা হয়ে থাকতে পারে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে এও উল্লেখ করা হয়েছে, রাত ৩ টে থেকে ভোর ৬টার মধ্যে খুনের ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। দেহে অন্তত ১০টি দাগের চিহ্ন রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
পুলিশের এক কর্তা বলেন, ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট সামনে এলে শারীরিক নির্যাতনের মামলাও যুক্ত করা হতে পারে।
পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ছাত্রীর কলার বোন ভাঙা রয়েছে। এছাড়াও দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যা থেকে পুলিশের একাংশের অনুমান, হতে পারে গলা টিপে মারা হয়েছে জুনিয়র মহিলা চিকিৎসককে। গলা এত জোরে টেপা হয়েছে যে কলার বোন ভেঙেছে। মৃত্যু আরও সুনিশ্চিত করার জন্য এরপর শ্বাসরোধ করে ওই জুনিয়র মহিলা চিকিৎসককে হত্যা করা হয়েছে বলেও ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে সূত্রের দাবি।
পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে সংশ্লিষ্ট বহুতলে ডিউটিতে কারা ছিলেন তাঁদের প্রত্যেকের নামের তালিকা ইতিমধ্যে সংগ্রহও করা হয়েছে। ওই রাতে ঠিক কী ঘটেছিল, এ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে তাঁদের প্রত্যেককে জেরা করা হবে। জরুরি বিভাগের চারতলায় যে সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয়েছিল ছাত্রীর দেহ সেখানে সিসিটিভি ফুটেজ না থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কীভাবে মৃত্যু, সেখানে আর কে কে ছিল, এই সম্পর্কে নিশ্চিত হতে এদিন রাতে ঘটনাস্থলে পুলিশ কুকুরও নিয়ে আসা হয়।
প্রসঙ্গত, মৃত ছাত্রীর পরিবারের আনা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যে এগারো সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়েছে আরজিকর মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্নাতকোত্তর স্তরে দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া ওই ছাত্রী বৃহস্পতিবারও রাত ২টো পর্যন্ত হাসপাতালের ওয়ার্ডে ডিউটি করেন। পরে কর্মরত আরও দুই জুনিয়র ডাক্তারের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া সেরে পড়াশোনার জন্য সেমিনার হলে চলে যান ওই তরুণী। শুক্রবার সকালে সেমিনার হল থেকেই দেহ উদ্ধার হয় তাঁর। হাসপাতালের একটি সূত্রের দাবি, তরুণীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাঁর পোশাকও ছিল ছেঁড়া।
ডাক্তারি পড়ুয়া ও জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ দাবি করেন, হাসপাতালের ভিতরেই ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ওই ছাত্রীকে। খাস কলকাতা শহরের বুকে মেডিক্যাল কলেজ, অথচ ন্যুনতম নিরাপত্তা নেই সেখানে। ওই তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন তাঁরা।
খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে আসেন মৃত জুনিয়র চিকিৎসকের বাবা। মেধাবী কন্যার এমন মর্মান্তিক পরিণতির খবর পেয়ে নিজেকে সামলাতে পারছেন না আর। বললেন, “বোঝা যাচ্ছে রেপ করে মার্ডার করা হয়েছে ওকে।"