শেষ আপডেট: 30th September 2024 18:38
পুজোর রং লেগেছে বাংলায়। মা দুর্গার আগমন বার্তায় বাংলা জুড়ে সোঁদা মাটির গন্ধ। কিন্তু সবার ভাগ্যে কি আর সব কিছু উপভোগ করার সামর্থ্য থাকে! এসব নিয়ে ভাবার সময়ও বোধহয় এখন কারও নেই! তবে ‘কারও নেই’ বলাটাও বোধ হয় ভুল হবে। মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগের পড়ুয়াদের দেখলে সব ভাবনা বদলে যাবে। সঙ্গে ওদের পৃষ্ঠপোষক তথা কলেজের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ দাস ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা। ওদের ভাবনাটা আর পাঁচজনের মতো নয়। বছর ঘুরে পুজো এলেই ওরা ভাবে অন্যের কথা, যারা বছরের পর বছর ধরে উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত। যারা চাইলেই উৎসবে ফিরতে পারে না।
এনিয়ে ১৪ বছর, দুর্গাপুজোর আগেই ওরা দল বেঁধে চলে যায় গ্রাম বাংলার ইতিউতি। হাসি ফোটায় ওই শিশুগুলোর মুখে, যাদের পেটে দু'বেলা ভাত নেই, মাথার উপর কংক্রিটের ছাদ নেই। পুজোয় একটা নতুন জামাও হয়নি যাদের। ১৪তম বর্ষে ওদের গন্তব্য ছিল আলিপুরদুয়ারের উত্তরে ভুটান সীমান্তে থাকা ছোট্ট গ্রাম জলদাপাড়া। আধুনিকতার লেশমাত্র নেই সেই গ্রামে। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে নিচের চা বাগান কী অপূর্ব লাগে ! কিন্তু দুঃখবিলাসী ছেলেমেয়েদের কান্না শুনতে পায় আর ক’জন! পুজো তো ওদেরও। এটাই ভেবেছে সাংবাদিকতার পাঠ নিতে আসা পড়ুয়ারা।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর, শনিবার পুজো পরিক্রমা সেরেছে ওই ছাত্রছাত্রীরা। এবারের পরিক্রমায় নিজে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন ওই এলাকার বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল। কলেজ পড়ুয়াদের এমন মহতী কাজকে বাহবা দিয়েছেন তিনিও। পড়ুয়ারা জামা-কাপড় তুলে দিয়েছে নীলিমা-আশা-লুইসের মতো ৩০০ শিশুর হাতে। পুজোর শাড়ি পেয়েছেন আরও ১০০ মহিলা। সঙ্গে সকলকে পাত পেড়ে খাইয়েছে মাংস-ভাত। শিশুগুলোর মুখে সে যে কী আনন্দ!
সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীরা এই পরিক্রমার আয়োজন করে মিলেমিশে। আজ থেকে ১৩ বছর আগে এই বিভাগের মুখ্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ দাসের উদ্যোগে শুরু হয় এই পরিক্রমা। এই পরম্পরাকে বছরের পর বছর এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কলেজের সাংবাদিকতা বিভাগের পড়ুয়ারা। কোনও স্পনসর নয়, নিজেরাই নিজেদের পকেটমানি বাঁচিয়ে, পুজোয় একটা জামা কম কিনে টাকা তোলে পড়ুয়ারা।
রাত জেগে কলকাতার বিভিন্ন মার্কেটে জামাকাপড় কেনে। এমন উদ্যোগ থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেননি কলেজের অন্যান্য বিভাগের অধ্যাপকরাও। তাঁরাও যোগ দিয়েছেন ওই দুঃস্থ মানুষগুলোর মুখে এক চিলতে হাসি দেখার বাহানায়।
তবে শুধু পুজোর একদিন নয়, সারা বছরই শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে পাশে থাকবেন পড়ুয়ারা। সঙ্গ দেবেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। উত্তরবঙ্গের পর্যটন মানচিত্রে কীভাবে এই গ্রামকে আনা যায়, সেনিয়ে এলাকার জনপ্রতিনিধি, বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে পড়ুয়ারা এবং অধ্যাপকরা। লাভ-ক্ষতির দাঁড়িপাল্লায় সব কাজকে পরখ করা যায় না। কিছু উদ্যোগে থাকে শুধুই মনের টান। হোক না পুজো একটু অন্যরকম। মনের রঙে রঙিন হয়ে উঠুক পুজো পরিক্রমাও।