দ্য ওয়াল ব্যুরো: পহেলগামে (Pahalgam) জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছিল বেহালার সমীর গুহর। তাঁর চার দিন পর সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছিল। তাতে দাবি করা হয়েছিল, এলআইসির (LIC) সরশুনা শাখার ডেভেলপমেন্ট অফিসার দেবাশিস বাগ সমীরবাবুর স্ত্রীর হাতে ‘ডেথ ক্লেইমের’ ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার চেক তুলে দিয়েছেন। সেই পোস্টে সমীরবাবুর স্ত্রী শর্বরী গুহর সঙ্গে এলআইসি-র অফিসারের ছবিও দেওয়া হয়েছিল। দ্য ওয়ালে প্রকাশিত হয়েছিল সেই খবর। 

রবিবার শর্বরী গুহ ও তাঁর ভাই সুব্রত ঘোষ সাংবাদিক বৈঠক করে দাবি করেন, ওই পোস্টে যে দাবি করা হয়েছিল তা ঠিক নয়। দেবাশিস বাগ তাঁদের বাড়িতে এসে বেশ কিছু ছবি তুলেছিলেন। তার পর পোস্ট করেছেন। কিন্তু ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা বিমা বাবদ দেওয়ার খবর ভিত্তিহীন। 

সুব্রতবাবু বলেন, “ক্লেইম সেটেলমেন্টের একটা অংশ অর্থাৎ ১০ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এখনও অবধি তাঁরা হাতে পেয়েছেন। বাকি ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা এখনও তাঁরা এলআইসি-র থেকে পাবেন। কিন্তু সংস্থা নিজেদের বিজ্ঞাপন করে যেভাবে বলছে তিন দিনের মধ্যে তারা টাকা মিটিয়ে দিয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যে”।

শর্বরী গুহ আরও জানিয়েছেন, তাঁরা এলআইসি-র বেহালার সরশুনা শাখা থেকে কোনও বিমা করেননি। তাঁরা বিমা করেছিলেন মধ্য কলকাতার একটি শাখায়। কিন্তু কেন, কোন উদ্দেশ্যে এই ধরনের মিথ্যা দাবি করা হল, তা তাঁদের বোধগম্য নয়। তাঁর কথায়, একে তো মিথ্যাচার হয়েছে। তার উপর সেই খবর এমন ভাবে ছড়িয়েছে যে তাঁরা নিরাপত্তার অভাব অনুভব করছেন। 

সমীরবাবুর স্ত্রী ও তাঁর সুব্রত ঘোষ আরও জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তাঁরা এলআইসির স্থানীয় শাখায় গিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে এখনও কোনও সদুত্তর পাননি। তবে এ ব্যাপারে তাঁরা আইনি পদক্ষেপ করবেন। 

এদিন দ্য ওয়ালের তরফে দেবাশিস বাগের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে তাঁকে বারবার ফোন করলেও তিনি সেই ফোন ধরেননি। 
সমীরবাবুকে বিমার ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা দেওয়ার ব্যাপারে সমাজমাধ্যমে দেওয়া পোস্ট, এলআইসি-র কর্মীরাও শেয়ার করেছিলেন। সেই কারণে তা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করেন, দ্য ওয়ালের সাংবাদিক। সমীরবাবুর মৃত্যুর কারণে তাঁর স্ত্রীর বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থার কথা মনে করে তাঁকে এই খবরের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আর তখন যোগাযোগ করা হয়নি। যা একেবারেই ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দ্য ওয়াল ক্ষমাপ্রার্থী। 

পহেলগামে (Pahalgam Attack) পর্যটকদের উপর নৃশংস জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন কলকাতার বেহালার (Behala) সখেরবাজারের বাসিন্দা সমীর গুহ। 

স্ত্রী শর্বরী এদিন সংবাদমাধ্যমকে জানান, "ঘটনার দিন পাহাড়ের নীচেই ছিল মিলিটারি। কিন্তু গুলির আওয়াজ পেয়েও তারা আসেনি। আমরা ছবি তুলছিলাম, তখনই গুলির শব্দ পাই। সমীর এক দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলে  বলে বাঁদর তাড়াতে এমন ওপেন ফায়ার হয়। অনেকক্ষণ এমন চলার পর ওরাই বলে শুয়ে পড়ুন। সমীরকে গুলি করার আগে জঙ্গিরা বলে 'ইয়ে মোদিকা আদমি হ্যায়'। 

সমীরবাবুর স্ত্রীর এখন সরকারের প্রতি আবেদন, তাঁর স্বামীর চাকরি যত দ্রুত সম্ভব যেন তাঁকে দেওয়া হয়। কারণ সমীরই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য। এও দাবি, দোষীরা যেন দ্রুত শাস্তি পায়।