শেষ আপডেট: 17th January 2025 18:48
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ঘড়ি না বলে একে পরশপাথরও বলা যেতে পারে। ফারাক স্রেফ একটাই: পরশপাথর ছুঁলেই সোনা। আর আর এই বিশেষ ঘড়িটির কাঁটা ঘোরার শব্দ কানে গেলেই মুক্তি। জেলমুক্তি, সাজামুক্তি…রাহুমুক্তি!
নিয়োগ দুর্নীতি থেকে রেশন দুর্নীতি—একাধিক মামলায় রাজ্যের একের পর এক মন্ত্রী, ছোট-বড়ো-মেজো গোছের নেতা জেলবন্দি। মাথার ওপর চার্জিশিটের পাহাড়… তলব, জিজ্ঞাসাবাদ, গ্রেফতারির তীব্র জাঁতাকল। আমজনতা যখন অন্তিম রায়ঘোষণার কঠোরতা আগাম অনুমান করে তর্কের তুফান তুলেছে, তখন অভিযুক্তদের অনেকে টপাটপ ছাড়া পাওয়ায় বিতর্ক জটিলতর হতে সময় নেয়নি। একদিকে বামপন্থী দলগুলি সেটিংয়ের তত্ত্বকে আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভাসিয়ে দিয়েছে, অন্যদিকে কংগ্রেস সিবিআই-ইডির অকর্মণ্যতা নিয়ে আওয়াজ জোরালো করেছে।
কিন্তু যদি বলা হয়, এই দুই জল্পনা ছাড়া তৃতীয় একটি কারণের দৌলতে জেল থেকে মুক্ত হয়েছেন মানিক ভট্টাচার্য থেকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, কুন্তল ঘোষ থেকে শৌভিক ভট্টাচার্য এবং সেই কারণ আর কিছুই নয়, একটি অতিসাধারণ ঘড়িমাত্র… তাহলে শাসক-বিরোধী-আমবাঙালি সক্কলে একযোগে ভুরু তুলবেই তুলবে।
কী এই ঘড়ি রহস্য? এবারে খোলসা করা যাক। ঘটনাস্থল প্রেসিডেন্সি জেল। কামদুনি কাণ্ডে মৃত্যুসাজাপ্রাপ্ত আসামি আমিন আলি একটি ঘড়ি কেনেন। সোনালি রঙের ডায়াল। চারপাশে মেরুনরঙা বর্ডার। তিনশো থেকে চারশোর মধ্যে দাম। ২৬ নম্বর সেলের দেয়ালে টাঙিয়ে রেখেছিলেন আমিন। পরে ৩৪ নম্বর সেলে সরানো হয় তাঁকে। সঙ্গে বগলদাবা করে ঘড়িটিকেও নিয়ে যেতে ভোলেননি। এরপর ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে রায় ঘোষণা। বিচারক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আমিন আলিকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেন। আনন্দে আত্মহারা হয়েই সম্ভবত তিনি ঘড়িটিকে নিয়ে যেতে ভুলে যান। রেখে দেন সেলেই।
দিন গড়ায়। নতুন আসামি আসে। পুরোনো আসামি মুক্তি পায়। আর ঘড়িটিও ২৬ নম্বর সেল থেকে খাঁচাছাড়া হয়ে চলে যায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত শৌভিক চক্রবর্তীর জিম্মায়। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন শৌভিক।
আমিনের সেলের ঘড়িটি ছিল নেহাতই ঘড়ি। তার খালাসের সঙ্গে যন্ত্রটির কোনও ‘যোগ’ কেউ আবিষ্কার করেনি। শৌভিকের মুক্তির ঘটনায় একে আর ‘আপতিক’, ‘কাকতালীয়’ বলে সরিয়ে রাখা গেল না। শুরু হল মাহাত্ম্য প্রচার। ঠিক যেন শিবরাম চক্রবর্তীর ‘দেবতার জন্মে’র স্পিন অফ! ছেলে রেহাই পেলে বাবা-ই বা পিছিয়ে থাকেন কেন? মানিক ভট্টাচার্যও অচিরেই হস্তগত করলেন সেই ঘড়ি। এবং কিমাশ্চর্যম্! কয়েক মাস বাদে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জামিন এবং জেলমুক্তি… রাহুমুক্ত মানিকও!
‘ঘড়ি রহস্য’ ছড়িয়ে পড়ল তড়িৎগতিতে! আইনজীবী যতই জাঁদরেল হোক না কেন, ঘড়ি-বাবার আশীর্বাদ ছাড়া মুক্তি মিলবে না কিছুতেই। তাই মানিকের পর ঘড়ি গেল কুন্তল ঘোষের সেলে। গত নভেম্বরে ইডি-সিবিআইয়ের জোড়া মামলা থেকে খালাস পেলেন কুন্তল। অতঃপর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ফলশ্রুতি একই। বুধবার রেশন দুর্নীতি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি।
এবার লিস্টে কে? কে পেতে চলেছে জামিন? উত্তরের জন্য আদালতে ঢুঁ না মেরে খুঁজে দেখতে হবে কার সেলের দেয়ালে ঘুরে চলেছে আমিন আলির ঘড়ির কাঁটা।
আচ্ছা, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কানে কি কেউ খবরটা দিয়েছে?